অনলাইন ডেস্ক : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে চলমান সংঘাত ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে সারা বিশ্বের মনোযোগ সরিয়ে নিয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এমন অভিযোগই করেছেন।

তার দাবি, ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে বৈশ্বিক মনোযোগ সরিয়ে নেওয়াটাও ছিল রাশিয়ার লক্ষ্যগুলোর মধ্যে একটি। রোববার (৫ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ ইউক্রেনের সংঘাত থেকে ‘মনোযোগ কেড়ে নিচ্ছে’ বলে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সর্বাত্মক আগ্রাসন শুরু করা রাশিয়ারও এটি ‘একটি লক্ষ্য’ ছিল।

বিবিসি বলছে, ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ অচলাবস্থায় পৌঁছে গেছে বলে দেশটির শীর্ষ সামরিক জেনারেলের সাম্প্রতিক মূল্যায়ন সত্ত্বেও বিষয়টি অস্বীকার করেছেন জেলেনস্কি। রাশিয়ার বিরুদ্ধে দক্ষিণাঞ্চলে ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ এখন পর্যন্ত খুব সামান্যই অগ্রগতি অর্জন করেছে।

সবকিছু মিলিয়ে কিয়েভের পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যে যুদ্ধ ক্লান্তির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমনকি কিছু মিত্র দেশ ইউক্রেনকে উন্নত অস্ত্র এবং তহবিল প্রদান অব্যাহত রাখার বিষয়ে ক্রমবর্ধমান অনিচ্ছা প্রকাশ করছে বলে ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছে।

এদিকে শনিবার ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ নিশ্চিত করেছেন, দেশটির ১২৮তম মাউন্টেন অ্যাসল্ট ব্রিগেডের ইউক্রেনীয় সৈন্যরা নিহত হয়েছেন। এই ঘটনাকে তিনি ‘ট্র্যাজেডি’ হিসাবে উল্লেখ করে সম্পূর্ণ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

অবশ্য গত শুক্রবার দক্ষিণ জাপোরিঝিয়া অঞ্চলে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কতজন সৈন্য মারা গেছে তা বলেনি ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। ইউক্রেনীয় মিডিয়া এবং রাশিয়ান সামরিক ব্লগারদের কিছু প্রতিবেদনে এর আগে বলা হয়েছিল, যুদ্ধের সম্মুখ লাইনের কাছাকাছি অবস্থিত একটি গ্রামে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে রুশ হামলায় ২০ জনেরও বেশি ইউক্রেনীয় সেনা নিহত হয়েছেন।

ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী আরও বলেছে, শনিবার তারা রুশ-অধিকৃত ক্রিমিয়াতে একটি জাহাজ নির্মাণ কারখানার ‘সমুদ্র এবং বন্দর অবকাঠামোতে’ সফলভাবে হামলা চালিয়েছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পরে জানায়, পূর্ব ক্রিমিয়ার কের্চ শহরে প্ল্যান্টে নিক্ষেপ করা ১৫টি ইউক্রেনীয় ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে ১৩টি গুলি করে ধ্বংস করা হয়। তবে হামলায় একটি রাশিয়ান জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে সফররত ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েনের সঙ্গে কিয়েভে শনিবারের ব্রিফিংয়ে বক্তৃতাকালে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন: ‘এটা স্পষ্ট যে, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান যুদ্ধ ইউক্রেন থেকে (সারা বিশ্বের) মনোযোগ কেড়ে নিচ্ছে’।

তিনি বলেন, ইউক্রেনের প্রতি সবার মনোযোগটা ‘দুর্বল’ হোক, এটাই চেয়েছিল রাশিয়া। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘সবকিছুই আমাদের ক্ষমতায়’ আছে।

ব্রিফিংয়ে বক্তৃতাকালে জেলেনস্কিকে ইউক্রেনের প্রধান সামরিক কমান্ডার ভ্যালেরি জালুঝনির সাম্প্রতিক একটি মূল্যায়ন সম্পর্কেও মন্তব্য করতে বলা হয়। সেখানে বলা হয়, যুদ্ধ এখন একটি ‘স্থবির’ বা স্থির পর্যায়ে চলে যাচ্ছে এবং এর ফলে মস্কো ‘তার সামরিক শক্তি পুনর্গঠনের সুযোগ পাবে’।

তবে জেলেনস্কি বলেন, ‘সবাই ক্লান্ত হয়ে পড়ছে এবং বিভিন্ন মতামত রয়েছে। কিন্তু এটি কোনও অবস্থাতেই অচলাবস্থা নয়।

তিনি স্বীকার করেছেন, রাশিয়া এখনও ‘আকাশ নিয়ন্ত্রণ করছে’ এবং চলমান পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য ইউক্রেনের জরুরিভাবে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ও উন্নত বিমান-বিধ্বংসী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রয়োজন।

এছাড়া রাশিয়ার সাথে আলোচনায় বসার বিষয়ে বিবেচনা করার জন্য ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে থাকার বিষয়ে প্রকাশিত মিডিয়া রিপোর্টও প্রত্যাখ্যান করেছেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি।

তিনি বলেন, ‘ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র এবং আমাদের অংশীদারদের মধ্যে অন্য কেউই এখনও রাশিয়ার সাথে আলোচনায় বসতে এবং তাদেরকে কিছু ছেড়ে দেওয়ার জন্য আমাদের চাপ দিচ্ছে না। এমন কোনও কিছুই ঘটবে না।’