অনলাইন ডেস্ক : চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং মনে করেন, বৈশ্বিক দুই পরাশক্তি চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের উচিত পরস্পরের প্রতি বৈরীভাব পোষন না করে মিত্রতা ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পারস্পরিক অংশীদারিত্ব বাড়ানো।

শুক্রবার বেইজিংয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের সঙ্গে এক বৈঠকে নিজের এই মনোভাব ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘আমি বেইজিং-ওয়াশিংটনের মধ্যকার সম্পর্কে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং বিভিন্ন ইস্যুতে সমপরিমাণ অংশীদারিত্ব দেখতে চাই। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যে দিয়েই এই তিনটি বিষয় অর্জন করা সম্ভব।’

এ প্রসঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, বেইজিং সবসময়ই যুক্তরাষ্ট্রের উন্নতি ও সাফল্যে খুশি হয় এবং আশা করে, একটি স্থিতিশীল, উন্নত এবং অগ্রবর্তী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের খাতিরে যুক্তরাষ্ট্রও এগিয়ে আসবে।

তবে এক্ষেত্রে বড় কিছু বাধা রয়েছে— তা স্বীকার করেছেন জিনপিং এবং ব্লিনকেন উভয়ই; আর সেই বড় বাধাগুলো হলো রাশিয়ার প্রতিরক্ষা শিল্পকে চীনের সহায়তা প্রদান, তাইওয়ান এবং দক্ষিণ চীন সাগর। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, শুক্রবার চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার বৈঠকে এই তিন ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে।

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে শুরু হওয়া রুশ বাহিনীর বিশেষ সামরিক অভিযানে চীন অস্ত্র-গোলাবারুদ সহায়তা দিচ্ছে বলে অভিযোগ জানিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। এ অভিযোগ সত্য নয়, আবার পুরোপুরি মিথ্যেও নয়। কারণ, চীন এ পর্যন্ত রাশিয়ায় সরাসরি অস্ত্র না পাঠালেও মেশিনারি ও অস্ত্র-গোলাবারুদ তৈরির কাঁচামাল পাঠিয়েছে। চলমান এই যুদ্ধে রাশিয়ার অস্ত্রভাণ্ডারে যে টান পড়ছে না, তার একটি বড় কারণ চীনের পাঠানো মেশিনারি-কাঁচামাল।

জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে এ ইস্যুটি তোলেন ব্লিনকেন। জবাবে জিনপিং বলেন, এটি রাশিয়া ও চীনের মধ্যকার স্বাভাবিক বাণিজ্যিক লেনদেন যা কখনও বন্ধ হবে না। পাশাপাশি চীনের প্রেসিডেন্ট স্মরণ করিয়ে দেন যে যুদ্ধ এতদিন পর্যন্ত জারি থাকার প্রধান কারণ ইউক্রেনকে পশ্চিমা বিশ্বের বিরামহীন অস্ত্র সহায়তা প্রদান করা।

শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের আগে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র সঙ্গে বৈঠক করেছেন ব্লিনকেন। সেখানে অবশ্য দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে সতর্কবার্তা বিনিময় হয়েছে। তাইওয়ান ও দক্ষিণ চীন সাগর প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্কবার্তা দিয়ে ওয়াং ই বলেছেন, কিছু ইস্যুতে চীনের ‘রেড লাইন’ রয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র যদি সেই লাইন অতিক্রম করে, তাহলে তা ‘নেতিবাচক পরিণতি’ বয়ে আনবে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের সার্বভৌমত্ব এবং বৈধ অধিকারকে অযৌক্তিকভাবে দমনের চেষ্টা চলছে। এতে আমাদের জাতীয় স্বার্থ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে।’

জবাবে ব্লিনকেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সবসময়ই তাইওয়ান ইস্যুতে উত্তেজনা প্রশমনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে এবং দক্ষিণ চীন সাগর ইস্যুতে ফিলিপাইন ও অন্যান্য মিত্র দেশগুলোকে প্রতিরক্ষা সহায়তা দিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

সূত্র : আলজাজিরা