অনলাইন ডেস্ক : পঞ্চম দিনের মতো বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। গাজার রাস্তায় মানুষ এদিক-সেদিক পালানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু কোথায় যাবে তারা কেউ জানে না। কারণ পালানোর জায়গা নেই, গাজাজুড়ে চলছে ইসরায়েলি বিমান হামলা।

এদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলছে, এক হাজার হামাস যোদ্ধা নিহত হয়েছে যুদ্ধে। গত শনিবার ইসরায়েলে অনুপ্রবেশকারী অন্তত এক হাজার হামাস যোদ্ধার মৃতদেহ গণনা করেছে তারা। দেশটির প্রধান সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি সাংবাদিকদের এ কথা জানান। ইসরায়েলের হেয়োম পত্রিকার খবরে এমনটাই বলা হয়েছে।

ড্যানিয়েল হাগারি আরো বলেছেন, ‘এর মাধ্যমেই আক্রমণের তীব্রতা বোঝা যায়।’

এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৯৫০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ইসরায়েলি বোমা হামলার কারণে মিসরের রাফাহ ক্রসিং বন্ধ হয়ে গেছে। এটাই অবরুদ্ধ গাজা থেকে মানুষের বেরিয়ে আসার একমাত্র পথ।

এ ছাড়া ইসরায়েলও গাজার সঙ্গে তাদের সীমানা বন্ধ করে দিয়েছে।
ইসরায়েলি বিমান হামলায় ধ্বংস হয়েছে মসজিদ, স্কুল, হাসপাতাল। ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি পরিচালিত অন্তত দুটি হাসপাতাল এবং দুটি কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন ফিলিস্তিনিদের সাহায্যকারী জাতিসংঘের পরিচালিত দুটি স্কুল আছে। ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের অংশ হিসেবে ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান এবং কামানগুলো কয়েক বছর ধরে ঘন ঘন গাজায় লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে।

কিন্তু এই নতুন যুদ্ধের প্রথম দিন থেকেই নির্বিচারে গাজার সব স্থাপনা ঘিরে ইসরায়েলিরা হামলা চালাচ্ছে বলে বাসিন্দারা এবং স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলেছে।
শনিবারের আক্রমণের পর ইসরায়েল প্রতিশোধ নিতে এই হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। গত শনিবার শত শত ফিলিস্তিনি বন্দুকধারী গাজার সঙ্গে ইসরায়েলের সীমান্ত পেরিয়ে যায় এবং এক হাজারের বেশি লোককে হত্যা করে। শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিসহ প্রায় ১৫০ জনকে জিম্মি করে তারা। গত সোমবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী গাজাকে সম্পূর্ণ অবরোধ ঘোষণা করে বলেছেন, ‘কোনো বিদ্যুৎ না, খাবার না, পানি না, জ্বালানি না।’

হামলা চালানোর পরেই ইসরায়েলের কর্তৃপক্ষ গাজায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি, খাবার, পানিসহ সব ধরনের সেবা বন্ধে ‘সম্পূর্ণ অবরোধ’ দেওয়ার পর সংকটে গাজার সাধারণ মানুষ। ফলে গাজা উপত্যকা একটি বড় মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। গাজায় প্রায় ২৩ লাখ মানুষ বসবাস করে, যাদের ৮০ শতাংশ সাহায্যের ওপর নির্ভর করে চলে। অনেকেই বর্তমানে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সেবা ছাড়াই আছেন। ইতিমধ্যে হয়তো প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পানি সরবরাহও বন্ধ হয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষ সতর্ক করেছে, গাজা উপত্যকার জ্বালানি শেষ হয়ে যাবে।

কয়েক দিনের ইসরায়েলি হামলায় গাজার এলাকাগুলো এখন আর চেনা যায় না। কয়েক দিন আগেও এমনটা ছিল না। আল-রিমালের উচ্চতর গাজা শহর থেকে হাজার হাজার মানুষ পালিয়েছে। কিন্তু কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। গাজায় নেই কোনো বোমা শেল্টার। যারা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয়ের জন্য গিয়েছিল, তারাও পালিয়ে গেছে।

গাজার ৩৮ বছর বয়সী এক নারী মঙ্গলবার হাসপাতালের মর্গে গিয়েছিলেন তিনি পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে তার ভাইঝি এবং তার দুটি অল্প বয়স্ক মেয়ের লাশ নেওয়ার জন্য। অপেক্ষা করছিলেন কখন তাদের কবর দেওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘কোনো সতর্কতা ছিল না। থাকলে তারা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেত।’

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিচার্ড হেচট বলেছেন, ইসরায়েল গাজাবাসীকে এমন এলাকা থেকে সরে যেতে বলছে, যেগুলো লক্ষ্যবস্তু হবে এবং তাদের মিসরের সঙ্গে রাফাহ সীমান্ত দিয়ে চলে যেতে বলা হয়েছিল। কিন্তু এর কয়েক ঘণ্টা পর মঙ্গলবার ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ক্রসিংটি বন্ধ করে দেয়।

গাজার ২৫ বছর বয়সী অন্য এক নারী বলেন, ‘আমাদের পাশে কাউকে দাঁড়ানোর জন্য বলছি। অন্তত হামলার আগে আমাদের সতর্ক করুক। এরপর হামলা করতে বলছি। যাতে আমরা নিরাপদে বের হতে পারি।’ ইসরায়েলি হামলা পুরো গাজাজুড়ে চলছে। তিনি বলেন, ‘ভয়ে শিশুরা ঘুমাতে পারে না। আমরা তাদের শান্ত করার চেষ্টা করছি। আমরা শিশুদের বলছি, ভয় পাবে না, ঈশ্বর আমাদের সঙ্গে আছেন।’

সূত্র : নিউ ইয়র্ক টাইমস