হিমাদ্রী রয়

একুশের ভোর এলে

একুশের ভোর এলে
আমি নতজানু হই মাটির কাছে
কান পেতে শুনি
নগ্ন পায়ের পদধ্বনি
কৃষ্ণচূড়া শোক ছড়ায়
রাধা চূড়ার পাশে।
একুশের ভোর এলে
অপাপবিদ্ধ আকাশটাকে দেখি
স্নিগ্ধ মায়াময় রঙধনুতে রাঙা
কোকিলের শোক সভায়
সুর জেগে ওঠে
ঢাকা মেডিক্যাল আমতলায়
করুণ রাগিনী মাখা।
একুশের ভোর এলে
মাকে মনে পড়ে
মা কোথায় শূন্য ভিটে হৃদয়েতে খাঁখাঁ
ঘুমের মাসি স্মৃতির হাটে
মায়ের ভাষায় ছড়া কাটে
‘চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা’।
একুশের ভোর এলে
আমরা আবার জেগে উঠি
জেগে উঠি আমাদের আবেগে
জেগে উঠি আমাদের বিবেকে
বাঙালিই পেরেছে বাঙালিই পারে
বন্দুকের সামনে বুক পেতে
মুখের কথা এনেছে কেড়ে।
বছরের ওই একটি দিন
একুশের ভোর এলে
বহু দেশ দেখে বহু দেশ ঘুরে
সকল আবেগ আশ্রয় নেয়
বর্ণমালার কোলে
বাংলা আর বাঙালির
অহংকার আকাশ ছুঁয়
আর হৃদয় থাকে ছুঁয়ে
আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো
স্মৃতির মিনারে পলাশ রাঙা ফুলে।

স্মৃতির মিনার

এই প্রবাসে মুগ্ধ আবেশে আমি দেখি তোমায়
গৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াও
তোমার কোলে মাথা রাখতেই আমি আকাশ ছুঁই
আমি বাংলায় কথা কই আমায় কোলে তুলে নাও।

তোমার আশ্রয়ে পাই মা’য়ের সুশীতল স্পর্শ
ঘুম পাড়ানিয়া মাসি-পিসি চুমু খায় ঘুমের ঠোঁটে
ভয় পেয়ে জেগে দেখি অন্ধকারের মুখ কুত্সিত কালো
মা তুমি চোখ মেলতেই সব উজালা হয়ে ওঠে।

বড় আবিষ্ট হয়ে যখন দেখি তোমায়
মন ছুটে যায় মেঠো সুরের পথটি ধরে
রাত্রি দ্বিপ্রহরে তাহাজ্জুদের নামাজ কল্যাণ কামনায়
ভোরের কীর্তন ‘ভজ গৌরাঙ্গ লহ গৌরাঙ্গের নামরে’।

নতজানু হয়ে আমি স্পর্শ করি তোমার বেদী
তুমি ফেরাও আমায় বর্ণমালার শৈশবে
‘সুখি যেন না হই অন্য কারো দুঃখে’
ফিরি বাউলের গানে ঠাকুমার গল্পে যত দৈত্য দেও
আমার অহংকার ডুবিয়ে এসেছি কালীদহে
তুমি আমার শেষ তীর্থ, প্রেমের ঢেউয়ে ডুবাও।