অনলাইন ডেস্ক : গাজায় তীব্র খাদ্য সংকট ও ইসরায়েলের ত্রাণ প্রবেশে অবরোধের কারণে সেখানে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। উপত্যকাজুড়ে প্রতিদিনই ক্ষুধাজনিত কারণে মারা যাচ্ছে শিশুসহ নিরীহ ফিলিস্তিনি। এ দুর্ভিক্ষ থেকে বাদ যাচ্ছে না জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মীরাও।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ফিলিস্তিনে নিযুক্ত জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) গাজায় নিয়োজিত তাদের কর্মী দালিয়ার একটি বার্তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করেছে।
বার্তায় দালিয়া বলেছেন, ‘গাজায় ক্ষুধা এখন আর ছায়া নয়; এটি আমাদের স্থায়ী সঙ্গী। প্রত্যেক দিন সকালেই আমি একই প্রশ্ন নিয়ে জেগে উঠি : আজ আমার সন্তানদের খাওয়ানোর জন্য রুটি খুঁজে পাবো কি?’
তিনি বলেন, ‘এক টুকরো রুটি এখন একটি রত্নভাণ্ডারে পরিণত হয়েছে। এক চামচ ভাতই হয়ে ওঠে হাসির কারণ। আমার সন্তানেরা খাবার চায়, কিন্তু তার পরের নীরবতা কোনো বোমার চেয়েও বেশি গর্জে ওঠে।’
এরআগে বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) এক এক্স বার্তায় ইউএনআরডব্লিউএ প্রধান ফিলিপ লাজ্জারিনি বলেন, ‘গাজা শহরের প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন এখন অপুষ্টিতে ভুগছে। তাদের বেশিরভাগই জরুরি চিকিৎসা না পেলে মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, এই গভীরতর সংকট সকলের ওপরই প্রভাব ফেলছে। ইউএনআরডব্লিউএর ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যকর্মীরাও দিনে মাত্র একটি খাবার (ডাল) খেয়ে বেঁচে আছেন। ক্ষুধার কারণে অনেক কর্মী অজ্ঞান হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে।
লাজ্জারিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র শিশুরাই নয় তাদের বাবা-মায়েরাও খুব ক্ষুধার্ত, যা তাদের সন্তাদের যত্ন নেওয়া ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাড়িয়েছে।
তিনি অবিলম্বে মানবিক সংস্থাগুলোকে গাজায় নিরবচ্ছিন্নভাকে তাদের কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দেওয়ার জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানান।
এদিকে গাজা উপত্যকাজুড়ে ব্যাপক মাত্রায় দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়েছে বলে দাবি করেছে ১০০টিরও বেশি এনজিও ও মানবাধিকার গোষ্ঠী। তারা অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল গাজার ভেতরে খাদ্য বিতরণ করতে দিচ্ছে না। এতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রুপ নিতে পারে সতর্ক করে গাজায় অবিলম্বে ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং ত্রাণ প্রবেশে ইসরায়েলি বিধিনিষেধ প্রত্যাহারে পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাগুলো।
সংস্থাগুলো বলেছে, গাজা সীমান্তের বাইরে কয়েক হাজার টন খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, চিকিৎসা সরবরাহ এবং অন্যান্য জিনিসপত্র অক্ষত অবস্থায় পড়ে আছে। তবে ইসরায়েল কর্তৃক সংস্থাগুলোকে প্রবেশাধিকার বা ত্রাণ সরবরাহ করতে দিচ্ছে না। এ অবস্থায় ত্রাণগুলো নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গাজা উপত্যকার হাসপাতালগুলোতে গত ২৪ ঘণ্টায় দুর্ভিক্ষ ও অপুষ্টির কারণে নতুন করে ৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পর ক্ষুধাজনিত কারণে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ১৫৪ জনে দাঁড়িয়েছে, যার মধ্যে ৮৯ জনই শিশু।
সূত্র: আলজাজিরা
