ডাস্টবিনের ভাঙা দেয়াল
(ডাস্টবিনে ফেলে রাখা শিশুকে উৎসর্গ করে)

কার ঔরসে পয়দা শিশুর মুচকি হাসি শ্যাওলাতে
কোথায় থেকে ভেসে এসে ওঠলো যে কার তল্লাটে
বেগ-আবেগের প্রণয়লীলা উদয়-অস্ত কার ইশারাতে
ওঠলো যে সুর বেসুরে আজ বাজল যে কার বেহালাতে
জাত বেজাতের দ্বন্দ ভুলে মিষ্টি মধুর ছন্দ তুলে
গা ভাসিয়ে দিলে তুমি বৃষ্টিভেজা কালরাতে।

আবেগের সাথে বিবেকের কভু হয় না কোনো সন্ধি
মানবতার শিকল পায়ে ইজ্জত ক্যান আজ বন্দি।

সন্তান আজ কার কোলে হায়, কার নয়নে নয়ন
বিচারপ্রার্থীর যাপিত জীবন হুমকিতে ক্যান চয়ন।

ডাস্টবিনের ওই খুপড়ি ঘরে খিলখিলিয়ে কে হাসে
হাসি মুখে ফাঁসিতে ঝুলাও একটুখানি ভালোবেসে।

বাবা-মায়ের আদর নেই, জীবনটাও হুমকিতে
দীর্ঘশ্বাস দীর্ঘ করে পারবে না আর দম নিতে
বিশ্ব বিবেক দাফন করে হীরা পান্না চুন্নিতে।

আকাশ বাতাস ভারী ক্যান মরণ বীণ কে বাজায়
কার পাপের তাপে-অভিশাপে কে শাস্তি পায়।

কর্মযজ্ঞে ধর্ম ফেলে মর্ম মূলে অন্ধজনে আলো পায়
অর্থ-অনর্থ ব্যয় ভুলে হিসেবের খাতা রাখ তুলে
অন্যের বাসর সাজিয়ে যায়, তাতেই সে মজা পায়।

কেউ যায় শখে বসে কেউ আবার উল্লাসে
কেউ খেয়ে মজা পায়, কারো জিবে জল আসে
কারো জীবন যায় যায়, কেহ দেখে হেসে বেড়ায়
কেউ মজে উচ্ছ্বাসে, কেউ চোখের জলে ভাসে।

মানবতার সেবার নামে ওঠে তুফান দিন শেষে
ঘুনে ধরা সমাজ যে আজ পঁচন ধরা নির্যাসে।

কান্নায় দেখ পান্না ঝরে খোদার আরস কাঁপল যে
বাপ-দাদার ভিটে-মাটি কোথায় ফেলে আসল যে।

দোহায় লাগে জীবনটাকে মোড়কে দাও বেঁধে
কার এতো হিম্মত যে আজ আমার জন্য কাঁদে–
জীবন আমার হুমকিতে আজ ভালোবাসার ফাঁদে।

বাবা-মায়ের আদর-কদর কে দিবে চুম কপালে
ধিক্কার জানাই ভিক্ষার ঝুলি, ভালোবাসা রুমালে
শান্তি চাই ভ্রান্তি ভুলে ডাস্টবিনের ওই দেওয়ালে
কারো জীবন যাচ্ছে চলে কারো আবার হেয়ালে।

আমার দেশ

এক যে আছে এমন দেশ
রূপের নেইতো শেষ
লতায় পাতায় সবুজে ঘেরা
শ্যামল সেই আবেশ।

রাতের বেলায় জোনাক জ্বলে
দিনে সুর্যের আলো
রাখাল ছেলের বাঁশির সুরে
মনটা করে ভালো।

তৃষ্ণা মেটায় ডাবের পানি
বৃষ্টিতে যায় খরা
অসীম মজা দিনের বেলায়
দল বেঁধে মাছ ধরা।

গায়ের ঘাম ঝরায় কৃষক
ফসল ফলায় মাঠে
দেশ করে সমৃদ্ধি ভাই
সোনালি আঁশ পাটে।

শীতের শোভা কুয়াশা যে
বরষার শোভা বৃষ্টি
বাগানের শোভা গাছগাছালি
জুড়ায় সবার দৃষ্টি।

পুকুর ডোবায় শালুক ফোটে
সুর্য ডুবে নদীর তীরে
সাঁঝের বেলা পাখিরা সব
ফিরে যায় আপন নীড়ে।

পতিতা

নেতারা সব পতিতা, আর পতিতারা শাসক
জনগণ সব কেনা দাস, শীতের লেপ তোষক।

ভদ্রতা নম্রতা ছাড়ো, আমজনতার গুষ্ঠি মারো!
আরো চাই আমি আরো, হোক নিজের পোয়াবারো।

অতি দরদি তুমি অধিপতি, মান্যবর সমাজপতি
কতো কী হয়ে যায় তোমার সামান্য ইশারায়,
তোমার পথ মসৃণ, কে রুখবে তোমায়, সমাজের
চমৎকার সব আবাল, কী করবে সমাজ বাবা দামাল?

ক্ষুধার জ্বালায় তালমাটাল, তাকিয়ে দ্যাখো চক্ষু লাল
চুলোয় হয় না রান্না, বাবুদের হাহাকার নিষ্প্রাণ কান্না
অথচ, অথচ গুদাম ভর্তি মালামাল, খুলতে নিজের
কপাল সিন্ডিকেট দাম বাড়াতেই ওরা বেসামাল।

ঝাড়ুর আঘাতে যাবে ভ‚ত, পেলাম নাতো আজো নিখুঁত
কোনো মায়ের পুত, কোথায় পাবে শান্তির দূত
জ্বালাও পোড়াও চলছে হরদম, নিরাপদ নয় কোনো কদম
মায়া-মমতার কপালে হাত, বেশ্যার দালালের বাজিমাত।

প্রতিবাদের হাত দাও গুঁড়িয়ে, পায়ের নিচে পিষিয়ে থেতলিয়ে
স্তব্ধ করো সব কণ্ঠ, আছে যতো অর্বাচীন ভণ্ড
মাথা হোক সব নত অবনত, সততা, বদান্যতা আজ মৃত।

পুঁজিবাদের দিয়াশলাই, দুনিয়াটা আজ তড়পায় আর তড়পায়-
মানবতার মাথা মুড়িয়ে, দাঁত কেলিয়ে হাসে অভিশাপের
মশাল জ্বালিয়ে, শান্তির পতাকায়, হায়! শান্তির পতাকায়!
লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে ঘোড়া দৌড়ায়, ওরা ঘোড়া দৌড়ায়।

বসন্তের কোকিল

বসন্তের কোকিলরা যখন দল বেঁধে
ঝাঁপিয়ে পড়ে নকল অমৃত সুধায়,
তখন দেহে প্রাণ আছে কী নেই
সেটা কে খবর রাখে।

গামলার তলানিতে জমে থাকা মধুর
অন্বেষণে, ঝাঁকে ঝাঁকে পিপীলিকারা
পা ঢুকিয়ে চেটে খাওয়ার প্রাণান্ত
চেষ্টায় মগ্ন, তখন জীবনের সোপান
খুঁজে সময় নষ্ট করা বোকামী ছাড়া
আর কিছু নয়!