শাহনুর চৌধুরী : কানাডা জুড়ে করোনা বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার করা হয়েছে। পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসায় জনস্বাস্থ্যের জন্য এসব বিধি-নিষেধ তুলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর ফলে ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের টিকার হার নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভিভাবকদের দ্বিধা-দ্বন্দ্বের কারণে এমনিতেই অনেক শিশুকে টিকা দেওয়া যায়নি। এখন করোনা বিধি-নিষেধ তুলে নেওয়ায় শিশুদের টিকা দেয়ার হার অনেক কমে যাবে।
ব্রিটিশ কলম্বিয়ার প্রাদেশিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. বনি হেনরি বলেছেন, তিনি বিষয়টি নিয়ে তার সহকর্মী ও দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলেছেন। তারা সবাই শিশুদের কম টিকার হারকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে উল্লেখ করেছেন। কানাডা পাবলিক হেলথ এজেন্সির সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী দেখা যায় যে, আলবার্টায় ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে কমপক্ষে ১ ডোজ টিকা নেওয়া হয়েছে এমন শিশুর সংখ্যা ৫০ শতাংশের কম। অন্য চারটি প্রধান প্রদেশে এই সংখ্যা ৬০ শতাংশের কম। সমগ্র কানাডায় শিশুদের টিকা নেয়ার গড় ৫৬.৫ শতাংশ। অন্যদিকে কানাডায় ১২ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের করোনা টিকা নেয়ার হার ৮০% এবং ১৯ ঊর্ধ বয়সীদের মধ্যে এই হার ৯০%।
শিশু ও বয়স্কদের টিকার এই বৈষম্যকে উদ্বেগজনক আখ্যা দিয়ে ব্রিটিশ কলম্বিয়ার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. লরা সাইভ বলেন, ‘আমরা যেমনটা দেখতে চেয়েছিলাম, শিশুদের টিকার ক্ষেত্রে তেমনটা দেখতে পাচ্ছিনা। টিকার নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা সম্পর্কে আমাদের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ থাকা সত্তে¡ও শিশুদের এর বাইরে রাখা মোটেও যুক্তিযুক্ত নয়।’ কানাডার কোন কোন এলাকায় শিশুদের টিকার হার এক-তৃতীয়াংশ (৩৩%), আবার অনেক এলাকায় অর্ধেকের কম। এর জন্য অনেকে অভিভাবকদের অনীহাকে দায়ী করলেও পারিপার্শ্বিক অন্য কিছু বিষয়ও রয়েছে। ব্রিটিশ কলম্বিয়ার এলিসন বেন্টলি তার ৯ বছর বয়সী ছেলেকে টিকা নিতে দেননি। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, তার ১৪ বছর বয়সী মেয়েকে টিকা দেওয়ার পর কিছু জটিলতা দেখা দিয়েছিল। তাই তিনি ছেলেকে টিকা কেন্দ্র নিতে ভরসা পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, মেয়ের ক্ষেত্রে যেসব সমস্যা হয়েছে সেগুলো নিয়ে ভাবার জন্য আমাদের কিছু সময় নেয়ার প্রয়োজন ছিল। সেই সময় নিতে গিয়ে আমরা সবাই করোনাই আক্রান্ত হয়ে পড়ি। তবে আমাদের সৌভাগ্য যে লক্ষণগুলো ছিল খুবই হালকা।
অন্যদিকে আরেকজন অভিভাবক স্টেফানি গারবার ব্ল্যাক বলেছেন, তার দুই শিশু সন্তান করোনার টিকা পায়নি। এজন্য তাদের অনীহা বা দ্বিধা-দ্ব›দ্ব দায়ী নয়। যখন টিকার সময়সূচি দেয়া হয়েছিল তখন তিনি অসুস্থ্য ছিলেন। পরে তিনি আর অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাননি।
শিশুদের টিকার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম হলেও এটি একেবারে শূন্য নয়। ব্রিটিশ কলম্বিয়াসহ বিভিন্ন প্রদেশের শিশুরা করোনা সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এখন দেশজুড়ে করোনা বিধি-নিষেধ তুলে দেওয়ায় অনেক অভিভাবক শিশুদের আর টিকাকেন্দ্রে নিতে চাইবে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এটি উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে। ভ্যাঙ্কুভারের ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অব পপুলেশন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ডেভন গ্রেসন বলেন, সব বয়সীদের মধ্যে ভ্যাকসিন গ্রহণের হার হওয়া উচিত ৯০%। বয়স্কদের টিকার হার বেশি আর শিশুদের কম হলে জটিলতার শঙ্কা থেকেই যাবে। সূত্র : সিবিসি
