অনলাইন ডেস্ক : ইউরোপে কোভিড সংক্রমণ ব্যাপক মাত্রায় বাড়তে শুরু করায় মহাদেশটির বিভিন্ন দেশে আবারো নতুন করে কড়াকড়ি আরোপ শুরু হয়েছে। তবে এবার প্রতিটি দেশেই এই কোভিড নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দেখা যাচ্ছে। বিক্ষোভে যোগ দিতে রাস্তায় নেমে আসছে মানুষ। বিবিসি জানিয়েছে, লকডাউন আইন ঘোষণার পর নেদারল্যান্ডসে আবার নতুন করে বিক্ষোভ ছড়িয়েছে। দ্য হেগ শহরে বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে জ্বলন্ত আতসবাজি ও পটকা ছুঁড়েছে এবং সাইকেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। এর আগে শুক্রবার রাতে দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর রটারডামে করোনাভাইরাস বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে শত শত মানুষের বিক্ষোভ ভয়াবহ দাঙ্গায় রূপ নিলে পুলিশ গুলি চালায়। অস্ট্রিয়া, ক্রোয়েশিয়া এবং ইতালিতে নতুন বিধিনিষেধ জারির ঘোষণায় ক্ষুব্ধ হাজার হাজার বিক্ষোভকারী পথে নামে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ইউরোপে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে, তাতে তারা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।

জীবনে অনেক ন্যাপি পাল্টিয়েছি, বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করলেন তিনি ছয় সন্তানের বাবা
সংস্থাটির ইউরোপ অঞ্চল প্রধান হান্স ক্লুগ বলেছেন, ইউরোপ জুড়ে যদি কঠোর পদক্ষেপ নেয়া না হয়, তাহলে আগামী মার্চ নাগাদ ইউরোপে মৃত্যুর সংখ্যা আরও পাঁচ লাখ বেড়ে যেতে পারে। তার ভাষায়, ইউরোপে আবারও মানুষের মৃত্যুর এক নম্বর কারণ হয়ে উঠেছে কোভিড। এই ভাইরাসের মোকাবেলা করতে কী করা দরকার সেটা আমরা জানি। এগুলো হচ্ছে, ভ্যাকসিন নেয়া, মাস্ক পরা, এবং কোভিড পাস ব্যবহার করা।

তবে কোভিড কড়াকড়ির বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডসের বেশ কয়েকটি শহর ও শহরতলীতে দ্বিতীয় রাতের মত দাঙ্গা হয়েছে। দ্য হেগ শহরে হুড দিয়ে মুখ ঢাকা দাঙ্গাকারীরা রাস্তায় সাইকেলে আগুন দিয়েছে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ঘোড়া, কুকুর ও লাঠি ব্যবহার করেছে। কর্মকর্তারা শহরে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে এবং অন্তত সাত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, রোগী নিয়ে যাওয়া একটি অ্যাম্বুলেসের জানালা লক্ষ্য করে এক ব্যক্তি পাথর ছুঁড়ে মেরেছে। শহরের পুলিশ কর্মকর্তারা টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, যে পাঁচজন পুলিশ আহত হয়েছে। এদের মধ্যে একজনকে অ্রাম্বুলেন্সে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

নেদারল্যান্ডসের অন্যত্র দুটি গুরুত্বপূর্ণ ফুটবল ম্যাচ চলার সময় সমর্থকরা মাঠের মধ্যে ঢুকে পড়লে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় এবং কিছুক্ষণের জন্য ম্যাচ দুটি বন্ধ রাখতে হয়। নতুন করোনাভাইরাস নিয়মের আওতায় এখন ফুটবল স্টেডিয়ামে দর্শকের ঢোকা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে রটারডামে যে ব্যাপক দাঙ্গা হয়, শহরের মেয়র তাকে ‘সহিংসতার মহোৎসব’ বলে বর্ণনা করে তার নিন্দা করেন। গুলিতে আহত অন্তত তিনজন বিক্ষোভকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। কর্তৃপক্ষ গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।

এদিকে অস্ট্রিয়ায় সরকার নতুন করে জাতীয় পর্যায়ে লকডাউন এবং ২০২২ এর ফেব্রুয়ারি থেকে টিকা নেয়া বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনা ঘোষণার পর রাজধানী ভিয়েনায় হাজার হাজার মানুষ প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছে। বিক্ষোভকারীরা জাতীয় পতাকা এবং স্বাধীনতা লেখা ব্যানার নিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। আবার তাদেরকে পুলিশকে লক্ষ্য করে নিন্দা ধ্বনি দিতেও দেখা যায়। অস্ট্রিয়ায় আাগমীকাল সোমবার থেকে সারা দেশে বিশ দিন ব্যাপী লকডাউন শুরু হচ্ছে। এর ফলে অত্যাবশ্যকীয় জিনিসপত্রের দোকান ছাড়া সব দোকান বন্ধ রাখার এবং মানুষকে ঘর থেকে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বিক্ষোভ হয়েছে ক্রোয়েশিয়া, ইতালি ও ফ্রান্সের মতো দেশগুলোতেও। ক্রোয়েশিয়ার রাজধানী জাগ্রেবে সরকারি কর্মীদের জন্য টিকা বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করতে মিছিল করেছেন হাজার হাজার মানুষ। ইতালিতে কর্মস্থল, বিভিন্ন ভেন্যু এবং গণ পরিবহনে সবুজ পাস সনদ চালু করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রোমে কয়েক হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছে। ফ্রান্স কর্তৃপক্ষ তাদের শাসনাধীন ক্যারিবীয় দ্বীপ গুয়াডেলুপ-এ টিকা নিয়ে অসন্তোষ মোকাবেলায় কয়েক ডজন পুলিশ অফিসার পাঠিয়েছে। এদিকে ফ্রান্সের নিজস্ব কোভিড ছাড়পত্র সনদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সহিংস হয়ে ওঠে যখন লুটপাটকারীরা বেশ কিছু দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তছনছ করে।