Home কানাডা খবর খরচ চলতে হিমশিম খাচ্ছেন নির্দিষ্ট ও নিম্ন আয়ের কানাডিয়ানরা : উচ্চ মূল্যস্ফীতির...

খরচ চলতে হিমশিম খাচ্ছেন নির্দিষ্ট ও নিম্ন আয়ের কানাডিয়ানরা : উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ‘ফুড ব্যাংক’ ব্যবহারকারীর সংখ্যা আরো বেড়েছে

অনলাইন ডেস্ক : চলতি বছর রেকর্ড সংখ্যক কানাডিয়ান ‘ফুড ব্যাংক’ ব্যবহার করেছে বলে এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এর কারণ হিসেবে উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং সামাজিক সহায়তার নিম্ন হারকে মূল কারণ হিসাবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ফুড ব্যাংকস কানাডার বার্ষিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, মার্চ মাসে কানাডার ফুড ব্যাংকগুলোতে প্রায় দেড় মিলিয়ন (১৫লাখ) মানুষ ভিজিট করেছে যা গত বছরের মার্চ মাসের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি এবং মহামারীর আগে ২০১৯ সালের মার্চের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বেশি।

এডমন্টনে বসবাসকারী ৭২ বছর বয়সী লিন্ডা গডিন তাদের মধ্যে একজন যারা জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের কারণে খাদ্য ব্যাংকে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তাকে নির্দিষ্ট আয়ে জীবনযাপন করতে হচ্ছে। তিনি সিবিসি নিউজকে বলেন, “কখনও কখনও মাস শেষে চলা কঠিন হয়ে পরে। “আমি যতটা পারি বাজেট করে চলার চেষ্টা করি, তারপরও মাঝে মাঝে বাজেটেও কুলিয়ে উঠতে পারিনা।”

৪ হাজার ৭৫০টিরও বেশি ফুড ব্যাংক এবং কমিউনিটি সংস্থার তথ্যের উপর ভিত্তি করে ফুড ব্যাংকস কানাডার রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাদ্য ও বাসস্থানের আকাশছোঁয়া খরচ; সেইসাথে উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং সামাজিক সহায়তার নিম্ন হার ফুড ব্যাংকের ব্যবহার বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।

ফুড ব্যাংকস কানাডার সিইও কার্স্টিন বিয়ার্ডসলি বলেছেন, “আমরা যা দেখছি তা হল – একটি ভঙ্গুর সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবের সংমিশ্রণ মূল্যস্ফীতি এবং উচ্চ খরচের প্রভাবের সাথে মিলিত হয়ে কানাডার ইতিহাসে আগের চেয়ে বেশি লোককে ফুড ব্যাংক ব্যবহার করতে বাধ্য করছে।”

”নির্দিষ্ট আয়ের লোকেরা যেমন প্রবীণ এবং চাকুরিজীবী, তাড়াছা নি¤œ আয়ের ব্যক্তিরা যেমন শিক্ষার্থী; তীব্রভাবে আক্রান্ত হয়েছে।” ”কারণ তাদের বেতন মূল্যস্ফীতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না, বিয়ার্ডসলি বলেছেন”। তিনি আরো বলেন, আমরা এমন সব প্রবীণদের জীবনে প্রথমবারের মত ফুড ব্যাংকে যেতে দেখেছি যারা তাদের জীবন চালিয়ে নিতে সক্ষম ছিলো। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের আয় খুবই সীমিত, যখন খরচ বেড়ে যায় তাদের আর কোন উপায় থাকে না, বলেন বিয়ার্ডসলি।

অটোয়া ফুড ব্যাংকের সিইও রাচেল উইলসন বলেছেন, তিনি স্থানীয়ভাবে একই চ্যালেঞ্জগুলো দেখতে পাচ্ছেন। “শিক্ষার্থীরা সত্যিই সংগ্রাম করছে,” তিনি সিবিসি নিউজ নেটওয়ার্ককে বলেছেন। “আপনি যখন শিক্ষা খরচের দিকে তাকান, সেই সাথে এখানে অটোয়াতে ভাড়ার খরচ – আমি জানি এটি টরন্টো এবং সারা দেশে একই রকম। খাবারের খরচ মেটনোও অবিশ্বাস্যভাবে চ্যালেঞ্জিং।”

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আনুমানিক ৫ লাখ ফুড ব্যাংকের গ্রাহকের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই শিশু, যারা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ। চাহিদার ঊর্ধ্বগতি কিছু খাদ্য ব্যাংকের পক্ষে সরবরাহ বজায় রাখা কঠিন করে তুলেছে। উদাহরণস্বরূপ, মেমোরিয়াল ইউনিভার্সিটির সেন্ট জন’স ক্যাম্পাসের ফুড ব্যাংকটি সাময?িকভাবে বন্ধ করতে হয়েছিল কারণ এতে স্টকে কিছুই অবশিষ্ট ছিল না।

ফুড ব্যাংকের স্বেচ্ছাসেবক কো-অর্ডিনেটর ম্যাট পাইক বলেছেন, “গত কয়েক মাস ধরে চাহিদা আমাদের অনুমানের চেয়ে বেশি ছিল।” পাইক বলেছেন, ”আগস্টে ক্যাম্পাস ফুড ব্যাংকের ব্যবহার সাধারণত সেপ্টেম্বরে ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পায় কারণ শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হয়ে যায়, তবে এই বছর তা দ্বিগুণ হয়েছে।” তিনি বলেন, ”বন্ধ করতে বাধ্য হওয়ার আগে আমাদের ফুড ব্যাংক সেপ্টেম্বরে প্রায় ৩০০ ক্লায়েন্টকে এবং অক্টোবরে ৩৬০ ক্লায়েন্টকে সেবা দিয়েছে।”

বিয়ার্ডসলি রিপোর্টটিকে “সতর্কবার্তা” হিসেবে অভিহিত করেছেন। ”এটি খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং এতে অবদান রাখে এমন সমস্যাগুলো মোকাবেলায় পদক্ষেপগুলোকে তরান্বিত করবে। প্রতিবেদনে নিম্ন-আয়ের কানাডিয়ানদের জন্য সার্বজনীন ন্যূনতম আয়ের ভিত্তি তৈরি করা এবং আরও সাশ্রয়ী মূল্যের এবং ভাড়া-সহায়তা আবাসন প্রদান সহ দীর্ঘমেয়াদী এবং স্বল্পমেয়াদী সমাধানের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, কর্মসংস্থান বীমা এবং কানাডা ওয়ার্কার্স বেনিফিট প্রোগ্রামগুলোতে সংস্কার প্রয়োজন বলেও আরও পরামর্শ দেয়া হয়েছে রিপোর্টে। সূত্র: সিবিসি

Exit mobile version