অনলাইন ডেস্ক : টেকনাফে পুলিশের গুলিতে মেজর (অব) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যায় গ্রেফতার ১০ আসামির মধ্যে ৭ আসামিকে র‌্যাব হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আসামিরা কী তথ্য দিচ্ছেন তা তদন্তকারীরা প্রকাশ করেননি। তবে কক্সবাজারের উৎসুক মানুষের মধ্যে ‘তথ্য’ তথা হত্যা রহস্য জানার আগ্রহ প্রবল। চঞ্চল্যকর খুনের প্রকৃত রহস্য জানতে মানুষ প্রহর গুনছেন। ৭ আসামিকে র‌্যাবের রিমান্ডে নেয়ার পর থেকে কক্সবাজার, টেকনাফের হাট-বাজার, অফিস-আদালত, মাঠঘাট সর্বত্রই মানুষের আলোচনা কী তথ্য দিচ্ছেন অভিযুক্তরা? গণমাধ্যম কর্মী দেখলেই মানুষ জিজ্ঞাস করছেন সিনহা হত্যা মামলায় রিমান্ডে আসামিরা কি তথ্য দিচ্ছেন?

মামলার আসামি প্রদীপ কুমার দাশ, লিয়াকত আলী, নন্দলাল রক্ষিতকে এখনো রিমান্ডে নেয়া হয়নি। তারা কক্সবাজার কারাগারে রয়েছেন। তবে রিমান্ডে নেয়া ৭ আসামি হচ্ছে কনস্টেবল সাফানুর করিম, কনস্টেবল কামাল হোসেন, কনস্টেবল আবদুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া ও পুলিশের মামলার তিন সাক্ষী যথাক্রমে- নুরুল আমিন, নিজাম উদ্দিন ও মো: আয়াজ। এর পরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে আসামি ওসি প্রদীপ, লিয়াকত ও নন্দলাল রক্ষিতসহ তিনজনকে। জানা গেছে তাদের কাছ থেকে অনেক চমকপ্রদ তথ্য পাচ্ছেন মামলা তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব। তবে তা এখনই প্রকাশ করা হচ্ছে না। তদন্তের স্বার্থেই তা প্রকাশ করা হচ্ছে না।

এদিকে মেজর সিনহা হত্যার আলোচিত ঘটনা তদন্তে আজ রোববার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের নিয়ে গণশুনানি করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি। ইতোপূর্বে গত ১২ আগস্ট এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন তদন্ত কমিটির সদস্য ও কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শাজাহান আলি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির এ সদস্য জানিয়েছেন, ১৬ আগস্ট সকাল ১০টা থেকে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এলাকায় অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প ইনচার্জ (সিআইসি) কার্যালয়ে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা নিহত হওয়ার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিবর্গদের গণশুনানির আয়োজন করা হয়েছে।

গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফের শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে ‘গাড়ি তল্লাশিকে’ কেন্দ্র করে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
এ আলোচিত ঘটনার তদন্তে গত ২ আগস্ট কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শাজাহান আলিকে প্রধান এবং পুলিশ সুপারের একজন প্রতিনিধি (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) ও সেনাবাহিনীর রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসির একজন প্রতিনিধির সমন্বয়ে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

পরদিন ৩ আগস্ট কমিটি পুনর্গঠন করে চার সদস্যবিশিষ্ট করা হয়। এতে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে প্রধান করা হয়। এই কমিটির সদস্য রাখা হয় কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শাজাহান আলি, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (ডিআইজি)-এর একজন প্রতিনিধি এবং সেনাবাহিনীর রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসির একজন প্রতিনিধি।

তদন্ত কমিটির সদস্য ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাজাহান আলি বলেন, টেকনাফে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হওয়ার ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে গণশুনানি অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিবর্গকে নির্ধারিত সময় ও তারিখে উপস্থিত হয়ে গণশুনানিতে অংশগ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে অবহিতও করা হয়েছে বলে তিনি জানান। এছাড়া গণশুনানি আয়োজনের বিষয়ে প্রস্তুতির পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট পর্যায়ে অবহিত করা হয়েছে বলেও জানান মোহাম্মদ শাজাহান আলি।

র‌্যাবের ঘটনাস্থল পরিদর্শন : এদিকে ৩১ জুলাই টেকনাফে পুলিশের গুলিতে নিহত সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ হত্যাকান্ডের স্থান পরিদর্শন করেছেন ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব-১৫ এর কর্মকর্তারা। গতকাল মেজর সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌসের দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এএসপি খাইরুল ইসলামের নেতৃত্বে র‌্যাব-১৫ এর সদস্যরা টেকনাফ বাহারছরা শামলাপুর এলাকার পুলিশ চেকপয়েটের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

র‌্যাবের তদন্তকারী দলটি প্রায় ঘণ্টাব্যাপী ঘটনাস্থলে অবস্থান করে স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে নানা ধরনের তথ্য সংগ্রহ করেন। এসময় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীসহ এলাকার মানুষ জনকে মেজর সিনহা হত্যার ব্যাপারে নির্ভয়ে যেকোনো ধরনের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানান। এ ব্যাপারে কেউ হুমকি ধমকি দিলে সাথে সাথে বিষয়টি র‌্যাবকে জানানোর জন্যও অনুরোধ জানান কর্মকর্তারা।