Home কানাডা খবর গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ে রাজনৈতিক বিবেচনা কাজ করে: ড. জেরেমি

গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ে রাজনৈতিক বিবেচনা কাজ করে: ড. জেরেমি

ড. জেরেমি মেলভিন মেরন

অনলাইন ডেস্ক : আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ের সময়ে বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক বিবেচনা কাজ করে। এজন্য ধৈর্য ধরে অগ্রসর হওয়া এবং বিভিন্ন দেশে অ্যাকাডেমিক, সামাজিক বা সংস্কৃতি পরিমণ্ডলে সঠিক চিত্র তুলে ধরে রাজনীতিকদের মনোযোগ আকর্ষণের পরামর্শ দিয়েছেন কানাডিয়ান মিউজিয়াম ফর হিউম্যান রাইটস হলোকাস্ট এবং গণহত্যা বিষয়ক কিউরেটর ড. জেরেমি মেলভিন মেরন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে ৬ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা সফর করছেন জেরেমি। তিনি ১৯৭১ সালে ঢাকা ও সংলগ্ন যেসব এলাকায় গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল, সেই স্থানগুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করবেন। একইসঙ্গে ১৯৭১ সালের গণহত্যায় নিহত পরিবারের সদস্য ও গণহত্যায় বেঁচে যাওয়া নির্যাতিতদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।

বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে গণহত্যার বিষয়ে আলোচনা করেন ড. জেরেমি মেলভিন মেরন।

তিনি বলেন, ‘আমার মতে স্বীকৃতির জন্য ধৈর্য প্রয়োজন। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশি ডায়াসপোরা বিভিন্ন জায়গায় ধারাবাহিকভাবে এ বিষয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে।’

গণহত্যার স্বীকৃতির বিষয়ে রাজনৈতিক মতামত কিভাবে পক্ষে আনা যায়—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন দেশে অ্যাকাডেমিক, সামাজিক বা সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশিরা গণহত্যার সত্যি ঘটনাগুলো বারবার বললে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে বিষয়টি তুলে ধরা সহজ হবে। এর ফলে বিষয়টির আলোচনার ব্যাপ্তি বৃদ্ধি পাবে এবং হয়তো এটি রাজনৈতিক মহলকে প্রভাবিত করতে পারে।’

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক সচেতনতা তৈরি এবং গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা করছে। এই প্রচেষ্টা হয়তো রাজনৈতিক মহলে প্রভাব রাখবে বলে তিনি জানান।

আমরা কানাডায় বাংলাদেশি ডায়াসপোরা এবং এখানকার বাংলাদেশিদের সঙ্গে কাজ করছি, যাতে ১৯৭১ সালে সংঘটিত গণহত্যার কথা বড় পরিসরে তুলে ধরা সম্ভব হয়।

আশাপ্রদ অগ্রগতি

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যা করছে, সেটি অত্যন্ত আশাপ্রদ। কানাডাতে কানাডিয়ান মিউজিয়াম ফর হিউম্যান রাইটস হলোকাস্টের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার পাশাপাশি তারা অন্য দেশের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। এর মাধ্যমে ১৯৭১ সালের দুঃখজনক ঘটনা আরও বৃহত্তর পরিসরে স্বীকৃতি আদায়ের পথ সহজ হবে বলে জানান তিনি।

জেরেমি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে— বিভিন্ন ধরনের ডকুমেন্ট সংরক্ষণ করা এবং এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমার বিবেচনায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর অত্যন্ত ভালো কাজ করছে। তারা বিভিন্ন ধরনের ডকুমেন্ট এবং তথ্য সংগ্রহ করছে। সেটি বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ও আমার মতো গবেষকদের দিচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই ইতিহাস আমার কাছে অজানা ছিল। কিন্তু এখন আমি প্রতিদিন কিছু জিনিস জানতে পারছি। আমি এটি আমার দেশে নিয়ে যাবো এবং আমার সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে কিভাবে এই তথ্য অন্যদের জানাতে পারি, সেটি খুঁজে বের করবো।’

গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ের প্রক্রিয়া চলছে। কানাডায় বসবাসরত বাংলাদেশিরা অন্য সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে গণহত্যার স্বীকৃতির বিষয়ে আলোচনা করছে বলে তিনি জানান।

স্বীকৃতি আদায়ে কতদিন লাগবে

স্বীকৃতি আদায়ের জন্য কতদিন লাগতে পারে এর সহজ কোনও উত্তর নেই জানিয়ে জেরেমি বলেন, ‘কানাডিয়ান ডায়াসপোরার প্রতি আমার একটি পরামর্শ হচ্ছে— স্থানীয় পর্যায়ে বা স্থানীয় রাজনীতিতে কাজ শুরু করা সহজ। এটি যখন সংহত হবে, তখন স্বাভাবিকভাবে এটি আরও বিস্তৃত হবে।’

কানাডার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে আদিবাসীদের বিরুদ্ধে গণহত্যার ইতিহাস রয়েছে। এমনকি ১০-১৫ বছর আগেও এটা একটি বিতর্কিত বিষয় ছিল। কিন্তু পর্যায়ক্রমে কানাডার রাজনৈতিক মহল বিষয়টি ভালো বুঝতে পেরেছে ও গ্রহণ করছে। একইসঙ্গে এ নিয়ে আলোচনাও হচ্ছে। কিন্তু এর প্রচারণা শুরু করেছিল আদিবাসীরা নিজেরা এবং আস্তে আস্তে জনগণ বিষয়টি শুনেছে।’

Exit mobile version