এক বৈচিত্র্যময় অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন ১লা জুলাই, ২০২১ বৃহস্পতিবার কানাডা ডে’ পালন করে। কানাডায় জন্মগ্রহণ করা ও বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্মকে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করে কানাডা ও বাংলাদেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংযোগ স্থাপনে অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে তাদের সংশ্লিষ্টতায় সাজানো হয় অনুষ্ঠানটি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত অন্টারিও প্রাদেশিক সংসদের নির্বাচিত সম্মানিত সাংসদ ডলি বেগম। মহামারী কোভিডের কারণে জুম ভিডিও ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানটি চিত্রাঙ্কন ও বক্তৃতা প্রতিযোগিতাসহ সঙ্গীতে বিন্যাসিত ছিল। বিশেষ করে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাটি ২৭ই জুন সম্পন্ন করা হয়।

এলামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি এ এম এম তোহার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেনের সঞ্চালনায় বাংলাদেশ ও কানাডার জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বের সূচনা হয়। সভাপতি স্বাগত বক্তব্যে নতুন প্রজন্মের অংশগ্রহণে কানাডা ডে’ পালনের প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য তুলে ধরেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষক অধ্যাপক ডঃ সুজিত দত্ত ও এলামনাইর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া। সাধারণ সম্পাদক অতি সংক্ষেপে এলামনাই এসোসিয়েশনের পরিচিতি ও কার্যক্রম তুলে ধরেন। তিনি সংগঠনের জন্য স্বল্প ভাড়ায় একটি কার্যালয় ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য স্বল্প ফি বা ফি বিহীন একটি মিলনায়তনের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য প্রধান অতিথি বরাবরে অনুরোধও করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাংসদ ডলি বেগম এলামনাইর দীর্ঘদিনের কার্যক্রমের ভূঁয়সী প্রশংসা করেন। স্বয়ং বাংলাদেশী কানাডিয়ান হিসাবে এই প্রজন্ম তরুণদেরকে বহু-সংস্কৃতির দেশ কানাডার বিস্তৃত সুযোগ সুবিধাকে কাজে লাগানোর আহবান করেন তিনি। এলামনাইর যে কোন প্রয়োজনে সহ অনুরোধকৃত বিষয়ে সহযোগিতা করার আশ্বাসও তিনি ব্যক্ত করেন। প্রধান অতিথি হিসবে আমন্ত্রিত করার জন্য এলামনাই এসোসিয়েশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি তার বক্তব্য সমাপ্ত করেন।

দ্বিতীয় পর্ব চিত্রাঙ্কন ও বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় সজ্জিত ছিল। কানাডা ডে’কে প্রতিপাদ্য করে চিত্রাঙ্কন ও বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীরা তাদের চিত্রকর্ম ও বক্তব্য তুলে ধরেন। সাংস্কৃতিক সম্পাদক তানভী হকের সঞ্চালনায় দ্বিতীয় পর্বের প্রারম্ভে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ প্রদর্শিত হয়। যেখানে প্রতিযোগীদের চিত্রাঙ্কনের মুহূর্ত সহ চিত্রকর্ম ফুটে উঠে। পরবর্তীতে প্রধান বিচারক প্রফেসর ডঃ শাহাদাত হোসেন খানের অনুপস্থিতিতে অন্য বিচারক রওশন ইসলাম বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন। ‘ক’ বিভাগে কেবল একজন উম্মে রুম্মানও ‘খ’ বিভাগে মেহনাজ তাসনিম, শাহির হোসেন, বিশাল পাল যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কার লাভ করে। চিত্রাঙ্কনে অংশগ্রহণ করে লাবিবা সারারা, আদিবা জাইমা, কাজী আরমানি ওয়ার্দা, ইউশা নাহিয়ান, মুহতাসিম রহমান, রেসমিয়া ইসলাম নাজা, আদিবা রহমান, ফারিহা আক্তার ও সুমাইলা সাইফ। বিচারকমন্ডলীতে প্রধান বিচারক ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়র প্রাক্তন শিক্ষক অধ্যাপক ড. শাহদাত হোসেন সহ প্রাক্তন শিক্ষার্থী শামীমা আক্তার সিমা ও রওশন ইসলাম।

এরপর বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীরা একে একে তাদের বক্তব্য প্রদান করে। নতুন প্রজন্মের এই সকল বক্তাদের বক্তব্যে কানাডার প্রতিষ্ঠা এবং ইহার রাজনৈতিক, ভৌগোলিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকসহ বিবিধ বিষয় উঠে আসে। প্রতিযোগিতা শেষে বিচারক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষিকা অধ্যাপক ডঃ রেবেকা সুলতানা বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন। রিয়াজ মাহমুদ, আরামনি ওয়ার্দা ও আদিয়ান হাসান অনুভব যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান লাভ করে। বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় আরো অংশগ্রহণ করে কাজী আজওয়াদ সায়ার ও জাহানারা তাসনিম। অধিকন্তু উভয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী সকলকে সান্ত¡না পুরস্কারও প্রদান করা হয়।

সাংস্কৃতিক বিষয়ক যুগ্ম-সম্পাদিকা কানিজ ফাতেমার চমৎকার সঞ্চালনায় সমাপনী পর্বের প্রথমে এই প্রজন্মে শিল্পীরা ইংরেজিতে সঙ্গীত পরিবেশন করে। সঙ্গীত পরিবেশন করে আদিবা জাইমা, আদিবা লাবিবা, কাজী আরমানি ওয়ার্দা, মাইশা, শ্রেয়া বিশ্বাস ও ইউশা নাহিয়ান। টরন্টোর বিশিষ্ট শিল্পী মৈত্রী দেবীর এক গুচ্ছ ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের সঙ্গীত পরিবেশনা শ্রোতারা আনন্দের সহিত উপভোগ করেন।

পরিশেষে, সভার সভাপতি উপস্থিত অতিথি, কমিটির সকল সদস্য বিশেষ করে প্রতিযোগিতার পুরস্কার স্পন্সারকারী সংগঠনের সহ-সভাপতি সুধান রায়, যুগ্ম-সম্পাদিকা কানিজ ফাতেমা, যুগ্ম-সম্পাদক দেবরাজ বিশ্বাস, কার্যকরী কমিটির সদস্য তানভীর রিয়াজী আলম ও জনসংযোগ সম্পাদিকা তেহজিনা এমদাদ নুপুরকে ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠান পরিকল্পনায় সহযোগীতা করার জন্যে সংগঠনের উপদেষ্টা সমর পালের প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। সেই সাথে এই পুরো অনুষ্ঠানের সফলতার পেছনে যারা কঠোর পরিশ্রম করেছেন বিশেষ করে তানভী হক, কানিজ ফাতেমা, শেখ জসিম উদ্দিন, হাসান তারিক চৌধুরী, দেবরাজ বিশ্বাস, বিশ্বজিৎ পাল এবং কার্যকরী কমিটির সবাইকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।