Home কলাম চিঠি

চিঠি

&NewLine;<&excl;-- Google AdSense AMP snippet added by Site Kit -->&NewLine;<amp-auto-ads type&equals;"adsense" data-ad-client&equals;"ca-pub-8846063755563353"><&sol;amp-auto-ads>&NewLine;<&excl;-- End Google AdSense AMP snippet added by Site Kit -->&NewLine;&NewLine;<p> ফরিদ আহমদ<br> ঝুপড়ির দরজা খুলেই চমকে ওঠে জামাল। মায়ের দেহটা চোখে পড়ে তার। ঠাণ্ডা মেঝেতে নিথর পড়ে রয়েছে। মাথাটা এক পাশে হেলানো। মা যে মৃত সেটা এক ঝলক দেখেই বুঝে যায় জামাল। এর জন্য সামান্যতম বেদনা জন্মে না তার মনে। এক ফোঁটা অশ্রুও জন্মায় না তার চোখের কোণায়। মাকে সে ঘৃণা কর। যেই সেই ঘৃণা নয়&comma; তীব্র ধরনের ঘৃণা।<br> মাকে দেখতে সে ঝুপড়িতে ঢোকেনি&comma; ঢুকেছিলো নিছক কৌতূহলে। দীর্ঘ একটা জীবন এই ঝুপড়িতে কাটিয়েছে সে। বন্ধুদের আমন্ত্রণে স্কুল রি-ইউনিয়নে এসেছিলো সে। তার মা এগুলোর কিছুই জানতো না। রি-ইউনিয়ন শেষ করে হুট করেই কী মনে করে ঝুপড়িতে এসেছে সে। <br> তার ছোটবেলাটা দুর্বিষহ ছিলো। সেটা তার মায়েরই কারণে। তার মায়ের মাত্র একটা চোখ ছিলো। সেই এক চোখ নিয়ে একটা মুদির দোকান চালাতো সে। তার জন্মের পরই বাবা তাদের ফেলে পালিয়েছে। মা ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়েছে। ওই পড়ালেখা দিয়ে চাকরি পাওয়া যায় না। মানুষের বাড়িতে কাজ করার চেয়ে মুদির দোকান দিয়ে বসে মা তার। সেই দোকান চালিয়েই বছরের পর বছর সংসার চালাতো তার মা। <br> মায়ের দিকে তাকালেও তাকে একটা এক চোখা ডাইনি বলে মনে হতো তার। মায়ের কারণে বিড়ম্বনার শেষ ছিলো না তার। একদিন কী কারণে যেনো মা তার স্কুলে এসেছিলো। তারপর থেকে সেকি যন্ত্রণা&excl; স্কুলের প্রতিটা বাচ্চা তাকে টিজ করেছে তার মায়ের এক চোখ নেই বলে। <br> বাড়িতে ফিরে মায়ের উপর সব রাগ ঝেড়েছে জামাল। স্কুলের সব অপমানের প্রতিশোধ সে নিয়েছে মায়ের উপর। আক্রোশে ফেটে পড়ে চিত্কার করে উঠেছে সে&comma; &OpenCurlyDoubleQuote;তুমি আমাকে এভাবে লোকজনের হাসির পাত্র করছো কেনো&quest; কেনো তুমি মরতে পারো না&quest;”<br> এর উত্তরে মা কিছু বলেনি। মাথা নিচু করে চুপ থেকেছে। মাটিতে গোটা কয়েক লাথি মেরে রাগে কাঁপতে কাঁপতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে জামাল।<br> রাতে পানি খেতে উঠে দেখেছে মা তার নিঃশব্দে কাঁদছে। এক চোখ বেয়ে জলের ধারা গড়িয়ে চলেছে। সেটা দেখেও জামালের মন নরম হয়নি। এই মহিলার কারণে জীবন তার এমন যন্ত্রণাকর।<br> শুধু স্কুল না&comma; এলাকার ছেলেপেলেসহ বয়ষ্করাও তাকে কম যন্ত্রণা দেয়নি। তাকে সবাই কাণি বেডির পোলা বলে ডাকতো।<br> এই যন্ত্রণাময় জীবন থেকে পালানোর জন্য পড়ালেখাটাকে বেছে নিয়েছিলো সে। স্কুল কলেজ শেষ করে চলে গিয়েছিলো ঢাকায়। তারপর থেকে আর কখনোই এই ছোট্ট শহরে ফিরে আসেনি সে। <br> আজ এতদিন পরে ফিরে এসেও মায়ের প্রতি সেই বিতৃষ্ণা এতোটুকু কমেনি তার। মৃত মাকে দেখেও করুণা জন্মায় না তার। নিরাবেগ দৃষ্টিতে মায়ের মৃতদেহের দিকে আরেকবার তাকায় সে। বুকের উপরে মায়ের দু’টো হাত জড়ো হয়ে রয়েছে। সেখানে&comma; ভাঁজ করা একটা কাগজ ধরা রয়েছে।। কৌতূহলের বশে কাগজটা তুলে নেয় সে। ভাঁজ খোলে। একটা চিঠি। তাকে উদ্দেশ্যে করে লিখেছে মা। অবাক হয়ে পড়তে থাকে জামাল।<br> মাণিক আমার&comma;<br> এই চিঠি হয়তো তোমার কাছে কোনোদিন পৌঁছোবে না। কারণ&comma; তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেছো বহুদিন হলো। তারপরেও তোমাকে লিখছি আমি। কেনো লিখছি&comma; তা জানি না। হয়তো নিজের বেদনার কথা লাঘব করতে চাচ্ছি আমি।<br> তুমি তোমার স্কুলের প্রোগ্রামে এসেছো&comma; এটা জেনেছি আমি তোমার বন্ধুদের কাছ থেকে। খুব ইচ্ছে হয়েছিলো তোমাকে দেখার। কিন্তু&comma; আমি তোমাকে দেখতে যাইনি। এর জন্য বুকটা ফেটে গেছে আমার। তোমার চাঁদবদনটা দেখতে পাইনি&comma; এর চেয়ে বড় কষ্টের আর কিছু নেই আমার জন্য। আমি জানি&comma; তুমি আমাকে ঘৃণা করো। আমি তোমার অনেক লজ্জার কারণ। আমাকে স্কুলে দেখলে তোমার বন্ধুরা আবারও হাসাহাসি করবে&comma; যেমন করেছিলো সেই ছোটবেলায়। তুমি লজ্জা পাবে&comma; বিব্রত হবে। এগুলো ভেবে আমি আর তোমার স্কুলের দিকে যাইনি। তোমাকে না দেখার দুঃখ বুকে চেপে বাড়িতে বসে রয়েছি। <br> এটাই আমার জীবনের শেষ রাত। এই রাতের পর আমি আর থাকবো না। আজ তোমাকে আমি একটা সত্যি কথা বলে যাবো।<br> যে কথা আমি চেপে রেখেছিলাম তোমার কাছ থেকে সারাজীবন ধরে।<br> তোমার খুব ছোটবেলায়&comma; তুমি একটা দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলে। সেই দুর্ঘটনায় একটা চোখ হারিয়েছিলে তুমি। একটামাত্র চোখ নিয়ে তুমি ঘুরতে&comma; ফিরতে&comma; দৌড়াতে। অন্যদের টিটকারি সহ্য করতে প্রতিদিন। আমি মা হয়ে সেটা সহ্য করতে পারতাম না সেটা। আমার একটা চোখ তোমাকে আমি দিয়ে দিয়েছিলাম। না&comma; দান করি নাই। তোমাকে দান করার কিছু নেই আমার। তুমিতো আসলে আমিই। আমার নাড়ি ছেড়া রক্তমাংস তুমি। নয় মাস তোমাকে আমি পেটের ভিতরে লালন-পালন করেছি। জন্মের পরেও আমার দেহ থেকে পুষ্টি পেয়েছো তুমি। তুমি দুনিয়া দেখলেই আমার দুনিয়া দেখা হয়ে যায়। কাজেই&comma; তোমাকে আমি আমার চোখ দিয়ে দিয়েছিলাম গভীর ভালবেসে&comma; পরম মমতায়।<br> আমার একটা চোখ নেই বলে&comma; আমি কুত্সিত বলে&comma; তুমি সবার সামনে লজ্জা পেতে। সেই লজ্জার কারণে অনেক সময় তুমি আমার সাথে খারাপ ব্যবহারও করেছো। কিন্তু&comma; আমি ওগুলোতে কোনো কষ্ট পাই নাই। আমার মনে হয়েছে ওগুলো তুমি করেছো রাগের কারণে। অন্তরের ভিতরে তুমি ঠিকই আমাকে অনেক ভালবাসো। <br> সেই ছোটবেলায়&comma; তুমি যখন আমার শাড়ির প্রান্ত ধরে আমার গায়ের সাথে মিশে থাকতে&comma; সেই সময়টাকে আমি খুঁজে ফিরি শুধু। অনেকদিন ধরে তুমি আমার কাছে নেই। তোমাকে খুব&comma; খুব দেখতে ইচ্ছা করে বাবা। তুমিই আমার সবকিছু&comma; আমার গোটা পৃথিবী। তোমাকে আমি খুব ভালবাসি বাবা। ভালো থেকো আজীবন তুমি।<br> ইতি&comma;<br> তোমার হতভাগিনী মা।<&sol;p>&NewLine;

Exit mobile version