শামীম আহসান মহাবুল্লাহ : “তুমি জানো, তুয়ান ওয়েনের কপালে উল্কির মতো দু’টি চীনা অক্ষর ‘সিয়ে ওয়াং’ [অর্থাৎ সিয়ে দেশের রাজা] খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে কে লিখে দিয়েছে?”
“আমি এখনই, তোমার উদ্দেশ্যেই এই প্রশ্নটা করতে যাচ্ছিলাম! এই খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে অক্ষর লেখার কাজটা তো তুমিই করেছো, তাই না! না কি, সে নিজে নিজেই করেছে?”
“না! কাজটা করেছে প্রয়াত সম্রাটের বিদেহী আত্মা! কোন এক রাতে তুয়ান ওয়েন স্বপ্নে দেখেছিলো প্রয়াত সম্রাটের হাত! সে স্বপ্নে দেখতে পেয়েছিলো বিদ্যুৎ চমকানোর আলো, সেই আলোতে সে দেখেছে একটা স্বর্ণের সূঁচালো কাঁটা! ভোর বেলা ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর সে দেখে ওর কপালে খুঁচিয়ে খোদাই করা দু’টি চীনা অক্ষর!”

“পুরোটাই আজগুবী কথাবার্তা! তুয়ান ওয়েন ঔদ্ধত্যের চরম সীমানায় পৌঁছে গেছে! কত বড় সাহস, সে প্রাসাদের ভিতরে আমার দিকে উস্কানীমূলক কাজের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে! যদি আমি নিজের চোখে ঐ মন্দ কপালটা দেখতাম, তাহলে তুমি অনুমান করতে পারবে, আমি কি করতাম? আমি একটা বড় ছুরি দিয়ে আস্তে আস্তে আঁচড় দিয়ে চাঁছতে থাকতাম, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে স্বপ্নের ঘোর কাটিয়ে না জেগে উঠতো!”
“না! তাহলে প্রয়াত সম্রাটের পবিত্র আত্মা আবার উপস্থিত হতো! এটা তুমি হও কিংবা তুয়ান ওয়েন নিজেই হোক, কারো সাধ্য নেই তুয়ান ওয়েনের কপাল থেকে এই লেখা মুছে ফেলার!”

তুয়ান উ বিশাল এক অট্ট হাসিতে ফেটে পরলো, তারপর আমার পায়জামার টেনে ধরা কোণাটা ছেড়ে দিয়ে শ্বেত পাথরের সিড়ির উপর থেকে গড়িয়ে নীচের দিকে চললো। প্রহরীরা ছুটে গেলো ওকে শুদ্ধাচার অনুশীলন গৃহে টেনে নিয়ে আসার জন্য। ওর হাঁটু থেকে রক্তের বিন্দু টপ টপ করে মেঝেতে জমে গড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম করছিলো। দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছিলো, ওটা একটা সাপের দেহ! ওখান থেকে আমি চলে গেলাম বেশ খানিকটা দূরে! কিন্তু দূর থেকেও আমি শুনতে পেলাম পা ভাঙ্গা তুয়ান উ-র বিকট অট্ট হাসির শব্দ, যা শুনে যে কোন মানুষের গায়ে কাটা দিয়ে উঠতে পারে!

প্রয়াত সিয়ে সম্রাট, যিনি আমার পিতা, বিশ্ব বিখ্যাত বীর! তিনি পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার পরে, এখন পর্যন্তও একটা প্রগাঢ় ছায়া তিনি ফেলছেন আমার মাথার উপর, আমার দেহের শীর্ষ বিন্দুর উপর! তাঁর মৃত্যুর কারণ নিয়ে কোন এক সময় শোনা যাচ্ছিলো নানা কথা, নানা গুজব! কেউ কেউ বলেন, ভুল আর নকল ঔষধ সেবন করার কারণে তাঁর অকাল মৃত্যু হয়েছিলো। কারো কারো মতে, রূপবতী উপ-পত্নী তাই নিয়াং-এর প্রতি তীব্র আসক্তি আর অতিরিক্ত যৌনতার কারণেই তাঁর মৃত্যু এসেছিলো অকালে! আবার এমনও মানুষ আছে, যারা বলেন হুয়াং ফু ফুরেন ষড়যন্ত্র করেছিলেন, রাজ ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য!
তাই তিনি গোপনে গোপনে তাঁর নিজ পুত্রের মদের পেয়ালায় বিষ ঢেলে দিয়েছিলেন! তবে আমার নিজেরও একটা বিবেচনা আছে, আর আমি শুধুমাত্র সেটাকেই সঠিক মনে করি। আমার বিশ্বাস উদ্বিগ্নতা, আতঙ্ক আর মাত্রাতিরিক্ত কামাকাঙ্ক্ষা মিলে তৈরী করেছিলো একটা প্রাণঘাতী দড়ি! এমন দড়ি যে কোন সময়, যে কোন মানুষের গলায়ই ফাঁস হয়ে এসে লাগতে পারে, করতে পারে প্রাণনাশ, তাকে নিয়ে যেতে পারে নরকের অতলে! আমার বিশ্বাস বাবা মারা গেছেন তাঁর আপন হস্ত-যুগলের দ্বারা! তাঁর নিজের হাত দু’টো দিয়ে তিনি নিজেই টান টান করে টেনে ধরে ছিলেন গলায় লাগানো ঐ দড়ি দিয়ে তৈরী করা ফাঁস!
গ্রীষ্ম কাল আসার পর আমি দেখতে পেয়েছি আমার সম্রাট পিতার বিশাল কালো রঙের ঘামে ভেজা লোমশ হাতকে, বেশ কয়েক বার! ওটা আমার দৃষ্টি গোচর হয়েছিলো বিলাস কেন্দ্র প্রাসাদে রাজ দরবারে বসার সময়! মনে হচ্ছিলো হাতটা যেন এক টুকরো মেঘের মতো ভেসে যাচ্ছে মোটা পুরু কোমরবন্ধ আর উঁচু টুপি সমেত রাজ দরবারের আনুষ্ঠানিক পোশাক পরিহিত উচ্চ পদস্থ রাজ সভার সদস্যবৃন্দের উপর দিয়ে। হাতটার মধ্যে থাকা কাপড়ের দড়িটার উপরের পৃষ্ঠ পূর্ণ হয়ে আছে ছত্রাক আর পতঙ্গের পাড়া কালো রঙের ডিমে! বাতাসের মধ্যে দিয়ে শোঁ শোঁ বাঁশি বাজানোর মতো আওয়াজ করে ওটা দ্রুত ছুটে আসছিলো আমার দিকে!

ওটা আরও বেশি দেখা দিতো আমার রাতের স্বপ্নের ঘোরের মধ্যে। আমি স্বপ্নে দেখতাম আমার সম্রাট পিতার হাতটা আলতো স্পর্শে বুলিয়ে যাচ্ছে তাঁর আরেক জন পুত্রের কপাল। আর সে হচ্ছে তাঁর জেষ্ঠ্য পুত্র তুয়ান ওয়েন! আমি সত্যিই দেখেছি, আমার সম্রাট পিতার হাতে ধরে থাকা স্বর্ণের তৈরী সুঁচালো কাঁটাটি! যেটা দিয়ে তিনি তুয়ান ওয়েনের কপালে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে লিখেছিলেন চীনা ভাষার দু’টি অক্ষর “সিয়ে ওয়াং”, যার অর্থ ‘সিয়ে দেশের রাজা’!
“তুমি সত্য নও!”, সম্রাট পিতা বলেছিলেন!
পিতা আরও বলেছিলেন এরকমই আরেকটা কথা : সত্যিকারের সিয়ে সম্রাট হচ্ছে জেষ্ঠ্য পুত্র তুয়ান ওয়েন!

আমাকে জানানো হয়েছে যে, তুয়ান ওয়েন ইতিমধ্যেই ফিন চৌ-তে পালিয়ে গেছে। সে একটা শবাধারের মধ্যে লুকিয়ে রাস্তার তল্লাশী চৌকিগুলোতে থাকা নিরাপত্তা প্রহরীদের চোখ ফাঁকি দিতে পেরেছে! ঐ শবাধারটি ছিলো নীল গঞ্জ জেলা-র জেলা প্রশাসক লি আন-এর, যে হঠাৎ করেই মারা গেছে। শবাধার বাহকেরা লি আন-এর কফিনটি কবর দেয়ার জন্য বহন করে নিয়ে যাচ্ছিলো ওর পৈতৃক নিবাস ফিন চৌ শহরে। লোকজন আমাকে জানিয়েছে যে, তুয়ান ওয়েন নাকি কফিনের মধ্যে মৃত দেহটির নীচে শুয়ে শুয়েই পৌঁছে গিয়েছিলো ফিন চৌ শহরে!

ফিন চৌ পৌঁছানোর মানেই হচ্ছে পশ্চিম অঞ্চলের সুবাদার চাও ইয়াং-এর একক কর্তৃত্বাধীন এলাকায়, ঐ সুবাদারের দেয়া নিরাপত্তার ছায়ার মধ্যে পৌঁছানো! তুয়ান ওয়েনের প্রতি চাও ইয়াং-এর বরাবরই একটা প্রগাঢ় স্নেহের টান বিদ্যমান ছিলো। একটা সময় চাও ইয়াং তুয়ান ওয়েনের পক্ষে জোর তদবির করেছিলো, চারটি সামন্ত রাজার পদের মধ্যে একটি পদ যেন তুয়ান ওয়েন-কে দেয়া হয়! এটা প্রায় নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, তুয়ান ওয়েন এখন পশ্চিম সুবাদারের সরকারি বাস ভবনের মধ্যেই অবস্থান করছে, আর বসে বসে যেন নিজের ক্ষত স্থানগুলো জিহবা দিয়ে লেহন করছে! যা হোক শেষ পর্যন্ত সে খুঁজে পেয়েছে তুলনা মূলকভাবে বেশ নিরাপদ বড় একটা গাছের ছায়া!

আমি এবং আমার মাতা মং ফুরেন দু’জনেই আছি একটা বিরক্তিকর উদ্বিগ্নতার মধ্যে! আমার মাতা পরিষ্কার মাথায় খুব সচেতনভাবেই উপলব্ধি করতে পারছেন যে, তুয়ান ওয়েনের এই রকম চলে যাওয়াটা হয়েছে বিশাল সিয়ে রাজ প্রাসাদের জন্য একটা অত্যাসন্ন মারাত্মক সমস্যার পূর্বাভাস! এক গাদা বিরতিহীন অভিযোগমূলক কথা বলার পর, তিনি প্রধানমন্ত্রী ফং আও-কে জরুরি ভিত্তিতে প্রাসাদে তলব করলেন, তার সাথে গোপনে পরামর্শ করার জন্য। মং ফুরেন বললেন, “হয় মাছ মরবে, না হয় জাল ছিড়বে! কোনভাবেই চাও ইয়াং এবং তুয়ান ওয়েন-কে একই পায়জামা পরতে দেয়া যাবে না! তুয়ান ওয়েন-কে শাস্তি পেতেই হবে। সামনে আর অন্য কোন পথ নাই, ওকেসহ পশ্চিম সুবাদারের বাসভবন গুড়িয়ে দিতে হবে!”

প্রধানমন্ত্রী ফং আও বেশ তাড়হুড়া করেই মুক্তা ছায়া প্রাসাদে চলে আসলেন। প্রধানমন্ত্রীর চিন্তা ভাবনার সাথে মঙ ফুরেন-এর চিন্তা ভাবনার কোন মিল নাই। সব চেয়ে আশ্চর্য আর অদ্ভুত ব্যাপার হলো ওনারা যতই আলোচনার গভীরে ঢুকছিলেন, আমি যেন ততই হয়ে উঠেছিলাম শুধু পাশে বসে থাকা একজন দর্শক মাত্র! হঠাৎ করেই আমার মনে পড়লো, অনেক বছর আগে ইয়েন লাঙ-কে সাথে নিয়ে ফিন চৌ শহর ভ্রমণের ঘটনাটা! মনে পড়ছে, বাৎসরিক লা পা উৎসবের আনন্দ ঘন পরিবেশ, রাস্তায় চলা উৎসব মুখর মানুষের ভীড়! আমি যেন চোখের সামনে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি দক্ষিণ অঞ্চল থেকে বাধা হীন সাবলীল ভাবে ভেসে আসছে দড়াবাজী খেলার দলটি! দড়াবাজ খেলোয়ার শিল্পীরা বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসেছে মানুষের ভীড়ের মাঝ খানে! তক্তা, কেতলি, ব্যাট, বারকোশ, গাছের বিশাল গুড়ি, ভারী প্রসস্থ চাকা এবং পুতুল নাচের পুতুল ইত্যাদি নানা ধরনের খেলা দেখাবার যন্ত্রপাতি ও উপকরণ খোলা মাঠের মধ্যে স্তুপ করে রাখা হয়েছে। এটা যেন একটা সুন্দর আর সমৃদ্ধ অলীক প্রত্যক্ষণ! এরপর আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো খুব উঁচুতে টাঙ্গানো ঐ দড়িটা! ওটা যেন একটা রঙ ধনু, টানানো আছে মুক্তা ছায়া প্রাসাদ এবং ফিন চৌ-এর মধ্য খানে! আমি দেখতে পাচ্ছি সাদা জামা সাদা পায়জামা পরিহিত একজন দড়াবাজ শিল্পীকে! মুখে আছে মৃদু হাসি, দু’বাহু প্রসারিত করে সামনের দিকে এগিয়ে গেলো তিন পা, পিছিয়ে আসলো এক পা, কি রকম বিপজ্জনক তার অনন্য দক্ষতা! আর সেই রকমই অনন্য সুন্দর তার ভঙ্গি! আমি দেখতে পাচ্ছি সমেবত হওয়া মানুষের উল্লাস ধ্বনির মধ্যে হঠাৎ করেই ঐ মানুষটা ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো। আমি চিনতে পারলাম, ও যে আমারই আত্মার একটা ভিন্ন প্রতি রূপ এবং আরেকটা রক্ত মাংসের শরীর!

“পশ্চিম সুবাদার চাও ইয়াং-এর কর্তৃত্বের মধ্যে রয়েছে দক্ষ সাহসী বিশ হাজার জওয়ান এবং সেনা কর্মকর্তাদের একটা চৌকস সেনা দল। যদি রাজ দরবার সিদ্ধান্ত নেয় ফিন চৌ-তে সামরিক অভিযান চালিয়ে ওদের দমন করার, তবে আমার ভয় হয়, সেটা হবে খুবই কঠিন কাজ।”, ফং আও বললেন, “আট জন বড় সামন্ত রাজা-র উপর চাও ইয়াং-এর আছে বিশাল প্রভাব। এক দিনের শীতে কোন নদীতেই তিন হাত গভীর বরফ জমে না! প্রয়াত সম্রাট, তাঁর জীবদ্দশাতেই চাও ইয়াং-এর মধ্যে বিপদের চিহ্ন দেখতে পেয়েছিলেন। কিন্তু সেটাকে বিনাশ করার মতো সামর্থ্য তাঁর ছিলো না। বর্তমানে রাজ দরবার এবং আমজনতার উপর অভ্যন্তরিণ সমস্যা আর বৈদেশিক হুমকির চাপ দু’টোই বিদ্যমান। মাত্র কিছু দিন আগে ফসল পূজার সমাবেশ-কে দমন করা হয়েছে। সীল মোহর বিভাগ আর নাশপাতিপাতা জেলা, এই সারিবদ্ধ এলাকাগুলোতেও দেখা দিয়েছে বিশৃঙ্খলা আর বিদ্রোহ! পদাতিক বাহিনী একত্রে জড়ো করে ফিন চৌ-এর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে যাওয়াটা শুধু কাগজে কলমেই সম্ভব, বাস্তবে নয়!” ফং আও এই কথাগুলো বলে একটা অস্পষ্ট দ্ব্যর্থ বোধক হাসি হাসলেন! তিনি বেশ কয়েক বার তার প্রজ্ঞা ভরা বুদ্ধি দীপ্ত চোখের দৃষ্টি দিয়ে দ্রæত পর্যবেক্ষণ করে নিলেন মঙ ফুরেন-এর অবয়বের অভিব্যক্তি! সব শেষে তার চোখের দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো মুক্তা ছায়া প্রাসাদ-এর কাঠ-খোদাই করে ফুলের নকশা কাটা জানালার পাল্লা গুলোর দিকে! একটা মাছি উড়ে নাচানাচি করছিলো ঐ দিকে। ফং আও এমন কথা বললেন, যার অর্থ দু’রকমই হতে পারে, তিনি বললেন, “জাঁহাপনা এবং বেগম সাহেবা! মাছি উড়ে এসে গায়ে বসলে আপনারা কি বিরক্ত হন না? মাছি বিরক্ত করলে জানালা খুলে তাকে বাইরে উড়ে যেতে দেয়াই সর্বোত্তম কাজ! তাকে থাবড়া দিয়ে মারার চেষ্টা করাটা মোটেও কোন ভালো পন্থা নয়!”

“যদি সে উড়ে যেতে না চায়! যদি সে আবারও উড়ে এসে তোমার মুখের উপর বসতে চায়?”, মঙ ফুরেন বললেন।
“তাহলে তো দরকার মাছি মারার সবচেয়ে ভালো হাতল ওয়ালা জালিটা!”, ফং আও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “কিন্তু আমি তো দেখতে পাচ্ছি না সেই সবচেয়ে ভালো হাতলওয়ালা মাছি মারার জালিটা! মনে হয় একটা চোখ খোলা রেখে আরেকটা চোখ বন্ধ করে মাছিটাকে যেখানে খুশী সেখানে যেতে দেয়াই ভালো!”

“কতো বড় জ্ঞানী আর মাথা ভরা কৌশলী বুদ্ধির মানুষ হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী ফং আও!”, উত্তেজিত মঙ ফুরেন-এর রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটলো। তাঁর দুঃখ ভারাক্রান্ত হতাশ অবয়বে হঠাৎ করেই ফুটে উঠলো এক চিলতে বিষ মাখা শীতল হাসি! আমি দেখতে পেলাম, তিনি গোলাপ কাঠের গোল জল চৌকিটার উপরে থেকে একটা পান্না পাথরের তৈরী ছোট পেয়ালা হাতে তুলে নিয়ে সেটা ছুঁড়ে মারলেন ফং আও-কে লক্ষ্য করে!

“তুমি চাচ্ছো, আমরা সবাই প্রাসাদের মধ্যে বসে থেকে মৃত্যু আসার জন্য প্রতিক্ষায় থাকি?”, মঙ ফুরেন তাঁর আসন থেকে লাফিয়ে উঠলেন! ফং আও-এর নাক বরাবর আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে বললেন, “তোমাদের মতো ভীতু কাপুরুষদের কথার উপর আমার কোন আস্থা নাই! আমার শ্বাশুড়ির মতোই আমি তোমাদেরকে কঠিন চাপের মধ্যে রাখবো!”
অপমানিত ফং আও, তার জামার হাতাটা দিয়ে লাল হয়ে ফুলে ওঠা মুখটাকে ঢেকে ফেললেন। তিনি নিরব হয়ে গেলেন, একটা কথাও বললেন না! মঙ ফুরেন-এর মুখে যা আসে তা-ই, অশ্রাব্য কথাবার্তা শুনে আমি স্তম্ভিত হয়ে একে বারে বোকা বনে গেলাম! এই প্রথম বারের মতো রাজ দরবারের কোন মন্ত্রীর সামনে তিনি তাঁর রাস্তা ঘাটের নীচু শ্রেণীর মানুষের মতো বাজে অভ্যাসের বহিঃপ্রকাশ ঘটালেন। কোন মানুষের যদি ঠোঁট দু’টো না থাকে, তবে ঠান্ডা হিমেল বাতাসের ঝাপটা তার দাঁতে এসে লাগবেই! আমার মনে হচ্ছে মঙ ফুরেন তাঁর ঠোঁট জোড়া খুইয়ে মুখের লাগাম হারিয়ে ফেলেছেন। আসলে আমাদের ভাগ্যের পরিণতি তো একই দিকে যাচ্ছে, আর সে কারণেই মঙ ফুরেন আমার মতোই ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে আছেন! (চলবে)