শামীম আহসান মহাবুল্লাহ : গল্পের নাম ‘হোং ফেন’, আমি যার ভাবার্থ করেছি ‘লাল প্রসাধনী’! এই গল্পটাকে ছোট গল্পই বলা যায়, তবে গল্পটা আকারে বেশ বড়। গল্পের লেখক সু থোং, এই নামটি লেখকের ছদ্মনাম। ‘লাল প্রসাধনী’ গল্পের প্রেক্ষাপটের সময়কাল হচ্ছে গত শতাব্দীর পঞ্চাশ দশক। গল্পটার শুরু করছি, পাঠকদের অনুরোধ করছি গল্পটা পড়ার জন্য!

(পূর্ব প্রকাশের পর)

পরে শুরু হয়েছিলো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। বৃষ্টির শব্দের মধ্যে ছিউ ই বিছানায় এ-পাশ ও-পাশ করছিলো। ভাবছিলো গতরাতেও তো ওর পাশে বালিশে মাথা রেখে শুয়েছিলো লাও ফু! শুধু মাত্র এক রাতের ব্যবধানে যেন গালে মাখার লাল প্রসাধনীর গুড়া বাতাসের তোড়ে উড়ে চলে গেছে দেয়ালের বাইরে! ছিউ ই ভাবছে, এই জগতটা বাস্তবিকই অদ্ভুত আর দ্রুত পরিবর্তনশীল, যে মানুষটা জীবিত থেকে আজকের দিনটা কাটিয়েছে, সে জানে না তার জীবনে আগামীকাল কি ঘটনা ঘটতে পারে। কে ভাবতে পেরেছে, লাল রঙ্গ দালান-এর মেয়ে ছিউ ই এখন এসে ঢুকবে সন্ন্যাসীনি আশ্রমের ভিতরে?

অনেক দিন পর সিয়াও অ-র কানে এসেছিলো, মাথার অপূর্ব সুন্দর চুলগুলো কামিয়ে ছিউ ই-র সন্ন্যাসীনি হয়ে যাওয়ার ঘটনাটা। কোন এক দিন লাও ফু শ্রম অনুশীলন শিবিরে গিয়ে সিয়াও অ-র সাথে দেখা করলো। সে প্রথমেই যে কথাটা বললো, সেটা হচ্ছে, ছিউ ই প্রবেশ করেছে সন্ন্যাসীনিদের আশ্রমে। এ কথা শুনে সিয়াও অ খুবই অবাক হলো। সে ভেবেছিলো লাও ফু মজা করার জন্য এমন কথা বলছে। লাও ফু বললো, সত্যিই! আমিও অনেক দেরীতে এই ঘটনাটা জানতে পেরেছি। আমি ওর খোঁজে গিয়েছিলাম, সে আমার সাথে দেখা করে নাই! সিয়াও অ কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো, ওর চোখ লাল হয়ে এসেছে! খানিক ক্ষণ পর সিয়াও অ বললো, এমন কথা শুনে তো মনে হচ্ছে, তুমি ছিউ ই-কে খুব খারাপ ভাবে রেখেছিলে। তা না হলে, সে কখনও-ই এই পথে যেতো না! লাও ফু ভ্রæ কুঞ্চিত করে অপ্রসন্ন অবয়বে বললো, ব্যাখ্যা করা কঠিন, আমার দিকটাও তো দেখতে হবে, আমারও তো আছে অনেক সমস্যা, অনেক অক্ষমতা। সিয়াও অ বললো, ছিউ ই তো ছিলো তোমার যথেষ্ট অনুরক্ত। পান্নার মেঘ মহল্লায় এমন মায়া-মমতায় ভরা হৃদয়ের মেয়ে পাওয়া দুস্কর। লাও ফু, তুমি কি বুঝতে পারছো? লাও ফু বললো, আমি বুঝতে পারছি, এখন শুধুমাত্র সিয়াও অ-ই পারে, অর্থাৎ তুমি-ই পারো ওকে বুঝিয়ে নিয়ে আসতে, ছিউ ই তোমার কথা শুনবে। সিয়াও অ একটা তিক্ত হাসি হেসে বললো, লাও ফু, তুমি আবারও কাণ্ডজ্ঞানহীন হয়ে গেছো। আমি কি ভাবে এখন এখান থেকে বের হবো? এখান থেকে বের হতে আমার অন্তত আরও ছয় মাস লাগবে। এমনকি আরও বেশি সময় লাগতে পারে, যদি শ্রম অনুশীলনে আমার ফলাফল ভালো না হয়! ইদানীং আমি আরও খারাপ করা শুরু করেছি, এখন প্রতিদিন কেবল মাত্র বিশটা পাটের বস্তার মুখ সেলাই করে শেষ করতে পারছি, আমার তো নিজেরই মরে যেতে ইচ্ছে করে!

ওরা দু’জন চুপ করে বসে আছে, কোন কথা বলছে না, ওরা বসেছে প্রহরা মিনারের নীচে থাকা দু’টি পাথরের খন্ডের উপর। বাইরে থেকে আসা অতিথিদের দেখা করার বেধে দেয়া সময় হচ্ছে আধা ঘন্টা। সিয়াও অ মুখ তুলে তাকালো প্রহরা মিনারে দাঁড়িয়ে থাকা সৈনিকটির দিকে। তারপর সে লাও ফু-কে বললো, সময় তো প্রায় শেষ, লাও ফু, তুমি আমার সাথে অন্য কোন কথা বলো না! লাও ফু প্রশ্ন করলো, তুমি কি কথা শুনতে চাও? সিয়াও অ মাথা নীচু করে দেখতে লাগলো নীচে থাকা পাথর খন্ডটাকে। যা খুশী তাই বলো না একটু! আমি তো সবই শুনতে আগ্রহী! লাও ফু নড়াচড়া না করেই একটানা চেয়ে রইলো সিয়াও অ-র সূচালো চিবুকের দিকে। তারপর হাত প্রসারিত করে ওর চিবুকে হালকা ভাবে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো, সিয়াও অ, তুমি ভিষণ শুকিয়ে গেছো! হতভাগ্য তুমি! সিয়াও অ স্কন্ধ ঝাঁকি দিয়ে সঙ্কুচিত হলো, সে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে হালকা স্বরে বললো, আমি হতভাগা নই! আমার নিজের দোষেই তো হয়েছে আমার এই অবস্থা, আমি কোন অভিযোগ করছি না, কাউকে দায়ী করছি না!

লাও ফু নিয়ে এসেছে আরেকটা খারাপ খবর। লাল রঙ্গ দালান-এর মাসী এরই মধ্যে পাড়া ছেড়ে চলে গেছে। সেই সাথে ওখানে সিয়াও অ-র রেখে আসা জিনিস পত্রগুলো যেন ধুয়েমুছে পরিষ্কার করে সাথে নিয়ে গেছে! সিয়াও অ দুঃখ ভরা দৃষ্টি নিয়ে লাও ফু-র দিকে তাকালো। সে বললো, অল্প কিছু জিনিসও কি রেখে যায় নাই? লাও ফু একটু ভেবে বললো, আমি দরজার সামনে পড়ে থাকা একটা লাল প্রসাধনীর রুজ-বাক্স তুলে এনেছি। সম্ভবত তুমিই ওটা ব্যবহার করতে। আমি ওটা বাড়ীতে নিয়ে রেখে দিয়েছি। সিয়াও অ হাঁ সূচক মাথা নেড়ে বললো, একটা রুজ বাক্স! ঠিক আছে, তুমি ওটা আমার জন্য রেখে দিও! (ক্রমশ)

৯গ.
বাস্তবে যা হয়েছিলো, সেটা হচ্ছে, সিয়াও অ খুব শীঘ্রই শ্রম অনুশীলন শিবিরের জীবনের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছিলো। সে হচ্ছে পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়ানোর শক্তিশালী সক্ষমতা সম্পন্ন একটা মেয়ে। পাটের বস্তা সেলাই করার কাজে উদ্যম আর গতি আসার কারণে ওর এখন রাতের ঘুম ভালো হওয়া শুরু করেছে। সিয়াও অ-র পুরনো স্নায়ুবিক দৌর্বল্য রোগ কোন চিকিৎসা ছাড়াই ভালো হয়ে গেছে। রাতে ঘুমাবার সময় রুই ফং-এর হাত প্রায়ই সিয়াও অ-র লেপের ভিতরে প্রবেশ করে। সিয়াও অ-র বুক আর পায়ের রানে হাত বুলায়, চিমটি কাটে! সিয়াও অ রাগ করে না। সে শুধু রুই ফং-এর হাতটা সরিয়ে দেয়। সে নিজেকে সামলে নিয়ে ঘুমিয়ে যায়। কোন এক রাতে সে স্বপ্ন দেখলো, একটা বড় লোমশ ঘর্মাক্ত হাত, স্বপ্নের মধ্যে —– যেটা ধীরে ধীরে অতিক্রম করে যাচ্ছিল সিয়াও অ-র শরীরটাকে। সিয়াও অ চমকে উঠলো, ওর শরীর ভিজে গেছে ঘামে! আগে তো ছিলো রুই ফং-এর হাত, যা কিনা এ রকম সমস্যা তৈরী করতো, এবার সিয়াও অ-র রাগ হলো, সে রুই ফং-এর হাতের পিঠে জোরে চিমটি কাটলো, সে বললো, আমার গায়ে হাত দিও না। কেউ-ই যেন আমার শরীরে হাত না দেয়!

পাটের বস্তার কারখানায় সিয়াও অ-র চোখের সামনে প্রায়ই ভেসে উঠে ঐ পুরুষ মানুষের হাতটা! কখনও কখনও ওটা শূন্যে ভেসে এক জায়গায় স্থির হয়ে থাকে। কখনও কখনও তা ভেসে আসে অলীক প্রত্যক্ষণে। এটা যেন একটা মাছ, যে কিনা খুব হালকা ভাবে সিয়াও অ-র দেহের স্পর্শ কাতর অংশে ঠোকর দেয়। সিয়াও অ-র মুখমণ্ডল লাল হয়ে উঠে, কান লাল হয়ে যায়, এ রকম চেহারা নিয়েই সিয়াও অ পাটের বস্তাগুলোর মুখ সেলাই করতে থাকে। সে জানে না, ওটা কার হাত! সে জানে না, এর অন্তর্নিহিত অর্থ কি, শুধু অস্পষ্টভাবে অনুভব করে যে, ওটা হচ্ছে তার আগের দিনের জীবনের এক ধরনের ছায়া।

১৯৫২ সালের বসন্ত কালে, সিয়াও অ-কে অবগত করা হলো যে, শ্রম অনুশীলনের মাধ্যমে নিজেকে বদলে নেয়ার কার্জক্রমের মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে, সে সাফল্যের সাথে শ্রম অনুশীলন শেষ করেছে, সে এখন শ্রম অনুশীলন শিবির ছেড়ে শহরে যেতে পারবে। এই খবরটা শোনার পর সিয়াও অ হত বিহ্বল কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে পড়লো। ওর শুকিয়ে যাওয়া মুখটা মূহুর্তের মধ্যেই আরও ফ্যাকাশে হয়ে উঠলো, যার কোন তুলনা নাই! মহিলা কর্মকর্তা প্রশ্ন করলেন, তুমি কি এখন থেকে বাইরে যেতে চাচ্ছো না? সিয়াও অ বললো, না তা নয়, আমি আসলে জানি না, এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর আমার কি হবে, কি করবো আমি! খানিকটা ভয় করছে আমার! সিয়াও অ-র কথা শুনে মহিলা কর্মকর্তা বললেন, তুমি এখন স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে নতুন করে জীবন শুরু করতে পারো, আমরা তোমাকে কাজ-এর ব্যবস্থা করে দিবো, তুমি তোমার শ্রম মাতৃভ‚মির কল্যাণে নিবেদন করতে পারবে। মহিলা কর্মকর্তা একটা ছক কাটা তালিকা বের করে বললেন, এখানে আছে বেশ কয়েকটা কারখানার নাম, যে কারখানা গুলোর নারী কর্মী দরকার, ওরা খুঁজছে নারী কর্মী। তুমি দেখ, এর মধ্যে কোনটা তোমার পছন্দ হয়? সিয়াও অ ঐ তালিকাটা হাতে নিয়ে দেখলো, সে বললো, আমি বুঝি না, যে কারখানাটায় সবচেয়ে হালকা কাজ আছে, আমি সেটাতেই যেতে চাচ্ছি। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মহিলা কর্মকর্তা বললেন, মনে হচ্ছে তোমাদের মতো মানুষদের মানসিকতা পরিবর্তন করার কাজটা হচ্ছে খুবই কঠিন! ঠিক আছে, তুমি যেহেতু হালকা কাজ করতে চাচ্ছো, তাই আমার মনে হয় তুমি কাঁচের বোতল তৈরীর কারখানায় যাও! তোমার মতো মানুষ, যে কিনা খেতে চায় ভালো, কিন্তু কাজের বেলায় অলস, তার জন্য বোতলের কারখানায় বোতল বাছাই করার কাজই সবচেয়ে উত্তম হবে! (ক্রমশ)

লাল প্রসাধনী! (১০অ)
চাঁদের খেলা সন্নাসীনি আশ্রমে কাটানো দিনগুলোর প্রথম দিকে, আগেকার সময়ের অভ্যাস মতোই ছিউ ই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুখে প্রসাধনী মেখে সাজগোছ করতো। সে আয়নায় ওর চেহরাটা লক্ষ্য করেছে, দিন দিন যেন ওর অবয়বে এসেছে একটা নীলাভ সাদা আভা। ঠৌঁটের কোণায় দেখা দিয়েছে একটা জ্বর-ঠোসা। সে হাত বুলায় ওর সবচেয়ে প্রিয় মাথার চুলে, সে ভাবছে এই চুল গুলো খুব শীঘ্রই ওর দেহ থেকে আলাদা হয়ে যাবে। আর সে পরিণত হবে একটা লাবণ্যহীন মেয়ে মানুষে। এ কথা চিন্তা করেই ছিউ ই যেন আতঙ্কিত হয়ে উঠলো।

বয়স্ক সন্ন্যাসীনি একটা শুভ দিন বেছে নিলেন ছিউ ই-র মাথা কামিয়ে ওকে একটা বৌদ্ধ ধর্মীয় নাম প্রদান করার জন্য। কাঁচি এবং খুরটা লাল কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে একটা টেবিলের উপর রাখা হয়েছে, নারী-সন্নাসী এক গামলা পরিষ্কার পানি নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে। ছিউ ই টেবিলের উপর রাখা খুর ও কাঁচির দিকে তাকিয়ে, দুই হাত দিয়ে শক্ত করে নিজের চুল গুলো মুঠায় নিয়ে ধরলো। হঠাৎ করেই ছিউ ই তী²স্বরে চিৎকার করে উঠলো। আমি মাথার চুল কামাবো না। আমি আমার চুলকে খুব ভালোবাসি। বয়স্ক সন্ন্যাসীনি বললো, জগতের প্রতি যখন তোমার আছে এতোই মায়া যা তুমি ছিন্ন করতে পারছ না, তা হলে তো তোমার এখানে আসা ঠিক হয়নি, তুমি এখনই এখান থেকে চলে যাও। ছিউ ই বললো, আমি মাথা কামাবো না, আমি যাবোও না এখান থেকে। বয়স্ক সন্ন্যাসীনি বললেন, এ ভাবে তো হবে না। চুল থাকলে বুদ্ধ থাকবে না, বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত হলে চুল থাকবে না। তোমাকে অবশ্যই বেছে নিতে হবে যে কোন একটাকে। রাগে ছিউ ই-র চোখ লাল হয়ে উঠলো, সে পা দিয়ে মাটিতে আঘাত করতে করতে বললো, ভালো তোমার আর আমাকে জোর করতে হবে না, আমি নিজেই কাটবো আমার চুল। ছিউ ই কাঁচিটা এক হাতে নিলো, অন্য হাত দিয়ে মুট করে চুলগুলো ধরলো, তারপর চট করেই কেটে ফেলে দিলো, ওর লম্বা চুল গুলো বাতাসের ঝাপটায় ভেসে ভেসে উড়ে গিয়ে ছড়িয়ে পড়লো আশ্রমের ভিতরে। ছিউ ই কাঁদতে কাঁদতে শূন্যে ভেসে যাওয়া চুল গুলো ধরতে চেষ্টা করলো।

(১০-ই)
ছিউ ই -র মাথা কামিয়ে ফেলার তিন দিন পর চাঁদের খেলা আশ্রমের কথা শুনে সেটা খুঁজে বের করলো লাও ফু। ঐ দিন আগর বাতি জ্বালানোর দিবস ছিল না, তাই আশ্রমের সদর দরজা বন্ধ ছিলো। লাও ফু খুব লম্বা সময় ধরে দরজায় কড়া নাড়লো। দরজা খুলতে আসা মানুষটি ছিলো ছিউ ই। ছিউ ই যখন দেখলো যে কড়া নাড়া মানুষটি হচ্ছে লাও ফু, তখন সে খুব দ্রুত দরজা বন্ধ করে দরজার উপরের ছিটকারি লাগিয়ে দিলো। সে লাও ফু-কে উদ্দেশ্য করে বললো শুধু একটা কথা : ভাগো এখান থেকে! লাও ফু প্রথম দেখায় ছিউ ই-কে চিনতে পারে নাই। সে যখন সচেতন হলো তখন ইতিমধ্যেই অনেক দেরী হয়ে গেছে, ছিউ ই উঠানে গিয়ে কোন একজনকে বললো, দরজা খুলো না, বাইরে একটা চোর এসেছে। লাও ফু ক্রমাগত কড়া নেড়ে চললো, ভেতর থেকে কারোই কোন সাড়া পাওয়া গেলো না। সে অনিচ্ছা সত্তে¡ও চিন্তা করলো, ঘুরে আশ্রমের পিছনের দিকে যাবে, সে ভাবলো দেয়াল টপকে উঠানে ঢুকবে! কিন্তু দেয়ালটা যে লাও ফু-র সাপেক্ষে বেশ উঁচু! দেয়াল টপকানো, জানালা দিয়ে ভিতরে ঢুকা, এমন কাজগুলো লাও ফু কখনও করে নাই! তাই লাও ফু কড়া নেড়ে চললো ক্রমাগত। একই সাথে সে প্রাণপণে দরজাটাকে ধাক্কা দিচ্ছিলো। তার কানে আসলো, ধীরে ধীরে দরজার হুড়কা সরছে, আশ্রমের দরজা একটু ফাঁক হলো। লাও ফু ভিতরে কি হচ্ছে সেটা দেখার চেষ্টা করলো। সে নিজের মাথাটা ঢুকিয়ে দিলো ঐ ফাঁকটার মধ্যে দিয়ে, ওর ঘাড় ও শরীর আটকিয়ে থাকলো দরজার বাইরে। ছিউ ই ঠিক দরজার পিছনেই দাঁড়িয়ে আছে, সে শীতল দৃষ্টিতে লাও ফু-র মাথাটার দিকে তাকালো। লাও ফু বললো, ছিউ ই, তুমি আমার সাথে ফিরে চলো। ছিউ ই দুই হাত দিয়ে ওর নিজের কামানো মাথাটা ঢাকলো, এটা ছিলো হয়তো ওর অবচেতন মনের একটা ক্রিয়া। লাও ফু সর্বাত্মক চেষ্টা করলো ওর শরীরটাকে দরজার ফাঁক দিয়ে ভিতরে ঢুকাতে। সে ভাবলো ঘাড় সঙ্কুচিত করে ভিতরে ঢুকবে। লাও ফু বললো, ছিউ ই, তুমি দরজাটা খুলো, আমার অনেক কথা আছে তোমাকে বলার, তুমি মাথার চুল কেনো কামিয়ে ফেলেছ? দরজার ফাঁক দিয়ে লাও ফু, ওর একটা হাত ভিতরে ঢুকিয়ে ছিউ ই-র কালো রঙের স্কার্ট টেনে ধরলো। ছিউ ই যেন গরম তেলে ছ্যাঁকা খেয়ে লাফ দিয়ে উঠার মতোই লাফিয়ে উঠলো! সে বললো, তুমি আমাকে স্পর্শ করো না।

লাও ফু দুঃখ ভারাক্রান্ত দৃষ্টিতে ছিউ ই-র দিকে তাকালো, ছিউ ই তখনও মাথাটা ঢেকে রেখেছে, সে তীক্ষ্ণ স্বরে চেঁচিয়ে উঠলো, তুমি মাথার দিকে তাকিয়ো না। দরজার ফাঁক দিয়ে ভিতরে ঢুকানো লাও ফু-র হাতটা প্রাণপণে চেষ্টা করলো ছিউ ই-র একটা হাত টেনে ধরার জন্য। দরজার পাল্লায় ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ হলো, শব্দটা যেন ছিলো লাও ফু-কে বহিষ্কার করার নির্দেশক। এমন সময় ছিউ ই হঠাৎ করেই দরজার পিছন থেকে একটা কাঠের ডান্ডা তুলে নিলো, সে কাঠের দন্ডটা মাথার উপর তুলে লাও ফু-কে নির্দেশ করে চিৎকার করে বললো, বেরিয়ে যাও, ভাগো এখান থেকে, তুমি যদি আবার আসো তবে লাঠির বাড়ি দিয়ে তোমাকে মেরেই ফেলবো! (চলবে)