শামীম আহসান মহাবুল্লাহ

গল্পের নাম ‘হোং ফেন’, আমি যার ভাবার্থ করেছি ‘লাল প্রসাধনী’! এই গল্পটাকে ছোট গল্পই বলা যায়, তবে গল্পটা আকারে বেশ বড়। গল্পের লেখক সু থোং, এই নামটি লেখকের ছদ্মনাম। ‘লাল প্রসাধনী’ গল্পের প্রেক্ষাপটের সময়কাল হচ্ছে গত শতাব্দীর পঞ্চাশ দশক। গল্পটার শুরু করছি, পাঠকদের অনুরোধ করছি গল্পটা পড়ার জন্য!

(পূর্ব প্রকাশের পর)

লাল প্রসাধনী! (10-C)
লাও ফু হতাশ হয়ে চাঁদের খেলা আশ্রমের সদর দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে রইলো। সে শুনতে পেলো, কান্নার শব্দ, ছিউ ই কিছুক্ষণ হু হু করে কাঁদলো। লাও ফু বললো, ছিউ ই, তুমি এক গুঁয়েমী করো না, আমার সাথে ফিরে চলো, যদি তুমি বিয়ে বসতে চাও সেটাও হবে, আমরা বিয়ে করবো। তুমি যা চাইবে সেটাই হবে। কিন্তু ছিউ ই এরই মধ্যে ঠক ঠক শব্দ করে হেঁটে চলে গেছে। লাও ফু যেন মোকাবিলা করলো একটা মরণ নীরবতাকে, যেখানে শুধু আছে ঘন বাঁশ বন থেকে আসা শন শন শব্দ, দূরে গ্রামে একটা বাড়ী থেকে একটা কুকুর একটু পর পর ডেকে চলেছে। চাঁদের খেলা আশ্রমটি শহর থেকে দশ লি দূরে [চীন দেশে দূরত্বের একক হচ্ছে ‘লি’, এক লি সমান প্রায় আধা কিলোমিটার]। আর তাই এখানকার পারিপার্শ্বিক দৃশ্যাবলী ব্যস্ত শহরের মতো নয়। এই দিন লাও ফু মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো, ছিউ ই-র সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করার। তার মনে পড়লো, চাঁদের খেলা আশ্রমের দরজার ফাঁক দিয়ে মাথা ঢুকিয়ে ছিউ ই-র প্রতি বিনিত অনুনয় করার মূহুর্তগুলো, এ দৃশ্যটা তার জ্ঞান ও প্রজ্ঞাকে অপমান করেছে বলে তার মনে হলো। লাও ফু ভাবলো জেড পাথরের মতো সুদৃশ্য সুন্দরী মেয়ের কি অভাব আছে এ পৃথিবীতে? কি দরকার আছে প্রতিদিন ছিউ ই-র কথা চিন্তা করে সময় নষ্ট করার। ছিউ ই তো পান্নার মেঘ মহল্লার একটা পতিতা মেয়ে ছাড়া আর কিছু নয়!

লাল প্রসাধনী! (11-A)
১৯৫২ সালে লাও ফু-র বাপ-দাদার উত্তরাধীকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তির আয় থেকে প্রাপ্ত টাকার জোরে যাপন করা বিলাস বহুল জীবনে আসে আঘাত, আঘাতের অভিঘাত চূর্ণবিচূর্ণ করে দেয় সবকিছু, ফু পরিবারের স্থাবর সম্পত্তি সরকার হুকুম দখল করে বাজেয়াপ্ত করে। ভাড়া থেকে প্রাপ্ত বিপুল অঙ্কের টাকা যা ব্যাংকে গচ্ছিত ছিলো, আমানত হিসেবে, ব্যাংক সেই আমানত ফ্রিজ করে নিষিদ্ধ করেছে সঞ্চয়ী হিসাবের লেনদেন, লাও ফু-র খুব মন খারাপ, সে হয়ে গেছে তীব্র হতাশাগ্রস্ত, সারা দিন পড়ে থাকে বিদ্যুৎ কোম্পানির কার্যালয়ে, কাজের টেবিলের সামনে বসে বসে ঝিমায়, হাই তুলে। কোন একদিন ওর কাছে একটা টেলিফোন আসে, ফোনটা করেছে সিয়াও অ। সিয়াও অ লাও ফু-কে জানায় যে সে লেবার ক্যাম্প থাকে বেরিয়ে এসেছে। সে লাও ফু-কে বলে, লাও ফু যেন ওকে ছিউ ই-র কাছে নিয়ে যায়। ওর কথা শুনে লাও ফু বললো, ছিউ ই-কে খুঁজছো কেনো? সে তো আধা মরা হয়ে গেছে, তুমি বরং আমাকে খুঁজো, আমি এই লাও ফু শেষ বেলায় হলেও এখনও তো বেঁচে আছি!

বিদ্যুৎ কোম্পানির সদর দরজায় এসে লাও ফু দেখতে পেলো, সিয়াও অ ধীর পদক্ষেপে রাস্তা পেরিয়ে আসছে, সিয়াও অ-র পরনে আছে নীলাভ খাকি রঙের লিলেন কাপড়ের পোশাক, পায়ে আছে গোল কালো মুখের কাপড়ের জুতা, হাঁটতে হাঁটতে সে একবার তাকাচ্ছে ডানে একবার বামে, তার চোখের দৃষ্টিতে আছে এক বিশেষ ধরনের ভাষা, অবশ্য সিয়াও অ-র অঙ্গভঙ্গি দেখে রাস্তা দিয়ে চলাচল করা অন্যান্য পথচারীদের চেয়ে ভিন্ন কিছু বলে মনে হচ্ছে না। সিয়াও অ রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে লাও ফু-র দিকে তাকিয়ে একটা চমৎকার হাসি হাসলো, সিয়াও অ-কে দেখে লাও ফু-র প্রথমে যে কথাটা মনে হলো, সেটা হচ্ছে, সিয়াও অ আগের চেয়ে অনেক বেশী সুন্দর হয়েছে। লাও ফু-র হৃদয়টা যেন শিহরিত হয়ে কেঁপে উঠলো!

সিয়াও অ যেন কাকতালীয় ভাবেই উপস্থিত হয়েছে ঠিক দুপুরের খাবারের সময়। লাও ফু ওকে নিয়ে গেলো মানুষের ভীড়ে জমজমাট শহরের ফুড স্ট্রিটে। লাও ফু বললো, সিয়াও অ তুমি কি খেতে চাও, পশ্চিমা খাবার, নাকি প্রাচ্য দেশীয় খাবার? সিয়াও অ বললো, ওয়েস্ট্রান ফুডই ভালো। আমার খুবই খেতে ইচ্ছে করছে বিফ স্টেক, মার্টন স্টেক, মুরগীর রোস্ট, এরই মধ্যে দু’বছর কেটে গেছে, কোন ভালো খাবার খাওয়া হয়নি আমার। লাও ফু-র হাসির শব্দ সিয়াও অ-র কথাকে সমর্থন করলো। লাও ফু-র একটা হাত সুটের পকেটে যেন উদ্বিগ্ন হয়ে হাতরিয়ে বেড়াচ্ছে, টাকা তো বেশী নাই, হাতটা যেন নতুন পাওয়া টাকার আশায় ঘুরাঘুরি করছে পকেটের মধ্যে। লাও ফু-র পকেট দু’টি যেন এখন প্রায়ই ফাঁকা থেকে বিব্রত হয়, হয় লজ্জিত! লাও ফু আন্দাজ করতে চাইলো, ওর পকেটে কতো টাকা আছে! সে মনে মনে ভাবলো, আজকে হয়তো ওর নিজেকেই ক্ষুধা পেটে নিয়ে থাকতে হবে! এরপর ওরা দু’জনে ঢুকলো বিখ্যাত পেঙ্গুইন ওয়েস্ট্রার্ন রেস্তোরাঁয়। লাও ফু বাছাই করলো একটা আইটেম নিজের জন্য, সেটা হলো শুধু মাত্র এক গøাস ডাচ লেমনেড! সিয়াও অ খুব দ্রুত হাঁটুর উপর বিছিয়ে নিলো ন্যাপকিন, তারপর বললো, আমার জিহ্বায় পানি এসে গড়িয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে! লাও ফু বললো, শুধু তুমি খুশী থাকলেই থাকবে সব ঠিক ঠাক! আমি তো ইতিমধ্যে খেয়েই বেড়িয়েছি অফিস থেকে, তোমাকে সঙ্গ দেয়ার জন্য, তোমার সাথে আমি এক গøাস কোল্ড ড্রিংকস্ খাই, কি বলো!

লাল প্রসাধনী! (11-B)
পরে কথা উঠলো ছিউ ই-র প্রসঙ্গে। সিয়াও অ বললো আমি বিশ্বাস করতে পারছি না, ছিউ ই-র মতো মানুষ কি করে একজন সন্ন্যাসীনির জীবন বেছে নিলো? সে তো একজন হৈ চৈ পছন্দ করা মানুষ। লাও ফু বললো, কি জানি কোন ভ‚তে ওকে পেয়েছে! মনমানসিকতা বদলে গেছে, সব কিছুতেই এসেছে বিশৃঙ্খলা! সিয়াও অ ছুরি-কাঁটা চামচ তুলে তাগ করলো লাও ফু-র নাক বরাবর। তারপর বললো, ছিউ ই তোমাকে ঘৃণা করেই এই পথে গিয়েছে। লাও ফু দুই হাত প্রসারিত করে বললো, সে আমাকে ঘৃণা করে, আমি কাকে ঘৃণা করতে যাবো, বলো তো? আমি এখন খুব কষ্টে আছি, ওকে লালন পালন করার সামর্থ এখন আমার নাই। সিয়াও অ খানিক ক্ষণ নিশ্চুপ রইলো, তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, হতভাগা ছিউ ই, কিন্তু লাও ফু তুমি যা বলছ সেটাও ঠিক, এখনকার সময়ে নিজেরটা নিজেকেই করে খেতে হয়। কেউ কাউকে টানবে না!

ওয়েটার এসেছে বিল নিয়ে। সৌভাগ্য বশত কোন বিব্রতকর ঘটনা ঘটলো না। লাও ফু ঠিক মতোই ওয়েটারকে টিপস্ দিতে পারলো নিজের মুখ রক্ষা করে। পশ্চিমা রেস্তোরাঁ থেকে বের হওয়ার সময় সিয়াও অ লাও ফু-র হাত টেনে ধরলো, তারপর হাত ধরাধরি করে চলতে লাগলো। লাও ফু ওর নিজের ভিতরে থাকা দ্বিধাদ্বন্দের কথা ভাবলো। নানা রকম দুঃশ্চিন্তার জাল ছিড়ে সে বেরিয়ে আসতে পারছে না। মনে হচ্ছে মধুর স্বপ্ন গুলো আর ফিরে আসবে না, কোন মেয়েকে সাথে নিয়ে কোন গরীব পুরুষ মানুষের পক্ষে এক ইঞ্চি আগানোও কঠিন কাজ। তারা দুই জন দুই রকম নিজ নিজ মনের অনুভ‚তি নিয়ে হেঁটে চলছে, লাও ফু না থেমেই সিয়াও অ-কে নিয়ে পৌঁছে দিলো কাঁচের বোতলের কারখানায়।

সিয়াও অ বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা একটা কারখানা এলাকাকে নির্দেশ করে বললো, আমার বেছে নেয়া কারখানাটা হচ্ছে ওটা, খুবই বিরক্তিকর একটা জায়গা। লাও ফু বললো, দুই-তিন দিন পর আমরা নাচ ঘরে যাবো নাচতে, কি বলো! সিয়াও অ বললো, নাচ ঘর গুলো কি এখনও আছে? লাও ফু বললো, খুঁজে দেখবো, বলা তো যায় না, এখনও হয়তো কিছু নাচ ঘর পাওয়া যাবে যারা ব্যবসা বন্ধ করে নাই। সিয়াও অ এক পাক ঘুরে নাচের একটা ভঙ্গী করলো, তারপর বললো, আ মরণ আমার, আমি তো নাচের সবগুলো মুদ্রাই ভুলে গেছি, সিয়াও অ মাথা তুলে লাও ফু-র দিকে তাকালো, হঠাৎ করেই ওর আবার ছিউ ই-র কথা মনে পড়লো, ছিউ ই-র কি হবে? সিয়াও অ বললো, আমরা প্রথমে নাচতে যাবো, তারপর তুমি আমাকে ছিউ ই-র ওখানে নিয়ে যেও। লাও ফু খুব বিরক্তির সাথে মাথা নেড়ে বললো, আমি যাবো না। সে আমাকে দরজার চিপায় আটকিয়ে ছিলো, ভিতরে ঢুকতে দেয় নাই! যদি ওর সাথে দেখা করতে যেতেই হয় তাহলে তুমি নিজে একা যেও! সিয়াও অ বললো, আমি একা কি ভাবে যাবো? আমি তো পথও চিনি না, আবার আরেকটা বিষয়, এখন আমার কাছে কোন টাকা নাই যে, আমি ওর জন্য কোন উপহার কিনতে পারবো। ঠিক আছে, ওখানে না গেলেও চলবে, তাহলে আমরা শুধু নাচ ঘরেই যাবো, কি বলো!

লাল প্রসাধনী! (11-C)
তিন দিন পর সিয়াও অ এবং লাও ফু আরেক বার দেখা করলো পরস্পরের সাথে। লাও ফু এবার একজন সহকর্মীর কাছ থেকে টাকা ধার করে পকেটে নিয়েছে, ওর দুইজন একটা গাড়ী ভাড়া করে বাণিজ্যিক এলাকার রাস্তা ধরে খুঁজতে লাগলো জন সমাগমের হৈ চৈ ভরা অঞ্চল। নাচ ঘর আর মদ খাওয়ার রেস্তোরাঁগুলো এরই মধ্যে ঝড়া পাতার মতো ঝড়ে গিয়ে অদৃশ্য হয়েছে। রাতের আঁধার ঘনিয়ে আসার পর শহরটা যেন নীরব নিথর ঠান্ডা হয়ে গেছে। নিয়ন বাতির নীচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে দোকানগুলো, আরও আছে রাস্তার মাথায় কুন্ডলী পাকিয়ে শুয়ে থাকা নাম পরিচয় অজানা কিছু মানুষ। লাও ফু এবং সিয়াও অ অতিক্রম করলো পান্নার মেঘ মহল্লা। তারা পার হলো রাস্তার মুখের খিলান তোরণটি। খিলানে আড়াআড়িভাবে ঝুলছে বিপ্লবী শ্লোগান সম্বলিত ব্যানার। নৈশ বাজারে ছোট ছোট নানা ধরনের খাবার ও অন্যান্য জিনিসের দোকানগুলো একটার পর একটা বন্ধ করছে দোকানদাররা। সিয়াও অ একটা দোকানের দিকে আঙ্গুল তুলে লাও ফু-কে বললো, তাড়াতাড়ি চলো, ঐ দোকান থেকে শুই চিঙ পাও [এক ধরনের চালের আটার তৈরী চীনা খাবার হচ্ছে ‘শুই চিঙ পাও’] কিনবো, আরেকটু দেরী হলেই দোকানটা বন্ধ হয়ে যাবে। লাও ফু রিক্সা থেকে লাফিয়ে নেমে বেশ তাড়াহুড়া করেই দোকানটার দিকে ছুটে গেলো, কিনলো কয়েকটা শুই চিঙ পাও। লাও ফু রিক্সার হুডের ফ্রেম মুঠ করে ধরে তাকালো সেই পুরনো দিনের লাল রঙ্গ দালান-এর দিকে। লাল রঙ্গ দালানের কালো লণ্ঠনের আগুন জ্বলছে না, দেখতে যেন অনেকটা সিনেমার দৃশ্যে দেখানো একটা পরিত্যক্ত স্থান। লাও ফু বললো, সিয়াও অ তুমি কি ওখানে যাবে? গিয়ে দেখে আসবে? সিয়াও অ এক কামড় শুই চিং পাও মুখে পুড়ে বললো, যাবো না, দেখবো না, দেখলে বরং মন খারাপ হবে। লাও ফু একটু ভেবে বললো, ঠিক বলেছ, দেখলে বরং মন আরও খারাপ হবে। তারা সারা শহর ঘুরে খুঁজলো নাচ ঘর, একে বারে শেষে, চূড়ান্ত ভাবেই হতাশ হলো। লাও ফু-র পরিচিত একজন নাচ ঘরের মালিক, জানালা দিয়ে উঁকি দিলেন, মুরগীর মতো মাথা ঘুরিয়ে ওদের দেখলেন, তারপর হাত নেড়ে বললেন, চলে যাও, চলে যাও, বড়ী ফিরে যাও, এখন কোন দিনকাল পড়েছে জানো, নাচ ঘরে গিয়ে ডান্স করতে চাও তোমরা? যাও যাও, নাচতে চাইলে বাড়ীর বিছানার উপরে গিয়ে নাচো, আটটা নাচ ঘরের সব গুলোকেই সীল গলা করে বেআইনী ঘোষণা করা হয়েছে। লাও ফু দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে ফিরে এসে রিক্সায় উঠে বসলো। সে সিয়াও অ-কে উদ্দেশ্য করে বললো, এখন কি করা যায়? বাদ বাকী সময়টা কি ভাবে কাটানো যায়?

সিয়াও অ বললো, আমিও তো জানি না, তোমার যা খুশী, আমরা তাই করি চলো! লাও ফু খানিক ক্ষণ চিন্তা করে বললো, চলো আমার ওখানে যাই, আমার বাসায় গিয়ে এক সাথে নাচি আমরা। আমার এখানকার বাসাটা একেবারেই ভাঙ্গা চূড়া, কোন আসবাবপত্র নাই, কিন্তু আমার কাছে আমি এখনও রেখে দিয়েছি এক ডিব্বা জার্মানির কফি, আরও আছে একটা গ্রামোফোন, নাচা যাবে, যে কোন নৃত্যই করা সম্ভব। সিয়াও অ হাসলো, ঠোঁট চেটে বললো, তা হলে চলো যাই, শুধু অন্য মেয়ে লোকের সাথে ধাক্কা না লাগলেই চলবে, আর কিছু চাই না।

লাল প্রসাধনী! (11-D)
এই এক বছরে লাও ফু কয়েক বার বাসা বদল করেছে, সবশেষে এসে উঠেছে বিদ্যুৎ কোম্পানির প্রাক্তন গাড়ীর গ্যারেজে। সিয়াও অ দরজায় দাঁড়িয়ে, প্রথমে উঁকি দিয়ে ভিতরের পরিবেশটা ভালো করে দেখলো, তারপর বললো, কখনও ভাবি নাই লাও ফু এই পর্যায়ে নেমে আসবে! লাও ফু বললো, বাস্তব জগতের অনেক কিছুই অপ্রত্যাশিত আর অনিশ্চিত, আমি যে মরে যাইনি, এটাও তো একটা সৌভাগ্যের বিষয়। সিয়াও অ ভিতরে ঢুকে খাটের উপরে এসে বসলো। দুই পা দিয়ে তাচ্ছিল্য ভরে মেঝেতে পা ঠুকলো, তারপর জুতা খুলে জুতা জোড়া ছুঁড়ে মারলো দরজার দিকে। সিয়াও অ বললো, লাও ফু, সত্যিই তুমি একা থাকো? লাও ফু জানালার পর্দা টেনে দিলো। মুখ ঘুরিয়ে বললো, আমি তো বরাবরই একা, আমার আম্মা আমার বড় বোনের বাসায় চলে গেছেন থাকার জন্য, আমি এখন আরও একা হয়ে গেছি।

সিয়াও অ বিছানায় বসে একটা সিনেমার ম্যাগাজিনের পাতা উল্টাচ্ছিল, সে মাথা তুলে লাও ফু-র দিকে তাকালো, লাও ফুও বোকা বোকে দৃষ্টি নিয়ে ওর দিকে চোখ ফিরালো। সিয়াও অ হেসে উঠে বললো, তুমি ওখানে বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছো কেনো? গান বাজাও, আসো আমরা নাচি, লাও ফু বললো, আমার গ্রামোফোন রেকর্ডারটি নষ্ট হয়ে গেছে। সিয়াও অ বললো, তা হলে কফি জ্বাল দাও। লাও ফু বললো, হিটারটাও নষ্ট, জ্বলবে না। সিয়াও অ সিনেমার ছবিওয়ালা ম্যাগাজিনটা দিয়ে মুখ ঢেকে ফিক ফিক করে হেসে উঠলো, সে বললো, তুমি ঘোড়ার ডিম, কি করছো? তুমি কি এভাবেই আমাকে আপ্যায়ণ করবে? লাও ফু খাটের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো, সিয়াও অ-কে টেনে নিয়ে ওর কোমড় জড়িয়ে ধরলো, লাও ফু বললো, আমি বিছানায় তোমায় আপ্যায়ণ করছি, এই কথা বলেই সে সুইচ অফ করে বাতি নিভিয়ে দিলো। অন্ধকারের মধ্যে সিয়াও অ সিনেমার ছবির ম্যাগাজিনটা দিয়ে লাও ফু-র পিঠে বাড়ি মারলো, সিয়াও অ গভীর ভাবে শ্বাস টেনে বললো, লাও ফু তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরো না, ছিউ ই-র স্নেহের অভাব আমি অনুভব করছি। চলবে