শামীম আহসান মহাবুল্লাহ : ” গল্পের নাম ‘হোং ফেন’, আমি যার ভাবার্থ করেছি ‘লাল প্রসাধনী’! এই গল্পটাকে ছোট গল্পই বলা যায়, তবে গল্পটা আকারে বেশ বড়। গল্পের লেখক সু থোং, এই নামটি লেখকের ছদ্মনাম। ‘লাল প্রসাধনী’ গল্পের প্রেক্ষাপটের সময়কাল হচ্ছে গত শতাব্দীর পঞ্চাশ দশক। গল্পটার শুরু করছি, পাঠকদের অনুরোধ করছি গল্পটা পড়ার জন্য!

(পূর্ব প্রকাশের পর)

লাও ফু বললো, ও’ কিছু নয়, এখন কে কাকে দেখে রাখতে পারবে! সিয়াও অ-র শরীরটা ধীরে ধীরে পিছিয়ে গিয়ে চিৎ হলো, সে শুয়ে পড়লো পুরোপুরি, সে অভ্যাস বশতই নখ দিয়ে চিমটি কাটলো লাও ফু-র পিঠে সিয়াও অ বললো, লাও ফু, ও’লাও ফু, তুমি বলো আমি ছিউ ই-কে কি ভাবে মুখ দেখাবো? লাও ফু তৎক্ষনাৎ সিয়াও অ-র ঠোঁট জোড়াকে নিয়ন্ত্রণ করলো নিজের জিহ্বার স্পর্শ দিয়ে, তারপর ওরা দু’জন অন্ধকারের মধ্যে আনন্দের জোয়ারে ভাসতে লাগলো, কেউ আর কোন কথা বললো না!

লাল প্রসাধনী! (12-A)
কাঁচের বোতলের প্রক্রিয়াজাত করণের কারখানায় বিশ পঁচিশ জন নারী শ্রমিক কাজ করে, এদের মধ্যে কমপক্ষে অর্ধেক হচ্ছে পুরোনো দিনের পান্নার মেঘ মহল্লা থেকে আসা মেয়ে, ওরা অভ্যাস বশত নিজেরা একসাথে থাকে, ওরা সাধারণ পরিবার থেকে আসা বাকী মেয়েদের কাছ থেকে দূরে থাকে। ওদের কাজ খুবই সহজ, ওরা ছোট পাহাড়ের মতো স্তূপ করে রাখা কাঁচের বোতলগুলোর মধ্য থেকে বাছাই করে ভালো বোতল গুলো, ধুয়ে পরিষ্কার করে, তারপর এই বোতল গুলোকে নিয়ে যাওয়া হয় পুন: ব্যবহারের নিমিত্তে। ঐ সময়ে মানুষ জন তখনও এই ধরনের হাতের কাজের কারখানার অস্তিত্বে অভ্যস্ত হয় নাই, অনেকেই কাঁচের বোতলের প্রক্রিয়াজাত করণের এই কারখাটাকে ডাকতো পতিতা মেয়েদের ওয়ার্ক সপ!

সিয়াও অ-র কাজ হচ্ছে কাঁচের বোতল ধোয়া, সে হাত দিয়ে বোতল ধরে একটা ছোট ব্রাশ বোতলের মুখ দিয়ে ভিতরে ঢুকিয়ে বোতলের দেয়াল বরাবর ব্রাশটাকে ঘুরিয়ে, ভিতরের পানিটুকু ফেলে দেয়, তারপর আরেকটা বোতল নেয়, একটা সবুজ রঙের কিংবা গাঢ় বাদামী রঙের বোতল পরিষ্কার উজ্জ্বল হয়ে উঠে। সিয়াও অ খুব অলসতার সাথে কাজের পুণঃরাবৃত্তি করে, একদিকে যেমন এই কাজটা ওর কাছে খুবই এক ঘেয়ে মনে হয়, অন্যদিকে সে খুব ভালো করেই জানে যে এ জগতে এরচেয়ে সহজ আর কোন কাজ থাকতে পারে না। সিয়াও অ প্রতি মাসে বেতন পায় চৌদ্দ ইউয়ান, এতো অল্প টাকায় জীবন চালিয়ে নিতে সে যেন খুবই অনিচ্ছুক আর বিতৃষ্ণ! প্রথম বারের মতো বেতন নেয়ার সময় সে খুবই অবাক হয়েছে, সে বলেছে, এই অল্প টাকা কি কাজে লাগবে? কারখানার নারী পরিচালক ফ্যাকাশে মুখে তাকে বলেছে, তুমি এই টাকা দিয়ে কি করতে চাও? এটা অবশ্যই তোমার আগের দিনের আয় রোজগারের তুলনায় কিছুই নয়, কিন্তু এটা হচ্ছে পরিচ্ছন্ন টাকা, প্রয়োজন অনুযায়ী তুমি এই টাকা খরচ করবে। সিয়াও অ-র মুখটা কালো হয়ে গেলো, সে বললো, কি পরিষ্কার আর ময়লা, টাকা তো টাকাই, মানুষ তো মানুষই, অতি পরিচ্ছন্ন মানুষও টাকা ব্যবহার করে, বেশী নোংরা মানুষও টাকা খরচ করে, এমন কে আছে যে টাকা পছন্দ করে না? কারখানার নারী পরিচালক বিরক্ত হয়ে কট মট করে তাকালেন সিয়াও অ-র চোখের দিকে, তারপর আঙ্গুল তুলে অন্যান্য মেয়েদের নির্দেশ করে বললেন, ওরাও তো এই পরিমাণ টাকাই নিচ্ছে বেতন হিসেবে, ওরা তাহলে কি ভাবে দিন কাটায়, ওরা চলছে কি ভাবে? সিয়াও অ ওনার সাথে আর তর্ক করলো না, ঐ টাকা গুলো মুট করে নিয়ে সে বাইরে চলে গেলো, দরজার বাইরে বেরিয়েই সে গালি দেয়া শুরু করলো, দাগওয়ালা মুখী, কুৎসিত মেয়ে লোক। আসলে কারখানার নারী পরিচালকের মুখে আছে গুটি বসন্তের দাগ, সিয়াও অ সব সময়ই ভাবতো দাগওয়ালা মুখের মানুষেরা খুবই ধূর্ত হয়। সে সব সময়ই পিছনে পিছনে কারখানার নারী পরিচালকের মুখের বসন্তের দাগ নিয়ে ব্যাঙ্গ করে। জানা যায় নাই কি ভাবে জানি এই পরিহাসমূলক কথা গুলো নরী পরিচালকের কানে গেলো। নারী পরিচালক প্রচন্ড ক্রদ্ধ হয়ে একটা কাঁচের বোতল সিয়াও অ-র শরীরের দিকে ছুঁড়ে মারলেন। নারী পরিচালকটি হচ্ছেন স্থূল দেহধারী শান তোং প্রদেশের একজন মহিলা, তিনি টেনে ধাক্কা দিয়ে সিয়াও অ-কে নারী কর্মীদের ভিতর থেকে বের করে আনলেন। তারপর সিয়াও অ-র চুল মুট করে ধরে ওকে টেনে বাঁশের বেড়ার উপর ঠেলা দিয়ে ফেললেন। নারী পরিচালক বললেন, আমার মুখের দাগ হচ্ছে পুরনো সমাজের ক্ষত চিহ্ন। গুটি বসন্ত হয়েছিল আমার, টাকা ছিলো না চিকিৎসা করার। তোমার মুখটা তো সুন্দর, কিন্তু তুমি একটা ব্যাশ্যা। তোমার নীচের দিকটা তো নোংরা, পোকা কিলবিল করে ওখানে! তুমি কোন মুখে পরচর্চা করছো? সিয়াও অ বুঝতে পারলো নিজের দেওয়া উস্কানির জন্যই সে ঝামেলায় পড়েছে। ক্রুদ্ধ নারী পরিচালক ওর মুখটাকে বাঁশের বেড়ার সাথে চেপে ধরলেন। ওর চোখের পানি টপ টপ করে নীচে পড়ছে? নারী কর্মীরা এসে ওকে টান দিয়ে সরিয়ে দিতে চাইলো, সিয়াও অ বললো, তোমরা এসো না, এটা তো তোমাদের কোন ব্যপার নয়, ওকে আমায় পিটিয়ে মেরে ফেলতে দাও, আমার এমনিতেও আর বাঁচতে ইচ্ছে করছে না।

লাল প্রসাধনী! (12-B)
আজ রাতে সিয়াও অ আবারও লাও ফু-র গাড়ীর গ্যারেজের বাসায় গিয়েছে। সিয়াও অ লাও ফু-কে দেখা মাত্র ছুটে গিয়ে ওর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ডুকরে কেঁদে উঠলো। লাও ফু বললো, সিয়াও অ, তোমার কি হয়েছে? সিয়াও অ ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো, বসন্তের দাগওয়ালা মেয়ে লোকটা আমাকে মেরেছে। লাও ফু বললো, সে তোমাকে মেরেছে কেনো? তুমি তো একেবারেই অবুঝ, তুমি তো এখন আর লাল রঙ্গ দালানের বাসিন্দা নও, যা ইচ্ছা তাই, খাম খেয়ালী করতে যেও না, নচেৎ পরে পস্তাতে হবে। সিয়াও অ তার চোখের পানি থামাতে পারছিল না, সে বললো, ওখানকার মাসী তো কখনও আমাকে মারে নাই, খদ্দেররা যারা আসতো তারাও কখনও আমাকে মারধর করে নাই, শ্রম অনুশীলন শিবিরের লোকজনও তো কখনও আমার গায়ে হাত তুলে নাই। এই বসন্তের দাগওয়ালা মেয়ে লোকটার হাতে আমি মার খেলাম, তুমি বলো এটা আমি কেমনে সহ্য করি? লাও ফু বললো, তাহলে তুমি কি করতে চাও? সিয়াও অ লাও ফু-র জামার কলার মুট করে ধরে বললো, লাও ফু আমি পুরোপুরি তোমার উপর নির্ভর করছি, তুমি আমার গলার স্বর শুনেই তো বুঝতে পারছো, আমি কি চাইছি। আমি চাই তুমি আমার হয়ে প্রতিশোধ নিবে, ঐ বসন্তের দাগওয়ালা মেয়ে লোকটার মুখে একটা ঘুসি মারবে তুমি! লাও ফু দুঃখের হাসি হেসে বললো, আমি কখনও কাউকে মারধর করি নাই! তুমি বলছো তাও আবার একজন মহিলার গায়ে হাত তুলতে! সিয়াও অ-র কণ্ঠস্বর পাল্টিয়ে গেলো। একটা শোক ভারাক্রান্ত দৃষ্টিতে সে লাও ফু-র মুখের দিকে তাকিয়ে বললো, ঠিক আছে, বেশ বেশ, লাও ফু তুমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখো আমার কষ্ট, আমার অপমান, লাও ফু তুমি কি একটা পুরুষ মানুষ? আমার কাছে তুমি ভিজা বিড়াল সাজতে এসো না, যদি তুমি পুরুষ মানুষ হও তাহলে আগামীকালই, তুমি নিজে গিয়ে ঐ বেটির মুখে ঘুসি মারবে একটা। লাও ফু বললো, ঠিক আছে, আমি একটা লোক ঠিক করবো, যে ঐ মহিলার মুখে ঘুসি মেরে আসবে। সিয়াও অ আবার চিৎকার করে উঠলো, না হবে না, আমি চাই তুমি নিজে যাবে, তুমি নিজ হাতে ওকে আঘাত করবে, আর তাহলেই আমার রাগ কমবে। লাও ফু বললো, সিয়াও অ তুমি আমাকে নানান প্যাঁচে ঘিরে ফেলছ, আমি তো তোমাকে ঘেরাও করতে পারছি না!

লাও ফু-র মনে হচ্ছে সিয়াও অ-র চিন্তা ভাবনা সহজ ভাষায় বললে, খুবই অদ্ভুত, কিন্তু দ্বিতীয় দিন সে কাঁচের বোতলের কারখানায় গিয়ে ওৎ পেতে বসে রইলো বসন্তের দাগওয়ালা মুখের ঐ মহিলাকে হামলা করার নিমিত্তে। লাও ফু-র গায়ে ছিলো ওভার কোট, মুখে মুখোশ পরে সে দাঁড়িয়ে অনেক ক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিলো, সে দেখতে পেলো লম্বা মুখের বসন্তের দাগওয়ালা একজন মহিলা ভিতর থেকে বেরিয়ে এলো, মহিলাটি লাও ফু-র দিকে পিছন ফিরে দরজায় তালা মারার সময়, লাও ফু মহিলাটিকে অভিবাদন জানানোর ভঙ্গিতে বললো, আমি খুবই দুঃখিত! মহিলাটি মুখ ফিরিয়ে তাকালেন, আর সাথে সাথেই লাও ফু ওর মুখ বরাবর একটা ঘুসি মারলো। মহিলাটি তীক্ষ্ণ স্বরে চিৎকার করে উঠলো, তুমি কে? কি করছো? লাও ফু বললো, শুধু শুধু চিৎকার করবেন না, এটা এখানেই শেষ! এরপর লাও ফু খানিকটা নীচু হয়ে মহিলাটির নিতম্ব টিপে ধরে একটা মোচড় দিলো, তারপর দৌড়ে পালিয়ে গেলো। মহিলাটি এবার উচ্চ স্বরে চেঁচিয়ে উঠে বললো, গুন্ডা, ধরো কে আছো, তোমরা পাকড়াও করো ঐ গুন্ডাটাকে! লাও ফু ভয় পেয়ে ছুটতে লাগলো প্রাণপনে, ঢুকে পড়লো একটা সরু গলির মধ্যে। ওর ভাগ্য ভালো, গলিটা ছিলো জনশূন্য, যদি কেউ ওকে ধাওয়া করতো তাহলে খুবই বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হতো তাকে। লাও ফু এরপর থামলো, খুব জোরে হাঁফালো কিছুক্ষণ, সে চিন্তা করলো কিছুটা সময়, সব কিছুই তার কাছে অযৌক্তিক এবং অসঙ্গত মনে হচ্ছে, হয়তো তার উচিৎ হয় নাই এই বসন্তের দাগওয়ালা মুখের মহিলাটির নিতম্বে মোচড় দেয়া, অবশ্য এই ব্যপারটা খুব সহজেই মানুষকে ভুল বার্তা দিতে পারে, মানুষ হয়তো ভাববে, লাও ফু সদর দরজায় ঘাপটি মেরে বসে ছিলো বসন্তের দাগওয়ালা মহিলাটিকে ধর্ষণ করার লক্ষ্যে! লাও ফু-র নিজেকে খুব হতভাগা মনে হলো, জীবনের এই মাঝামাঝি এসে শুধু মাত্র মেয়ে লোকদের কারণে তাকে সইতে হচ্ছে কতো গঞ্জনা, কতো তিক্ততা!

লাল প্রসাধনী! (12-C)
লাও ফু তার গাড়ীর গ্যারাজের বাসায় ফিরে এসে দেখে, দরজাটা খোলা। সিয়াও অ বিছানায় শুয়ে পায়ের নখ কাটছে। লাও ফু-কে দেখা মাত্র সে দেহটাকে ধনুকের মতো বাঁকিয়ে লেপের ভিতরে ঢুকে পড়লো। সিয়াও অ বললো, তুমি খুশীতে নাচতে নাচতে কোথায় গিয়েছ? লাও ফু বললো, আরে, তুমিই তো তোমার হয়ে রাগের ঝাল মিটাতে আমাকে পাঠিয়েছ, তাই না? আমি গিয়েছিলাম ঐ বসন্তের দাগওয়ালা মুখের মহিলার মুখে একটা ঘুসি মারতে, ওর নাকে ঘুসি মেরেছি, মুখটা ফুলে গেছে, সে মাটিতে পড়ে গিয়েছিলো। সিয়াও অ ফিক ফিক করে হাসলো, সে বললো, লাও ফু তুমিও যা, আমি তো আসলে চাচ্ছিলাম তুমিও আমার ব্যথায় ব্যাথিত হও, কে তোমাকে বলেছে সত্যি সত্যিই গিয়ে ঐ মহিলার গায়ে হাত তুলতে? লাও ফু যে দিকেই ফিরছে, সেই দিকেই শুনতে পাচ্ছে সিয়াও অ-র পাগলের মতো হাসির শব্দ, হাসির দমকে যেন ওর শ্বাস বন্ধ হয়ে আসার জোগাড়, লাও ফু ভাবলো সে যেন একটা জীবন্ত খেলাধুলার জিনিস হয়ে গেছে, লাও ফু ভাবলো, আমাকে পুরাপুরি বোকা বানানো হয়েছে। লাও ফু বকা দিয়ে বললো, তোমার মাথা পুরাপুরি খারাপ হয়ে গেছে। সিয়াও অ হাসতে হাসতে লেপের উপর কয়েকটা বাড়ি দিলো হাত দিয়ে, সে জোরে লাও ফু-র নাম ধরে ডেকে বললো, আসো, এবার তোমার পালা, তোমাকে ঠান্ডা করবো এখন। লাও ফু বিষন্ন বদনে এগিয়ে এসে লেপের ভিতরে ঢুকলো, সে দেখতে পেলো সিয়াও অ যেন অনেক ক্ষণ আগেই সব জামা কাপড় খুলে ফেলেছে, লাও ফু ওর সারা শরীরে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ওকে পরিতুষ্ট করা শুরু করলো, রাগে দাঁত কামড়িয়ে সে বললো, দেখো, আমি তোমাকে কি ভাবে ঠান্ডা করি আজ, আজ আমি তোমাকে আধমরা করে ফেলবো, সিয়াও অ হাত উপরে তুলে নখ দিয়ে লাও ফু-র নাকে আচড় দিলো, সে বললো, ভয় হচ্ছে এটা ভেবে যে, তোমার কি আসলেও সেই সক্ষমতা আছে!

লাল প্রসাধনী! (12-D)
গাড়ীর গ্যারেজে আসা আলোক রশ্মির হালকা হলুদ রঙ পর্যায়ক্রমে বদলে গিয়ে এক সময় মিলিয়ে গেলো, সবশেষে পড়ে রইলো এক রাশ অন্ধকার। বাতাসের মধ্যে ভাসছে একটা মিষ্টি আঁশটে গন্ধ যাকে ভাষা দিয়ে খুব স্পষ্ট করে প্রকাশ করা যায় না। দু’জনের কেউই বিছানা থেকে উঠতে চাচ্ছিল না। হঠাৎ করেই দুম করে একটা শব্দ হলো, কে যেন জানালার কাঁচে ঢিল মেরেছে, লাও ফু লাফ দিয়ে উঠলো, জানালার পর্দা সরিয়ে দেখে দু’টি বালক পাথরের ঢিল ছুঁড়ে খেলছে। সে হাত দিয়ে বুক ঢেকে উচ্চ স্বরে গালি দিলো, তারপর বললো, আমাকে তো ভয় পাইয়ে দিয়েছে, আমি তো ভেবেছি কে না কে এসেছে আমাদের এই অকাজকে হাতে নাতে ধরতে ! বিছানা থেকে সিয়াও অ প্রশ্ন করলো, কে, ছিউ ই না তো আবার? লাও ফু বললো, দু’টো বাচ্চা ছেলে। সিয়াও অ বিছানা থেকে লাফ দিয়ে নামলো, একটা গামলার দিকে এগিয়ে গিয়ে সেটাতে বসে পেশাব করলো। লাও ফু চেঁচিয়ে উঠলো, ওটা তো আমার মুখ ধোয়ার পানির গামলা! সিয়াও অ উবু হয়ে বসে বললো, তাতে কি হয়েছে? আমি এখনই ফেলে দিবো, ধুয়ে দিবো। নিজের সুবিধা মতোই, সে গামলার পেশাব ঢেলে দিলো মেঝেতে থাকা নালায়, যা কিনা গ্যারাজে গাড়ী মেরামতের সময়ই কাজে লাগে, লাও ফু আবার চেঁচিয়ে উঠলো, আরে কি করলে, তুমি তো ওগুলো ঢাললে আমার জুতা জোড়ার উপরে! লাও ফু তার জুতা জোড়া ছুঁড়ে ফেলে ছিলো নালাটার ভিতরে। লাও ফু দ্রæত গিয়ে জুতা জোড়া টান দিয়ে আনলো, হাতে দিয়ে বুঝলো জুতা জোড়া ইতিমধ্যেই ভিজে গেছে। সে রেগে গিয়ে জুতা জোড়া দেয়ালের কোণা বরাবর আছড়ে মারলো, কি হলো তোমার, আমি আগামীকাল এই জুতা কি ভাবে পায়ে দিবো?

সিয়াও অ বললো, এক জোড়া নতুন জুতা কিনলেই হয়! লাও ফু একটু তিক্ত হাসি হাসলো, তুমি তো বললে খুব সহজ একটা কথা, বড় মিঞার তো এখন অবস্থা খারাপ, সকালে খাবার জুটলেও বিকেলে জুটে না! টাকা কোথায়, যে কিনবো এক জোড়া নতুন জুতা?

সিয়াও অ যখন বুঝলো লাও ফু রেগে গেছে, সে ঠোঁট ফুলিয়ে বললো, লাও ফু, তুমি কি রকম পুরুষ মানুষ, সামান্য এক জোড়া জুতার জন্য তুমি আমার সাথে এতো রাগ করছো! এই কথা বলে, সিয়াও অ ঐ জায়গাই বসে পড়লো, নড়লো না! (চলবে)