Home আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ বাড়ছে বাইডেন প্রশাসনের সামনে

চ্যালেঞ্জ বাড়ছে বাইডেন প্রশাসনের সামনে

অনলাইন ডেস্ক : গত অক্টোবরের ঘটনা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাট সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার জন্য ক্যাপিটল হিলে যান। আর্থিক বিষয়ক একটি বিল নিয়ে ডেমোক্র্যাটদের দ্বন্দ্ব নিরসন করাই ছিল এর উদ্দেশ্য। কিন্তু তার সেই উদ্যোগ সফল হয়নি। সেখান থেকে চলে আসার সময় বাইডেনকে উদ্দেশ্য করে ডেমোক্র্যাটরা বলেছিলেন, ‘মি. প্রেসিডেন্ট, আমাদের একটি পরিকল্পনা প্রয়োজন।’ ক্যাপিটল হিল সংশ্লিষ্ট সূত্র খবরটি দেয়।

তিন মাস পরের ঘটনা। জলবায়ু পরিবর্তন প্যাকেজ এবং এ সম্পর্কিত সামাজিক ব্যয় ইস্যুতে অনিশ্চয়তা কাটার কোনো লক্ষ্য দৃশ্যমান নয়। যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাইডেন ক্ষমতায় আসেন তার অধিকাংশ এখনো পূরণ হয়নি। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মহামারি নিয়ন্ত্রণে আনবেন, সেটি কার্যত সম্ভব হয়নি।

ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট এসে পরিস্থিতি জটিল করে তুলেছে। মুদ্রাস্ফীতি চার দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। বাইডেনের প্রতি জনসমর্থন কমে ৪০-এর কোঠায় নেমে গেছে। আইওয়া ভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক জে অ্যান সেলজার বলেন, ‘জনগণ এক হতাশা থেকে আরেক হতাশায় ভুগছে। বর্তমান সমস্যাগুলো সমাধানে বাইডেন অনেকটাই দক্ষ বলে মনে করা হলেও তিনি মূলত এখন পর্যন্ত দক্ষতার স্বাক্ষর রাখতে পারেননি। অবকাঠামো বিল পাশ করানো ছাড়া তার ঝুলিতে কার্যত কোনো সাফল্য নেই।’

বাইডেন হোয়াইট হাউজে প্রবেশ করেছেন বছর পেরিয়ে গেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার প্রতিশ্রুতি দিয়েই তিনি ক্ষমতায় আসেন। মার্কিন জনগণও একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ হিসেবে তার ওপর আস্থা রাখতে চেয়েছিল। তার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর করোনার একটি নয় বরং দুটো নতুন ভ্যারিয়েন্টের আত্মপ্রকাশ ঘটে যার জন্য তার প্রশাসন প্রস্তুত ছিল না বলেই মনে হচ্ছে। সিনেটকে নিজের পরিকল্পনা বোঝাতে তিনি বারংবার ব্যর্থ হন, যদিও একজন ঝানু সিনেটর হিসেবে এটি তার কাছে প্রত্যাশিত ছিল না। তিনি ছিলেন সিনেটের ফরেন রিলেশনস কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান।

অথচ তারই আমলে আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের কাজটি সুষ্ঠুভাবে হয়নি বলে ইউরোপীয় মিত্ররা অভিযোগের আঙুল তুলেছে। হালে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গেও নানা ইস্যুতে সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। আফগানিস্তানে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত রায়ান ক্রোকার মনে করেন সব মিলিয়ে বহির্বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশটির আন্তর্জাতিকতাবাদও।

তবে বাইডেন সমর্থকরা মনে করেন, তিনি আর যে কারো থেকে বিশেষভাবে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সফলতার পরিচয় দিয়েছেন। তারা বলছেন, ট্রাম্প অনুসারীদের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিল আক্রমণের রেশ কাটতে না কাটতেই তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পুরো দেশ তখন দ্বিধা বিভক্ত হয়েছিল।

প্রতিপক্ষ তো প্রেসিডেন্ট হিসাবে তার বৈধতাই মেনে নেয়নি। ভ্যাকসিন ইস্যুতে তিনি ক্রমাম্বয়ে সফলতা পান। অবকাঠামো তহবিলের জন্য তিনি উভয় দলের পক্ষ থেকে সমর্থন পাননি। তারপরও বিষয়টি নিয়ে তিনি এগিয়ে গেছেন। তবে রাজনৈতিকভাবে বাইডেন যতটা সুবিধাজনক পর্যায়ে থাকার কথা ছিল সেটি না থাকার কথা তিনি নিজেও স্বীকার করেন। তিনি ১৯ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমি জানি নানা বিষয়ে মানুষের মনে হতাশা এখনো আছে। পরিস্থিতির উন্নতি ঘটনানোর জন্য আমরা সম্ভব সব কিছুই করছি।’

অনেক ডেমোক্র্যাট মনে করেন অবস্থা যেভাবে চলছে তাতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেনের জনপ্রিয়তা কমেছে। তারা মনে করে বাইডেনের নেতৃত্ব দেওয়ার সামর্থ্য কম। এ বিষয়ে তার সামর্থ্য নিয়ে মানুষ এখান খোলাখুলিভাবেই প্রশ্ন করছে।

বাইডেন যদি কোনো একটি কর্মসূচিতেও সাফলতার পরিচয় দিয়ে থাকেন সেটি মহামারি নিয়ন্ত্রণে রাখা। ট্রাম্পের সময় মৃতু্যর যে মিছিল শুরু হয়েছিল বাইডেনের প্রশাসন তার রাশ টানতে সমর্থ হয়েছে বলা চলে। কিন্তু সমস্যা বাধিয়েছে আফগানিস্তান থেকে পড়ি কি মরি করে সৈন্য প্রত্যাহার করা। ঐ ঘটনা বাইডেনের প্রশাসনের এতটাই ক্ষুণ্ণ করেছে যার জের তারা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এদিকে নভেম্বরে কংগ্রেসের মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে ডেমোক্র্যাটরা। তাদের আশঙ্কা প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতছাড়া হতে পারে।

Exit mobile version