অনলাইন ডেস্ক : চিলির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইতিহাস গড়েছেন গ্যাব্রিয়েল বরিক। ৩৫ বছর বয়সী বামপন্থী এই নেতা দেশটির সবচেয়ে কনিষ্ঠ প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন। মান সম্মত শিক্ষার দাবিতে ১০ বছর আগে গড়ে ওঠা এক ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সর্বপ্রথম আলোচনায় আসেন তিনি। আর এখন গ্যাব্রিয়েল বরিক দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তি হতে যাচ্ছেন।

রবিবার (১৯ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত চিলির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দেশটির কট্টর ডানপন্থী নেতা জোসে অ্যান্তনিও কাস্তেকে হারিয়েছেন গ্যাব্রিয়েল বরিক। তার এই উত্থানের মূল কারণ চিলির ‌‘নব্য উদারবাদী’ অর্থনৈতিক মডেলের কবর রচিত হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া। জনগণও তার আহ্বানে সাড়া দিয়েছে।

রবিবার ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার মাত্র দেড় ঘণ্টার মধ্যেই পরাজয় স্বীকার করে নেন জোসে অ্যান্তনিও কাস্তে। তখন প্রায় অর্ধেক ভোট গণনা সম্পন্ন হয়েছিল। সে সময় বেসরকারি ফলে দেখা যায়, ৫৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন গ্যাব্রিয়েল বরিক। আর কাস্তে পেয়েছেন ৪৪ শতাংশ ভোট। খবর প্রকাশ করেছে বিবিসি ও বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

জয় নিশ্চিত হওয়ার পর চিলির বর্তমান প্রেসিডেন্ট সেবাস্তিয়ান পিনেরাকে ফেন করেন বরিক। এ সময় তিনি বলেছেন, ‘আপনি আমাকে ভোট দেন আর না দেন, আমি এখন প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছি। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।’

বর্তমান সরকারের আমলে চিলির বাজার-কেন্দ্রিক অর্থনৈতিক মডেল নিয়ে জনগণের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। যদিও ক্ষমতাসীন দলের দাবি, গত কয়েক দশকের মধ্যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষ তা বিশ্বাস করছে না। তারা বলছে, এই অর্থনৈতিক মডেলের মাধ্যমে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

নিজের নির্বাচনি প্রচারণায় গ্যাব্রিয়েল বরিক জনগণকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি ক্ষমতায় গেলে বিতর্কিত এই মডেলের ইতি টানবেন। অবশ্য জনগণের মাঝে ক্ষোভের শুরুটা হয় ২০১৯ সালে। সে সময় পুরো দেশে সামাজিক অভ্যুত্থান দেখা দেয়। এর মধ্য দিয়ে চিলিতে প্রগতিশীল বামপন্থী রাজনীতির উত্থান ঘটে। ফলস্বরূপ স্বৈরতান্ত্রিক আমলের সংবিধানেও সংশোধনী আনা হয়।

চীনের দক্ষিণাঞ্চলের পুন্তা অ্যারিনাস জনগোষ্ঠীর সদস্য বরিস এক দশক আগে স্যান্টিয়াগোতে ইউনিভার্সিটি অব চিলির ছাত্র ফেডারেশনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। মান সম্মত ও শিক্ষায় খরচ কমানোর দাবিতে ২০১১ সালে দেশজুড়ে ছাত্র আন্দোলনত বৃহৎ আকারে দাঁড়ায়। আর সেই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে আলোচনায় আসেন বরিস।

সেই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে ২০১৪ সালে মাত্র ২৭ বছর বয়সেই আইনপ্রণেতা হিসেবে চিলির সংসদের নিম্নকক্ষে যোগ দেন। মাগালানেস অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি।

তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মনোনয়ন পেতে গ্যাব্রিয়েল বরিকবে ব্যাপক কাঠখড় পোহাতে হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, একজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে ৩৫ হাজার স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে হয়। বরিক সেটি করার পাশাপাশি পরাজিত করেন স্যান্টিয়াগো অঞ্চলের জনপ্রিয় মেয়র ডেনিয়েল জাদুকে। এর পরই বামপন্থি জোটের নেতৃত্ব পান তিনি।