অনলাইন ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার সৌদি ক্রাউন প্রিন্স (যুবরাজ) মোহাম্মদ বিন সালমানকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেবেন। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যার পর নিজের বিশ্বব্যাপী ভাবমূর্তি আরো পুনর্বাসন করতে এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করতে চাওয়া সৌদি আরবের এই বাস্তবিক শাসকের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ সফর।
সাত বছরেরও বেশি সময় পর করা তার প্রথম হোয়াইট হাউস সফরে যুবরাজকে বরণ করা হবে ট্রাম্পের নেতৃত্বে জাঁকজমকপূর্ণ আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে।
দুই নেতার আলোচনায় নিরাপত্তা সম্পর্ক, বেসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতা এবং রাজ্যের সঙ্গে বহু বিলিয়ন ডলারের ব্যাবসায়িক চুক্তি এগিয়ে নেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণে কোনো বড় ধরনের অগ্রগতি হওয়ার সম্ভাবনা কম।
সাক্ষাৎটি দুই দেশের—বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি এবং সবচেয়ে বড় তেল রপ্তানিকারক —মধ্যকার গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে তুলে ধরে; ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদে এটিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের একটি বানিয়েছেন, বিশেষত যখন খাশোগির হত্যাকে ঘিরে আন্তর্জাতিক উৎকণ্ঠা ক্রমে স্তিমিত হয়েছে।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো উপসংহারে এসেছিল, ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে খাশোগিকে আটক বা হত্যার অনুমোদন দিয়েছিলেন বিন সালমান। যুবরাজ অপারেশনটি নির্দেশ করার বিষয়টি অস্বীকার করলেও দেশটির বাস্তবিক শাসক হিসেবে তিনি এর দায় স্বীকার করেন।
ওয়াশিংটনে বিন সালমানকে উষ্ণ অভ্যর্থনা দেওয়া খাশোগির হত্যায় সৃষ্ট গভীর টানাপড়েন কাটিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের সর্বশেষ ইঙ্গিত।
হোয়াইট হাউসে কূটনীতির ব্যস্ত দিনে বিন সালমান ওভাল অফিসে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন, পরে ক্যাবিনেট রুমে মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেবেন এবং সন্ধ্যায় অংশ নেবেন একটি আনুষ্ঠানিক ‘ব্ল্যাক-টাই’ নৈশভোজে।
একজন শীর্ষ মার্কিন প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ট্রাম্প মে মাসে সৌদি সফরের সময় দেওয়া ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে আরো প্রকল্প এগিয়ে নিতে চান, যার মধ্যে ডজনখানেক নতুন লক্ষ্যভিত্তিক প্রকল্পের ঘোষণা থাকবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব মঙ্গলবার প্রতিরক্ষা বিক্রি, বেসামরিক পারমাণবিক শক্তিতে বাড়তি সহযোগিতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অবকাঠামোয় বহু-বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ নিয়ে চুক্তি করবে বলে আশা করা হচ্ছে, বলেন ওই কর্মকর্তা, নাম প্রকাশ না করার শর্তে।
ট্রাম্প সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এফ-৩৫ বিক্রি করব’ সৌদিদের কাছে, যারা উন্নত এই যুদ্ধবিমান ৪৮টি কেনার অনুরোধ করেছে।
এটি হবে সৌদি আরবের কাছে প্রথম মার্কিন এফ-৩৫ বিক্রি — যা একটি বড় নীতিগত পরিবর্তন নির্দেশ করবে। এই চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যের সামরিক ভারসাম্য বদলে দিতে পারে এবং ইসরায়েলের যে তথাকথিত ‘গুণগত সামরিক প্রাধান্য’ যুক্তরাষ্ট্র সবসময় বজায় রাখার কথা বলে, সেটির সংজ্ঞাকেও পরীক্ষা করবে। এখন পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যে কেবল ইসরায়েলই এফ-৩৫ পেয়েছে।
সামরিক সরঞ্জাম ছাড়াও সৌদি নেতা নতুন নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চাইছেন।
বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ট্রাম্প কাতারকে দেওয়া প্রতিরক্ষা প্রতিশ্রুতির ধাঁচে একটি নির্বাহী আদেশ জারি করবেন, যদিও এটি সেই ন্যাটো-ধাঁচের আনুষ্ঠানিক চুক্তির পর্যায়ে পৌঁছবে না, যেটি সৌদিরা প্রথমে চেয়েছিল।
রয়টার্স
