অনলাইন ডেস্ক : মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রিয়াদে অবতরণ করলে তাকে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন, স্বর্ণখচিত প্রাসাদ এবং ১ ট্রিলিয়ন ডলারের সম্ভাব্য বিনিয়োগ দিয়ে স্বাগত জানানো হবে। এসব বিনিয়োগের মধ্যে রয়েছে অস্ত্র, মহাপ্রকল্প এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো লাভজনক খাতে বড় ধরনের চুক্তি।
তবে গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে ট্রাম্প এক দীর্ঘদিনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন: আব্রাহাম চুক্তির ধারাবাহিকতায় সৌদি আরব-ইসরায়েল সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ। এই চুক্তির আওতায় আগে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, সুদান এবং মরক্কোর মতো আরব দেশগুলো ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছিল।
সৌদি সরকারের ঘনিষ্ঠ দুই উপসাগরীয় সূত্র এবং এক মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পর্দার আড়ালে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে গাজায় তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে চাপ দিচ্ছে, যা সৌদি আরবের জন্য সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের অন্যতম পূর্বশর্ত।
মার্কিন ও সৌদি উভয় পক্ষের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ট্রাম্পের মূল লক্ষ্য হলো মার্কিন বিভিন্ন খাতে ট্রিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ নিশ্চিত করা। এটি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ৬ হাজার কোটি ডলারের প্রাথমিক প্রতিশ্রুতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা প্রত্যাশা।
ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “আমরা মনে করি খুব শিগগিরই আমাদের কিছু বড় ঘোষণা আসবে, যা আগামী এক বছরে অগ্রগতি বয়ে আনবে।” তবে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, গাজা যুদ্ধের স্থায়ী সমাধান বা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের বিষয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরোধিতার কারণে রিয়াদের সঙ্গে এ ধরনের আলোচনায় অগ্রগতি সম্ভব নয়।
গাজা যুদ্ধের আগে সৌদি যুবরাজ একটি ঐতিহাসিক কূটনৈতিক চুক্তি চূড়ান্ত করছিলেন, যার আওতায় রিয়াদ ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি করত। কিন্তু ইসরায়েলের হাতে ৫২ হাজার ফিলিস্তিনির প্রাণহানি এবং ১৯ লাখ গাজাবাসীর বাস্তুচ্যুত হওয়ার কারণে এই উদ্যোগ স্থগিত হয়।
সৌদি ও মার্কিন কর্মকর্তাসহ ছয়টি সূত্র জানিয়েছে, সৌদি আরবের প্রকৃত শাসক যুবরাজ বিন সালমান ইসরায়েলকে গণহত্যার জন্য দায়ী করেছেন। ফলে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের আলোচনার মূল বিষয় অর্থনীতি ও নিরাপত্তা থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
অ্যাক্সিওস-এর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলমান উচ্চ পর্যায়ের কূটনীতিকে গুরুত্ব দিয়ে ট্রাম্প বৃহস্পতিবার ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ এবং পারমাণবিক আলোচনা বিষয়ে আলোচনা করতে ইসরায়েলের কৌশলগত বিষয়ক মন্ত্রী রন ডার্মারের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেছেন।
ওয়াশিংটন সৌদি আরবের স্বার্থে ইতিবাচক কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের ওপর মার্কিন বোমা হামলা বন্ধের একটি চুক্তি, যা সৌদি যুদ্ধবিরতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। পাশাপাশি বেসামরিক পারমাণবিক আলোচনাকেও সৌদি-ইসরায়েল সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের প্রসঙ্গ থেকে আলাদা করা হয়েছে। ট্রাম্প তার সফরের অংশ হিসেবে ইসরায়েল সফরের কোনো ঘোষণা দেননি।
পাঁচটি শিল্পখাত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সৌদি আরব এবং উপসাগরীয় মিত্ররা এখন ট্রাম্পের কাছে মার্কিন নীতির শিথিলতার অনুরোধ করতে পারে।
কূটনীতিকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই সফরের নেপথ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব পুনর্গঠনের একটি পরিকল্পনা—যেখানে বেইজিং ক্রমাগতভাবে পেট্রোডলার ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে তার অবস্থান বিস্তার করছে।
চীনের অর্থনৈতিক উত্থান মোকাবিলা ট্রাম্পের বৈদেশিক নীতির প্রধান লক্ষ্য হলেও, সৌদি আরবে এটি সহজ হবে না। কারণ, ভিশন ২০৩০ চালুর পর থেকে চীন সৌদি উন্নয়ন পরিকল্পনার অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। জ্বালানি ও অবকাঠামো থেকে শুরু করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি পর্যন্ত বিভিন্ন খাতে চীন প্রভাব বিস্তার করেছে।
সূত্র: রয়টার্স, হারেৎজ