মুরশাদ সুবহানী : দার্শনিক চিন্তাশীল, সমাজ সচেতন, রাজনীতিক, বিদ্রোহী কবি আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি দু:খকে আলিঙ্গন করেই তাঁর বহুমাত্রিক প্রতিভার সাক্ষর রেখে গেছেন। যা আমাদেরকে আলোর পথ দেখাচ্ছে। যতদিন বাংলা-ভাষাভাষী এবং যে কোন ধর্মের মানুষ বিশ্বের যে কোন প্রান্তেই থাকবেন তাঁদের মনের মধ্যে কবি কাজী নজরুল ইসলাম থাকবেন সদা জাগ্রত।

আমাদের জাতীয় কবি, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম’র মধ্যে ছদ্মাবরণ ছিল না। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে রাজনীতির মাঠে তিনি ছিলেন সক্রিয়।
যে সকল মণীষীরা আমাদের লেখনী জগতের পথ প্রর্দশক, অসা¤প্রদায়িক চেতনার কবি আছেন ছিলেন তাঁদের মধ্যে কবি কাজী নজরুল ইসলাম মধ্যে অন্যতম একজন। তিনি একটি যুগের স্রষ্টা। কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত, এবং কবি নজরুল ইসলাম সাহিত্য অঙ্গনে স্থায়ীকাল খুব অল্প সময়ের। কাজী নজরুল ইসলাম বেঁচে থেকেও মৃতবৎ ছিলেন দীর্ঘকাল।

সল্প সময়ে কবি নজরুল ইসলাম গান, কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প উপন্যাসে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। তিনি নিরলস সাহিত্য কর্মে অমর হয়ে আছেন আমাদের মাঝে।

বৃটিশ উপনেবিশক শাসনে নিপীড়িত পরাধীন মজলুম জনগণ। বৃটিশ-ভারতে তখন বৃটিশ খেদাও আন্দোলন জোরদার হচ্ছে। চলছে অসহযোগ আন্দোলন।
সৈনিক জীবনে যুদ্ধ শেষে কলকাতায় এসে নজরুল ৩২ নং কলেজ স্ট্রিটে বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির অফিসে বসবাস শুরু করেন। তার সাথে থাকতেন এই সমিতির অন্যতম কর্মকর্তা রাজনীতিক মুজফ্ফর আহমদ। এখান থেকেই তার সাহিত্য-সাংবাদিকতা জীবন এবং রাজনীতির সাথে যুক্ত হওয়ার মূল কাজগুলো শুরু হয়।

কবি কাজী নজরুল ইসলাম কুমিল্লা থেকে কিছুদিনের জন্য দৌলতপুরে আলী আকবর খানের বাড়িতে আসেন। এখানে যতদিন ছিলেন তিনি পরিণত হন আরও তেজদীপ্ত সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে। তিনি শোভাযাত্রায় ও সভায় যোগ দিয়ে গান গাইতেন। এ সময় তার রচিত ও সুর করা গানের মধ্যে “এ কোন পাগল পথিক ছুটে এলো বন্দিনী মার আঙ্গিনায়, আজি রক্ত নিশি-ভোরে/ একি এ শুনি ওরে /মুক্তি কোলাহল বন্দী শৃংঙ্খলে।” ইত্যাদি। দৌলতপুরে ১৭ দিন থাকার পর তিনি স্থান পরিবর্তন করেন। ১৯২১ সালের নভেম্বর মাসে আবার কুমিল্লায় ফিরে যান। ২১ নভেম্বর ছিল ভারতব্যাপী হরতাল। কবি কাজী নজরুল ইসলাম আবার পথে নেমে আসলেন, অসহযোগ মিছিলের সাথে শহর প্রদক্ষিণ করেন আর সেই সাথে তাঁর তেজদীপ্ত গান। নজরুলের এ সময়কার কবিতা, গান ও প্রবন্ধের মধ্যে দ্রোহ-বিদ্রোহের রূপ ফুটে উঠেছে। যার মধ্যে ‘বিদ্রোহী’ কবিতা অন্যতম। এই কবিতাটি ১৯২২ সালে প্রকাশিত হয় এবং সমগ্র ভারতে খ্যাতি লাভ করে। বিদ্রোহী কবিতায় কবি লিখলেন, বল বীর, চির উন্নত মম শির …মহা বিদ্রোহী রণক্লান্ত /আমি সেই দিন হব শান্ত/ যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন -রোল আকাশে -বাতাসে ধ্বনিবে না, / অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ, ভূমে রণিবে না,/ আমি চির বিদ্রোহী বীর – বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির উন্নত শির।’ টনক নড়ে বৃটিশ রাজের। ১৯২২ সালের ১২ আগষ্ট নজরুল ধূমকেতু পত্রিকা প্রকাশ করেন। ধূমকেতু সপ্তাহে দুইবার প্রকাশিত হত। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময় সশস্ত্র বিপ্লববাদের আর্বিভাব ঘটে। এই পত্রিকাকে আর্শীবাদ করে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখে ছিলেন, ‘কাজী নজরুল ইসলাম কল্যাণীয়েষু, আয় চলে আয়রে ধূমকেতু। আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু, দুর্দিনের এই দুর্গশিরে উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন।’ রবি ঠাকুরের এই বাণী পত্রিকার প্রথম পাতার শীর্ষে লেখা থাকতো।
ধূমকেতু পত্রিকায় ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯২২ সংখ্যায় নজরুলের কবিতা ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ প্রকাশিত হয়। এই কবিতা প্রকাশিত হওয়ায় ৮ নভেম্বর পত্রিকার ওই সংখ্যাটি নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। একই বছর নজরুলের যুগবানী প্রবন্ধগ্রন্থ বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং এ দিন তাঁকে কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তাঁকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। ১৯২৩ সালের ৭ জানুয়ারী নজরুল বিচারাধীন কারা বন্দী হিসেবে আত্মপক্ষ সর্মথনে এক জবান বন্দী প্রদান করেন; তৎকালের চীফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিষ্ট্রেট সুইনহোর আদালতে। এই জবানবন্দীর মধ্যে দ্রোহ-বিদ্রোহ রূপ স্পষ্ট হয়ে অকুতোভয় কাজী নজরুল ইসলাম এর এই জবানবন্দী বাংলা সাহিত্যে রাজবন্দীর জবানবন্দী হিসেবে সাহিত্য মর্যাদা লাভ করেছে। কাজী নজরুল ইসলাম এই জবানবন্দীতে বলেন, ‘‘… আমার উপর অভিযোগ, আমি রাজবিদ্রোহী। তাই আমি আজ রাজকারাগারে বন্দি এবং রাজদ্বারে অভিযুক্ত। … আমি কবি, আমি অপ্রকাশ সত্যকে প্রকাশ করার জন্য অমূর্ত সৃষ্টিকে মূর্তিদানের জন্য ভগবান কর্তৃক প্রেরিত। কবির কণ্ঠে ভগবান সাড়া দেন, আমার বানী সত্যের প্রকাশিকা ভগবানের বাণী। সেবানী রাজবিচারে রাজদ্রোহী হতে পারে, কিন্তু ন্যায় বিচারে সে বানী ন্যায়দ্রোহী নয়, সত্যদ্রোহী নয়। সত্যের প্রকাশ নিরুদ্ধ হবে না। আমার হাতের ধূমকেতু এবার ভগবানের হাতের অগ্নি মশাল হয়ে অন্যায় অত্যাচার দগ্ধ করবে..।’

বিচারক সুইনহোর নিজেও একজন কবি ছিলেন। বিচারের পর (১৬ জানুয়ারী) নজরুলকে এক বছরের সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়। নজরুল যখন আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে (১৯২৩ সালের ২২ জানুয়ারী) বন্দী জীবন অতিবাহিত করছিলেন কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ তার বসন্ত গীতিনাট্য গ্রহ্ণটি কাজী নজরুল ইসলামকে উৎসর্গ করেন। এতে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম আনন্দিত হন এবং তিনি সেই আনন্দে কারাগারে বসেই ‘আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে’ কবিতাটি লেখেন।

মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে অহিংস – অসহযোগ আন্দোলন, মাওলানা মোহাম্মদ আলী এবং শওকত আলীর নেতৃত্বে খিলাফত আন্দোলন চলছিল। মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলন ছিল অহিংস এবং শান্তপূর্ণ উপায়ে ভারতবর্ষ থেকে ইংরেজ শাসকদের বিতারিত করা। অপরদিকে, খিলাফত আন্দোলনের উদ্দেশ্যও বৃটিশ খেদাও আন্দোলন ছিল। মোস্তাফা কামাল পাশার নেতৃত্বে তুরস্কে সালতানাত উচ্ছেদের মাধ্যমে নতুন তুরস্ক গড়ে তোলার আন্দোলনের প্রতি কবি নজরুল ইসলামের সমর্থন ছিল। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ ও খিলাফতের আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এর প্রধান কারণ ছিল এই সকল সংগ্রামই ছিল ভারতীয় হিন্দু –মুসলমান, খ্রীষ্টান, বৌদ্ধ এবং পরাধীন ভারতে বসবাসরত অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর একটি অভিন্ন লক্ষ্য। আর তা হলো বৃটিশ শাসনের অবসান। যে কারণে নজরুল এই সকল আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন।

কাজী নজরুল ইসলাম চট্রগ্রামে (১৯২৯ সালে ) এডুকেশন সোসাইটির প্রতিষ্ঠা উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে তাঁর ভাষণে বলেছিলেন, ..‘‘কোন মুসলমান যদি তার সভ্যতা, ইতিহাস, ধর্মশাস্ত্র ইত্যাদির কোন কিছু জানতে চায় তা’হলে তাঁকে আরবী-ফার্সী বা উর্দুর দেওয়াল টপকাবার জন্য আগে ভালো করে কসরৎ শিখতে হবে।….জ্ঞান-বিজ্ঞানে শিল্পে-সঙ্গীতে -সাহিত্যে মুসলমানদের বিরাট অবদানের কথা হয় তারা জানেই না, কিংবা শুনলেও …. মনে করেন ও শুধু কাহিনী। ….হয়তো একদিন ছিল, যখন হিন্দুরা মুসলমানদের অশ্রদ্ধা করত না।’’ কবির এই ভাষণ ছাড়াও অন্যান্য ভাষণে এবং লেখায় পরিলক্ষিত হয়, অসা¤প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী কবি ছিলেন। তাঁর অসা¤প্রদায়িক চেতনা ও লেখনীর জন্য তিনি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার কাছে সমাদৃত। তাঁর নিজের শেষ ভাষণে উল্লেখ্ করেন – “কেউ বলেন আমার বানী যবন কেউ বলেন কাফের। আমি বলি ও দুটোর কোনটাই না। আমি শুধু হিন্দু মুসলিমকে এক জায়গায় ধরে নিয়ে হ্যান্ডশেক করানোর চেষ্টা করেছি, গালাগালিকে গলাগলিতে পরিণত করার চেষ্টা করেছি।”

১৯৪০ সালে ৪২ বছর বয়সী কবি নজরুল নবযুগ পত্রিকায় সাংবাদিকতা, সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি বেতারে কাজ করছিলেন। এ সময় মাত্র ২ বছরের মধ্যে এই অসাধারণ এবং বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম অসুস্থ হয়ে পড়েন (১৯৪২ সালে)। তিনি বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন। তার এই অসুস্থতার বিষয়টি জানা যায় ওই বছরের জুলাই মাসে। প্রথম দিকে হোমিওপ্যাথি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা করানো হয়। এই চিকিৎসায় তাঁর কোন উন্নতি হয়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে সেই সময় তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ইউরোপে পাঠানো যায় নি।

এই সালের শেষ দিকে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। প্রায় ১০ বছর নজরুল পরিবার ভারতে নিভৃত সময় কাটাতে থাকেন। ভারতের অভ্যন্তরে ভাল কোন চিকিৎসার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। পরে ১৯৫২ সালে কবি নজরুলের আরোগ্যের জন্য নজরুল চিকিৎসা কমিটি গঠন করা হয়। এর পেছনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন ভারতের বিখ্যাত রাজনীতিক শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি। তিনি সহযোগিতা করেন কবির চিকিৎসা রাঁচিতে করানোর জন্য। কবি এখানে চার মাসকাল ছিলেন। এরপর ১৯৫৩ সালে কবি নজরুল ও কবিপতিœ প্রমিলা দেবীকে লন্ডনে পাঠানো হয়। এখানে বেশ কয়েকজন চিকিৎসক তাঁর রোগ নির্ণয়ের চেষ্টা করেন। এদের মধ্যে ছিলেন, ডা: রাসেল ব্রেইন, উলিয়াম সেজিয়েন্ট এবং ম্যাককিস্ক। তাঁর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান, নজরুল মস্তিষ্কের দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত। এই রোগ ভাল হওয়া অসম্ভব। রাসেল ব্রেইনের মতে নজরুল ‘ ইনভল্যুশনাল সাইকোসিস’ রোগে ভুগছেন। লন্ডনে এয়ার এনসেফালোগ্রাফি এক্স-রে করানো হয়। এক্স-রে দেখে চিকিৎসকরা বলেন, কাজী নজরুল ইসলামের মস্তিষ্কে ফ্রন্টাল লোব সংকুচিত হয়ে গেছে। ড: ম্যাককিস্ক এবং কয়েকজন নিউরো ও ব্রেইন স্পেশালিস্ট সার্জনরা অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন। এই অপারেশনের নাম ছিল ‘ম্যাককিস্ক অপারেশন।’ ড: রাসেল ব্রেইন এই অপারেশনের বিরোধিতা করেন।ফলে কবি নজরুলের মস্তিষ্ক অপারেশন করা আর হয়নি। বিদ্রোহী কবির শুভার্থীদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ভিয়েনায় চিকিৎসক ড: হ্যান্স হফের অধীনে ভর্তি করা হয়। এই চিকিৎসক নোবেল বিজয়ী চিকিৎসক জুলিয়াস ওয়েগনার জাউরেগের অন্যতম ছাত্র ছিলেন। ১৯৫৩ সালে ৯ ডিসেম্বর কবি কাজী নজরুলকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ড. হ্যান্স হফ নিশ্চিতভাবে বলেন যে, কবি ‘ পিকস ডিজিজ’ নামক একটি নিউরন ঘটিত সমস্যায় ভুগছেন। বর্তমান অবস্থা থেকে তাঁকে আরোগ্য করে তোলা অসম্ভব। আগে হলে চেষ্টা করা যেত। বৃটিশ চিকিৎসকরা বিদ্রোহী কবির চিকিৎসার জন্য বড় অংকের ফি দাবি করলেও ইউরোপের অন্য অংশের চিকিৎসকরা কোন ফি নেননি। কাজী নজরুল ইসলাম ইউরোপ থেকে ভারতে ফিরে আসেন ১৯৫৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে ‘‘বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের দ্বিতীয় পুত্র ছিলেন কাজী বুলবুল। তিনিও ছিলেন অসামান্য মেধাবী। সবাই তাকে কবি নজরুলের যোগ্য উত্তরসূরি ভাবতেন। কবি তাকে অসম্ভব ভালোবাসতেন। ছোটকালে কবি নজরুল তার পুত্রকে একটি গজল শিখিয়ে দিয়েছিলেন। বুলবুল সেই গজলটি কচি কণ্ঠে অত্যন্ত সুমধুর সুরে বলতেন। পুত্রের কণ্ঠে মুগ্ধ হয়ে যেতেন তিনি ‘’
কবির এই পরম প্রিয় পুত্র কাজী বুলবুল মাত্র সাড়ে চার বছর বয়সে বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
এরপর থেকেই কবি নজরুল ইসলাম শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল হতে শুরু করেন।’’

যে মানুষটি আড্ডা মাতিয়ে রাখতেন, সাহিত্য চর্চা গান নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন।
বৃটিশ-ভারতে বৃটিশ পুলিশ-আদালত কর্তৃক কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি হয়েছে। তাঁকে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। এক সময় তিনি উচ্চস্বরে কথা বলে উঠেন; বলা হলো পুলিশ-গোয়েন্দা জেনে যাবে – এ কথা শুনে তিনি অট্টহাসি দিয়ে বললেন; বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল বৃটিশ পুলিশের ভয়ে লুকিয়ে আছে এ কথা শুনেই আমার হাসি পাচ্ছে। এই হলেন অসীম সাহসী কবি কাজী নজরুল ইসলাম।

১৯৫৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর পর থেকে বাকরুদ্ধ কবি কাজী নজরুল ইসলাম কলকাতায় বসবাস করতে থাকেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর বিশেষ উদ্যোগে কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ভারত সরকারের অনুমতিক্রমে ১৯৭২ সালের ২৪ মে তারিখে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৭৬ সালের জানুয়ারী মাসে তাঁকে ‘একুশে পদকে’ ভূষিত করা হয়।বাংলাদেশ সরকার কবির চিকিৎসার সব ধরণের চেষ্টা করেন। কিন্তু কবির স্বাস্থ্যের কোন উন্নতি করা সম্ভব হয়নি। ১৯৭৪ সালে কবির কনিষ্ঠ পুত্র বিখ্যাত গিটার বাদক কাজী অনিরুদ্ধ মৃত্যু বরণ করেন। ১৯৭৬ সালে কবির স্বাস্থ্যের অবনতি হলে তাঁকে তৎকালে পিজি হাসপাতাল, বর্তমানে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই সালের ২৯ আগস্ট তারিখে কবি কাজী নজরুল ইসলাম মৃত্য বরণ করেন। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নামাযে জানাযায় বিপুল সংখ্যক ধর্মপ্রাণ মুসলমান শরিক হন। তাঁর মৃত্যুতে বাংলাদেশে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় শোক দিবস পালন করা হয়। ভারতের আইনসভায় তাঁর সম্মানে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
তাঁকে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের মসজিদের পাশে দাফন করা হয়। বিদ্রোহী,জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর একটি গানে লিখেছিলেন, ‘‘ মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই, যেন মুয়াজ্জিনের আযান শুনতে পাই”। মহান আল্লাহ তাঁর ইচ্ছা পূরণ করেছেন।

স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে চির নিদ্রায় শায়িত আছেন আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। আমাদের কিসের শঙ্কা -ডঙ্কা – ভয়।
আমরা ‘চির উন্নত শির’ নিয়ে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর ৪৫ তম মৃত্যু বার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধা।
ফ্লোরিডা, ইউএসএ
লেখক : (শিল্প-সাহিত্যের সেবক, বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক রাইটার, অ্যাডভোকেট, জজকোর্ট, পাবনা, বাংলাদেশ)
ফ্লোরিডা, ইউএসএ প্রবাসী।