নিদারুণ বায়ান্ন বসন্ত

সেদিনের আকাশের কথা বলছি-
বায়ান্ন বসন্তের আকাশ দেখেছি:
সেদিনের আকাশের তারা-পথ ছেঁয়ে গিয়েছিলো তিমির-তমসায়,
কেননা ফাগুনের মলয় বাতাসে ভেসে ভেসে
উড়ছিল শহীদের রক্ত মাখা কুর্তা নিয়ে আকাশে!
সবুজ মাঠ লাল হয়ে গিয়েছিলো- তাই সেবার অভিমানে
আসেনি বসন্ত বাংলায়!
রবির কর গুটিয়ে নিল তার কিরণ-রশ্মি তাই তারারা
দিনেই জেগে চেয়ে রয় উত্কন্ঠায়!
সপ্তর্ষি, শোকতারা নিরবে অশ্রু ঝরায়!
বিনা মেঘে বৃষ্টি- বজ্রপাত, শীতেই ভাদরের কান্না শুরু হয়ে যায়।
আমের মুকুল এলো না সেবার, শীতের খোলস ছেড়ে মুখ বাড়ায়নি
একটিবারও রক্তবর্ণা কৃষ্ণচূড়া।
মৃদু মন্দ হাওয়ায় নেই বাসন্তিকা সুগন্ধি আতর, ফোটেনি
গাঁদা, রক্তকাঞ্চন, কিংবা রাধাচূড়া!
বসন্তের বাতাস বাংলায় সেবার গাফেলায় গোমরে কেঁদে কেঁদে উড়ছিল!
বুকের রোদনে বাষ্পাকুল নয়নে বেলি, বকুল, গুল্মফুল ভূমেই হুহুরবে ঝুরছিল!
বায়ান্ন মানেনি পুঞ্জিকার শাসন তাইতো ফুটেনি বাংলায়-
সে বসন্তে- প্রবাল,পলাশ কিংবা শিমুল,
ঋতুরাজ আগমনের বারতা জানায়নি মধুবতী মাদার, বোলতা,
অশোক কিংবা ভ্রমর-ভিমরুল!

প্রকৃতি খুলেনি একটিও তার দখিণা দুয়ার-
তাইত হিমাঙ্কিনীর চাদরে শরীর মুড়ে হা-হুতাশে ছটফটে গুমরে
পাখপাখালি, বসন্ত বাউরি,
বুড়িগঙ্গার ধুলোচরে অভিমানে ঝিমায় কোকিল, কবুতর, বাদর এবং বাদুড়ী!
প্রকৃতি খুলেনি একটিও তার ফাগুনিয়া বাতায়ন-
ফাগুন বিষন্ন তাই- চৈতির অনুরাগে-গায়নি মহুয়ারা কোনো প্রেমের গান!
ঝরা পাতার মর্মর ধ্বনি নেই, কথাও শুনিনি মিলনের সে
মধুমাসে একটিও কোকিলের কুহুতান!
নিথর ছিল যেন বৃক্ষ লতা,
ফুল নেই বাগানে, ফলবতী মধুবনে; বিমনা-বিরস ঊনিশ শত
বায়ান্নের বেদন-বিরান-বসন্ত!
অনেক কেঁদেছিলো! দেবদারু কানন কেঁদেছিল,
কেঁদেছিল- দেয়ালিপোকা, প্রজাপতি, হিমঝুরি,
আরও কেঁদেছিল মধুপুরের শালবন-মহুয়া-
মধুমিতা বিষন্নে জানায়নি তার মধুপতিরে স্বাগত!
হায়রে নিরাগ নিদারুণ বায়ান্ন-বসন্ত!!

এক আঁধারে একা ঘরে/আটই ফাল্গুন

সেদিনের আকাশ, ফাগুনের বাতাস, অশ্লেষা-পূর্ণ অম্বর.
খয়েরি সমেত অশৌচ শোনিত রুধি রঞ্জিত ঋতু-বর।
কপোত-কপোতি বিমর্ষ তমালে, ডাকে নি কুহু
তার প্রিয়ারে।
বৃক্ষলতা বিরাগ বিরস, বায়ান্নের বসন্ত রোদনে হাহাকারে!
মলয় মারুত মলয়ানিল- এসেছিলো চুপিসারে কবি দ্বারে-
বলেছিলো সমাদরে, অভিমানে অনুবারে, “শুনোনি কি
কুচকাওয়াজ রাজপথ ভরে উড়ে!
ভাষার দাবি মানতে হবে, একশত চুয়াল্লিশ ভাঙতে হবে,
একুশের দিব্য দুপুরে?”

দিনের বেলা নির্জন ঘরে, নিরাল কঠিন হাজত কুঠিরে
ব্রত রয়েছেন বঙ্গ-পিতা।
শুনছেন কান পেতে, ডাকছে রাজপথে-ভাষার কুচকাওয়াজ-
বিদগ্ধ বিরল সেই ঢল বহতা।

হঠাত-ধুড়ু…..ম, গুড়ু…ম! শব্দ আগ্নেয়াস্ত্রের গুলন্দাজি আওয়াজ!
লুন্ঠিত হল সালাম, বরকত, পিষ্ঠিত চূর্ণিত কথার দাবির
ন্যায্য কুচকাওয়াজ।
রফিক, জব্বার, রিকশাচালক, আরো কত নাম না জানা খোকা
হয়তো হবে সেগুন।
বঙ্গ সোনা অকালে ঝরিল, কথার দাবি দলিত হল-
তেরো শত আটান্নর আটই ফাল্গুন!
“গুলি করার কি দরকার আবার!” ঝুরেন ভেবে নিজ স্বভাবে-
বঙ্গ-পিতা মুজিবর-
একেলা তিনি নিরন্তর, নাই বন্ধু সহচর, করার আঁধার কালো ঘর!