তাপমাত্রা ছিল হিমাঙ্কের নিচে, তার উপর ছিল তুষারপাতের সম্ভাবনা। কিন্তু কিছুই আটকাতে পারেনি টরন্টো দূর্গাবাড়িতে আয়োজিত, “শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন ও সংগীত প্রতিযোগিতা”য় আগত শিশু কিশোর-কিশোরীদের। গত পহেলা ফেব্রুয়ারি টরন্টো দূর্গাবাড়ি আয়োজন করে সরস্বতী পূজা পরবর্তি এই মিলনমেলার। প্রবাসে জন্মগ্রহণ এবং বেড়ে ওঠা প্রজন্মের মাঝে বঙ্গদেশীয় সংস্কৃতির চর্চা অব্যাহত রাখার প্রয়াসে এই অনুষ্ঠান।

সরস্বতী হলেন জ্ঞান, সংগীত, শিল্পকলা, বুদ্ধি ও বিদ্যার হিন্দুদেবী। বৈদিক যুগ থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত তিনি হিন্দুধর্মের একজন গুরুত্বপূর্ণ দেবী। হিন্দুরা বসন্তপঞ্চমী তিথিতে (মাঘ মাসের শুক্লাপঞ্চমী তিথি) সরস্বতী পূজা করে। এই দিন ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের হাতেখড়ি হয়। পশ্চিম ও মধ্য ভারতে জৈনরাও সরস্বতীর পূজা করেন। জ্ঞান, সংগীত ও শিল্পকলার দেবী হিসেবে ভারতের বাইরে জাপান, ভিয়েতনাম, বালি (ইন্দোনেশিয়া) ও মায়ানমারেও সরস্বতী পূজার চল আছে।

বিকেল পাঁচটায় পৃথক পৃথক হল্ রুমে শুরু হয় চিত্রাঙ্কন এবং সঙ্গীত প্রতিযোগিতা। দারুন উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায় চিত্রাঙ্কনে অংশগ্রহণকারী শিশুদের মাঝে। সময় নির্দিষ্ট হওয়ার সাথে সাথে রঙ আর পেন্সিলের আঁকায় ভরে উঠতে থাকে তাদের সাদা পাতাগুলো। কল্পনার রাজ্যকে তারা তুলে আনে তাদের মনের ক্যানভাসে। বিচারকের দায়িত্বে ছিলেন অভিজিত পাল।

আর তাঁর সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন দেবাশীষ দে। মোট প্রতিযোগী ছিলো ২৭ জন। দুটো দলে ভাগ করে বিজয়ী নির্ধারিত করা হয়। জুনিয়র গ্রুপে প্রথম হয়েছে পরশিয়া পুরকায়স্থ, দ্বিতীয় অঙ্কিতা রায় এবং তৃতীয় হয় আরত্রিকা পাল। সিনিয়র গ্রুপে প্রথম হয়েছে অরুন্ধুতি রায়, দ্বিতীয় নিলীমা পাল এবং তৃতীয় হয়েছে শ্রেয়সী পাল।

সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্বে ছিলেন টরন্টোর বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ সীমা ভট্টাচার্য। সুরের মূর্ছনায় বিমোহিত থাকেন সমবেত শ্রোতাবৃন্দ। ৫-১০ বছর বয়সী বিভাগে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় হয়েছে যথাক্রমে অঙ্কিতা কর্মকার, নিবেদিতা রায় এবং জয়িতা চৌধুরী। ১১-১৭ বছর বয়স বিভাগে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় হয়েছে যথাক্রমে রায়ান জামান মৃধা, মাধূর্য বিশ্বাস এবং অনন্ত নির্ঝর বড়ুয়া। এছাড়াও আরো সঙ্গীত পরিবেশন করেন অস্মিতা ব্যানার্জি, তিথি ভট্টাচার্য, তনুশ্রী ভট্টচার্য, জ্যোতি পুরকায়স্থ এবং প্রিয়ন্তি।

এরপর নৃত্যের ছন্দে দর্শকদের মুগ্ধ করতে আসে সুকন্যা নৃত্যাঙ্গন। শ্রুতি মান্না এবং শিঞ্জন নৃত্য একাডেমির ছাত্রিবৃন্দ। “আমরা করব জয়”- এই বিখ্যাত গানের সাথে নৃত্য পরিবেশন করে ক্ষুদে দুই নৃত্যশিল্পী শ্র্যিা সাহা এবং রিয়ান সাহা। কি-বোর্ডে গান বাজিয়ে শোনায় স্নেহাশীষ পাল। পুরো অনুষ্ঠানে তবলায় এবং কি-বোর্ড বাজিয়েছিলেন ভানু গোমেজ ও রিতিকা চক্রবর্তি। উপস্থাপনায় ছিলেন ইভা নাগ এবুং জ্যোতি পুরকায়স্থ। সাউন্ড সিস্টেম এ ছিলেন দেবাশীষ সাহা। সার্বিক পরিকল্পনা এবং পরিচালনায় ছিলেন ইভা নাগ।

এছাড়াও সরস্বতী দেবির অঞ্জলি প্রদানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। পরিচালনা করেছিলেন পুরোহিত অজয় চক্রবর্তি। স্কারবরো ইস্কন কতৃক প্রভু অমল ঠাকূরের নেতৃত্তে গীতা শিক্ষা, বিনামূল্যে গীতা প্রদানের আয়োজন ছিল। দর্শকদের সরাসরি অংশগ্রহন, প্রশ্নোত্তর এবং পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনার মাধ্যমে গীতা শিক্ষাকে জনপ্রিয় করার প্রচেষ্টাই ছিল এ পর্বের উদ্দেশ্য।

পুরস্কার বিতরন করেন সম্মানীয় এম্পিপি ডলি বেগম এবং উইলিয়াম স্মিথ, সেক্রেটারি অব অনারেবল কাউন্সিলর গ্যারি ক্রোফোর্ড। পরিশেষে মিলন চৌধুরী এবং প্রানেষ দাসের রন্ধঙ্কৃত সুস্বাদু খিচুড়ি আর সবজি খাওয়ার মাধ্যমে যবনিকা ঘটে একটি সুন্দর সন্ধ্যার। বাহিরে তখনো তুষার পড়ছে। প্রকৃতিতে আনন্দ না থাকলেও সব শিশুদের মুখেই ছিল হাসি, আনন্দের রেশ। প্রবল উৎসাহ আর উদ্দীপনার সাথে সফল পরিসমাপ্তি হয় এই মহতী উদ্যোগের।