মাল্টিকালচারাল ফিল্ম স্ক্রীনিং কর্মসূচীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘আমার ৫০’ এর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে প্রামাণ্যচিত্রের কপি তুলে দিচ্ছেন এমপিপি ডলি বেগম (মাঝে)।

মনিস রফিক: গত ১৩ আগস্ট, শুক্রবার, টরন্টোর ৩০০০ ড্যানফোর্থ এভিনিউ’র টরন্টো ফিল্ম ফোরামের কার্যালয়ে চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও সিনেমাটোগ্রাফার মিশুক মুনীরের দশম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সাপ্তাহিক মাল্টিকালচারাল ফিল্ম স্ক্রীনিং এর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন স্ক্যারবোরো সাউথ-ওয়েস্ট এর এমপিপি ডলি বেগম।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক এবং চলচ্চিত্র ক্যামেরাম্যান তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর ২০১১ সালের ১৩ই আগস্ট মানিকগঞ্জের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে আরো তিনজন সহকর্মীসহ এক মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় প্রাণ হারান। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ১৯৮২ সালে শিল্পী এস এম সুলতানের জীবন ও কর্ম নিয়ে তিনি তাঁর প্রথম প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘আদমসুরত’ নির্মাণ শুরু করেন। তাঁর প্রথম চলচ্চিত্রের ক্যামেরাম্যান হিসেবে কাজ করেন মিশুক মুনীর। ১৯৯৫ সালে নির্মিত তারেক মাসুদের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘মুক্তির গান’ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য প্রামাণ্য চলচ্চিত্রসমূহ হচ্ছে, ‘মুক্তির কথা’, ‘তাহাদের কথা’, ‘নারীর কথা’ ও ‘কানসাটের পথে’। তাঁর নির্মিত কাহিনী চলচ্চিত্র ‘মাটির ময়না’ পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসব ‘কান’ এ ক্রিটিক এওয়ার্ড অর্জন করে। এ ছাড়াও চলচ্চিত্রটি পৃথিবীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ উৎসবে সম্মানিত হয়। তারেক মাসুদ এর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাহিনী চলচ্চিত্রসমূহ হচ্ছে; ‘অন্তর্যাত্রা’, ‘রানওয়ে’ ও ‘নরসুন্দর’। বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ২০১২ সালে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করে।

বাংলা সাহিত্যের খ্যাতনামা নাট্যকার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরী সন্তান মিশুক মুনীর প্রায় এক দশক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। তিনি বাংলাদেশের একুশে টেলিভিশন, বিবিসি, ইংল্যান্ডের চ্যালেন ফোর, কানাডার রিয়েল নিউজ, সিবিসি এবং ডিসকোভারী হেলথ এ কাজ করেন। মৃত্যুর সময়ে তিনি বাংলাদেশের এটিএন নিউজ এর সিইও হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কানাডার চলচ্চিত্র নির্মাতা পল জে ও নিলোফার পাজিরা নির্মিত ‘রোড টু কান্দাহার’ প্রামাণ্য চলচ্চিত্রে তিনি ডিরেক্টর অব সিনেমাটোগ্রাফী হিসেবে কাজ করেন। ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার মিশুক মুনীরকে মরণোত্তর একুশে পদকে সম্মানিত করেন। মিশুক মুনীর দীর্ঘদিন কানাডার টরন্টো শহরে বসবাস করেছেন।

মাল্টিকালচারাল ফিল্ম স্ক্রীনিং এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে আগস্ট মাসে মৃত্যুবরণকারী তারেক মাসুদ-মিশুক মুনীর ছাড়াও, ক্ষণজন্মা বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, শামসুর রাহমান, শহীদ কাদরী, হূমায়ন আজাদ এবং ক্ষুদিরাম বসুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ৭ মিনিটের একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।
মাল্টিকালচারাল ফিল্ম স্ক্রীনিং এর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এখন থেকে প্রতি শুক্রবার টরন্টো ফিল্ম ফোরামের মাল্টিকালচারাল ফিল্ম স্ক্রীনিং সেন্টারে প্রায় ২৫ জনের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও ভাষার শৈল্পিক ছবির প্রদর্শনী হবে। এ প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। সাপ্তাহিক মাল্টিকালচারাল ফিল্ম স্ক্রীনিং এর সমন্বয়কারী হিসেবে বিদ্যুৎ সরকার এবং সচিব হিসেবে সাহিদুল আলম টুকু দায়িত্ব পালন করবেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শকদের সামনে তাদেরকে এবং টরন্টো ফিল্ম ফোরামের ফিল্ম স্ক্রীনিং সম্পাদক রেজিনা রহমানকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।

মাল্টিকালচারাল ফিল্ম স্ক্রীনিং এর প্রথম চলচ্চিত্র হিসেবে প্রদর্শিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে টরন্টো ফিল্ম ফোরামের সদস্যদের দ্বারা নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘আমার ৫০’। উল্লেখ্য, ‘আমার ৫০’ চলচ্চিত্রে টরন্টো, মারখাম, মিশিসাগা এবং ব্রামটনের বসবাসরত পাঁচ জন মুক্তিযোদ্ধার যুদ্ধ অভিজ্ঞতা নির্মিত হয়েছে। চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে প্রামাণ্যচিত্রের কপি তুলে দেন এমপিপি ডলি বেগম। সাপ্তাহিক মাল্টিকালচারাল ফিল্ম স্ক্রীনিং কর্মসূচীর অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা আকবর কবীর, মুক্তিযোদ্ধা শওকত হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা সানাউল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা এম আর জাহাঙ্গীর, ফয়েজ নুর ময়না, টরন্টো ফিল্ম ফোরামের সভাপতি এনায়েত করিম বাবুল এবং ডলি বেগম এমপিপি। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন টরন্টো ফিল্ম ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মনিস রফিক।