Home কানাডা খবর টরন্টো মাতালো ‘মাটি ও মা’

টরন্টো মাতালো ‘মাটি ও মা’

মম কাজী : হেমন্তের পাতাঝড়া প্রহরের আগমুহূর্তে প্রকৃতিতে যখন লাগে রঙের ছটা, সুদূর উত্তরমেরু থেকে শীতের আগমনী বার্তা বয়ে আনে চপলা শীতল হাওয়া, তখন আমরা টরন্টোয় বাসকরা কিছু বাঙালি ক্লজেটে লুকিয়ে রাখা ভারি জ্যাকেটগুলো বের করি আর লম্বা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলি এবং হয়ত তখনই ফেলে আসা উষ্ণ বাংলাদেশের জন্য হৃদয়ের গভীর থেকে হাহাকার বের হয়ে আসে। আর দেশের কথা মনে হলেই তো মনে হয় মায়ের কথা, মাটির কথা। আহা… মাটি ও মা – প্রাণের এই স্পন্দনকে কি কখনও ভোলা যায়? প্রাণের এই অনুভূতিটিকে মনের গহিন থেকে বের করে এই শহরের নানা বর্নের দর্শকদের সামনে অত্যন্ত প্রাণবন্তভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মোহাম্মদ আলমগীর আলম আয়োজিত “ভুইলো না আমারে- মাটি ও মা” অনুষ্ঠানে।

গত ১৯ অক্টোবর টরন্টোর অত্যন্ত বিখ্যাত ড্যানিয়েল স্পেকট্রাম হলে আয়োজন করা হয় “মাটি ও মায়ের” এই অনুষ্ঠানটি। এখানে দর্শকসারিতে শহরের স্বনামধন্য বহু বাঙালি এবং অন্যান্য দেশের মানুষেরা উপস্থিত থেকে উপভোগ করেছেন শিল্পীদের পরিবেশনা। অনুষ্ঠানটি মূলত ছিল গানের ভূবনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র আইরিন আলমের একক পরিবেশনা। আইরিন আলম ছোটবেলা থেকেই গানের সাথে জড়িত। তালিম নিয়েছেন তার নিজ শহর কুমিল্লায় এবং কাজ করেছেন বিখ্যাত “শাপলা-শালুকের” সাথে। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের একজন এনলিস্টেড শিল্পীও ছিলেন। নজরুল ও রবীন্দ্র সংগীতে বিশেষ তালিম নিলেও তিনি তার বলিষ্ঠ কন্ঠ কাজে লাগিয়েছেন বাংলাদেশের মাটির গান পল্লীগীতির মাঝে। আলোচিত অনুষ্ঠানটিতে তিনি পরিবেশনা করেন এই মাটির গানগুলোই। জাতীয় সংগীতের পরে পর পর ১২টি গান পরিবেশন করেন তিনি। তার মধ্যে ছিল প্রেমের গান, বিরহের গান, দেশের গান, পাহাড়ি গান, আধ্যাত্মিক গানসহ আরও বেশকিছু চমৎকার পরিবেশনা। দেশের গানে তার সাথে সঙ্গ দিয়েছিলেন তার অত্যন্ত যোগ্য দুই কন্যা আফিয়া ও সুমাইয়া। গানের মাঝে “ইন্দু বালা”, “রঙের দুনিয়া”, মাটির গাছে লাউ”, “বিহুরী লগন” ইত্যাদি গান তুমুল দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে।

অনুষ্ঠানটিতে অত্যন্ত চমকপ্রদ উপকরনের মধ্যে ছিল সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী দু’টি ড্রামার দলের উপস্থাপনা। প্রথমটি ছিল “মুহতাদি আফ্রিকান ওয়ার্লড ড্রামারস” যাদের পরিচালনায় ছিলেন ল্যান্স কামবারবাখ। তাঁর অত্যন্ত প্রাণোচ্ছল নেতৃত্বে দর্শকের হৃদয়ে ছন্দের দোলা দিয়ে উপস্থাপন করেন এই যন্ত্রশিল্পীরা। দ্বিতীয়টি ছিল “ইশিন ডাইকো জাপানিজ ড্রামার গ্রæপ”- নারীদের এই দলটি শুধু ড্রাম বাজানো নয়, বরং তাদের পোশাক এবং অঙ্গভঙ্গীর মাধ্যমেও উপস্থিত সকলের মন জয় করেন।
অনুষ্ঠানের এর একটি চমক ছিল অতিথিশিল্পী টরন্টোর অতি আদরের অতি জনপ্রিয় নোবেল। তিনি আইরিন আলমের সাথে ডুয়েট এবং বেশকিছু সোলো গান পরিবেশন করেন।
আইরিন আলমের গানের সাথে সাথে নৃত্য পরিবেশন করেন শহরের দুটি অত্যন্ত অসাধারন নাচের স্কুল “নৃত্যকলা কেন্দ্র” এবং “সুকন্যা নৃত্যাঙ্গন”। তারা উভয়ই তাদের ছাত্রদের নিয়ে আসেন এবং পর পর অনেকগুলো নৃত্য পরিবেশন করেন। দুই স্কুলের স্বত্বাধিকারী অত্যন্ত গুনী দুই নৃত্যশিক্ষক ও নৃত্যশিল্পী বিপ্লব কর ও অরুনা হায়দারকে সংবর্ধনাসহ ক্রেস্ট প্রদানের মাধ্যমে সম্মান প্রদর্শন করা হয়। আলমগীর মোহাম্মদ এবং ডক্টর মোজাম্মেল খান এই এওয়ার্ড প্রদান করেন।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাঙালি কমিউনিটির গর্ব শেরিডন কলেজের অধ্যাপক জনাব মোজাম্মেল খান। তিনি তাঁর মূল্যবান বক্তব্য প্রদান করেন। এছাড়াও ছিলেন লায়ন্স ক্লাবের প্রেসিডেন্ট এইম মুজিবসহ আরও অনেকে। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন প্রিয়মুখ ফারহানা আহমেদ ও মম কাজী।
অনুষ্ঠানের মূলমন্ত্র ছিল মা ও মাটির টান। আর এই টান প্রকাশিত হয় নিখুঁতভাবে সাজানো স্টেজের মাধ্যমে। উল্লেখ না করলেই নয় যে স্টেজের দুপাশে দুটি কুঁড়েঘর আর তার উপরে কাক, বাবুই পাখি, গামছা, গাছ এ সবকিছু মিলিয়ে পরিবেশটা সেই বাংলাদেশের পল্লীগ্রামের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়।

অসাধারন এই অনুষ্ঠানটির শেষে রেফেল ড্র এর মাধ্যমে শাড়ি দেওয়া হয় দর্শকদের মাঝে সৌভাগ্যবান চারজনকে। শাড়িগুলো স্পন্সর করেন শাড়ি হাউজ এবং শী নেক্সট ফ্যাশন।
দেশীয় গানের স্বাদ ও দেশের মাটির নাচ আর সাথে সাথে অন্য সংস্কৃতির ছোঁয়া- এ সবকিছু মিলিয়ে অনুষ্ঠানটি দর্শকের মনে রেখে যায় এক তৃপ্তির পরশ।

Exit mobile version