অনলাইন ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি ন্যান্সি পেলোসির সাম্প্রতিক তাইওয়ান সফরের পর থেকে চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে যে উত্তেজনা শুরু হয়েছে, তা দীর্ঘমেয়াদী হলে বৈশ্বিক সরবরাহ (আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য) ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

তার প্রধান কারণ, মঙ্গলবার থেকে তাইওয়ান প্রণালীতে ইতিহাসের বৃহত্তম সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন। তাইওয়ানের বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল ও পরিবহন বিষয়ক সূচক তাইয়েক্স শিপিং অ্যান্ড ট্রান্সপোর্টেশন ইনডেক্স অনুযায়ী, চীন মহড়া শুরু করার পর থেকে বৃহস্পতিবারই সূচকের পতন ঘটেছে ১ দশমিক ০৫ শতাংশ।

তাইওয়ানের সমুদ্রবন্দর বিষয়ক ব্যুরো ইতোমধ্যে কন্টেইনারবাহী বাণিজ্যিক জাহাজগুলোকে প্রণালীর উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ দিক সম্পর্কে সতর্কবার্তা দিয়েছে। ওই সব এলাকায় মহড়া করছে চীনের প্রতিরক্ষা বাহিনী।

প্রণালীর ওপর আকাশপথেও মহড়া দিচ্ছে চীনা বিমানবাহিনী। এ কারণে তাইওয়ানের সংলগ্ন চীনের প্রদেশ ফুজিয়ানের বিভিন্ন বিমানবন্দরে ৪শ’রও বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।

তাইওয়ান প্রণালী বিশ্বের ব্যস্ততম বাণিজ্যিক জলপথগুলোর মধ্যে একটি। পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের কল-কারখানায় উৎপাদিত বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও ইলেকট্রনিক পণ্যবাহী জাহাজসমূহ মূলত এ পথ ধরেই আন্তর্জাতিক বাজারে যায়। এছাড়া তরলীকৃত জ্বালানি গ্যাসের (এলএনজি) আন্তর্জাতিক বাণিজ্যও অনেকাংশে এই প্রণালী নির্ভর।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বাণিজ্যিক সমুদ্রপথ পর্যবেক্ষণকারী একাধিক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বছরের প্রথম সাত মাস বিশ্বজুড়ে কন্টেইনারবাহী যেসব বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল করে, সেসবের অর্ধেকই যাতায়াতের পথ হিসেবে ব্যবহার করে এই তাইওয়ান প্রণালী, যেটি তাইওয়ানকে চীনের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে।

সিঙ্গাপুরের থিংকট্যাংক সংস্থা এস রাজাত্নাম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সহযোগী গবেষক জেমস চার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গকে বলেন, ‘যেহেতু এ প্রণালীটি বিশ্বের ব্যস্ততম বাণিজ্যিক জলপথসমূহের একটি, সুতরাং যদি (চীন ও তাইওয়ানের) মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়, সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের তছনছ হয়ে যাওয়া ঠেকানো যাবে না।’

বৈশ্বিক বাণিজ্যের অর্থনৈতিক গোয়েন্দা সংস্থা বলে পরিচিত নিক মারো এক বার্তায় ব্লুমবার্গকে জানায়, ‘করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে বিশ্ব বাণিজ্য যে সংকট দেখা দিয়েছে, তাতে এখন বৈশ্বিক সরবরাহ বা আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সামান্য বাধাগ্রস্ত হলেও সেজন চড়া মূল্য দিতে হবে।’

‘যদি তাইওয়ান প্রণালী দিয়ে অস্থায়ীভাবেই বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়, তাহলে কেবল তাইওয়ানেই নয়, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াতেও তার ধাক্কা লাগবে।’

সূত্র : ব্লুমবার্গ, এএফপি