অনলাইন ডেস্ক : যখনই করোনার টিকার উৎপাদনের হার বৃদ্ধির বিষয়ে অনুপ্রেরণার প্রয়োজন হয় তখনই সেন্ট ক্যামেরিন্সের বায়োলাইস ফার্মার কনসালটেন্ট জন ফুলটনের কেনিয়ার ৬৭ বছর বয়সী ওই মহিলার কথা মনে পড়ে। চলতি মাসেই কেনিয়ার ওই বৃদ্ধা করোনায় আক্রান্ত হলে তার পরিবারের সদস্যরা অনেক চেষ্টা করেও তাকে বাঁচাতে পারেনি। বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে কোথাও ভর্তি করাতে না পেরে এক প্রকার বিনা চিকিৎসাতেই ওই মহিলা মৃত্যুবরণ করেন। এ ধরনের ঘটনা বিশ্বের বিভিন্ন দরিদ্র দেশগুলোতে এখন অহরহ ঘটছে। আর এই ঘটনাগুলোই জন ফুলটনের কোম্পানিকে করোনার ভ্যাকসিন বেশি করে উৎপাদনের তাগিদ দিচ্ছে।

বায়োলাইস ফর্মার এই কলসালটেন্ট বলেন, কেনিয়ার প্রায় সব হাসপাতালেই কোভিড-১৯ রোগিতে পূর্ণ। সেখানে বলতে গেলে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। আমাদের শিগগিরই একটা কিছু করতে হবে। তিনি আরো বলেন, বৈশ্বিক চাহিদা অনুযায়ী ভ্যাকসিন উৎপাদন ও সরবরাহ করা যাচ্ছে না। চাহিদা ও যোগানের মধ্যে ব্যবধান দিন দিন বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে টিকা পাওয়ার আকুতি। ধনী দেশগুলোর তুলনায় দরিদ্র দেশগুলোতে এই চিত্র ভয়াবহ। বায়োলাইসের বিশ্বাস- টিকা প্রাপ্তির এই ব্যবধান কমাতে হলে তাদের প্রতিষ্ঠানকে বছরে কমপক্ষে ২০ মিলিয়ন ডোজ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে হবে।

কিন্তু এর জন্য ফেডারেল গভর্নমেন্টের অনুমোদন দরকার। আর সেই অনুমোদনের জন্য যে আমলাতান্ত্রিক ও আইনী জটিলতার বাধা তা দূর করা সত্যিই এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। এসব বাধা বৈশ্বিকভাবে ভ্যাকসিন উৎপাদনের পথকে জটিল থেকে জটিলতর করে রেখেছে।

বায়োলাইসের প্রেসিডেন্ট ব্রিজিটি কিকেন বলেন, পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন উৎপাদনের ক্ষমতা আমাদের আছে। আমাদের লোকবল, যন্ত্রপাতি, কারিগরি দক্ষতা এবং আর্থিক সামর্থ- সবই আছে। আমরা সহজেই চাহিদা মাফিক ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে পারব। কিন্তু সরকারের অনুমোদন না থাকায় আমরা তা পারছি না। আমাদের সামনে একের পর এক বাঁধার দেয়াল তোলা হচ্ছে। আমরা জানি না কীভাবে এসব প্রতিবন্ধকতা দূর হবে।

অন্যদিকে সরকার বলছে, বায়োলাইসের মতো কানাডিয়ান কোম্পানিগুলো বিপুল পরিমাণ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট উপযুক্ত নয়। ইতিপূর্বে এ ধরনের কোম্পানিগুলো পোলিওর টিকা উৎপাদনের অনুমোদন নিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। পরবর্তীতে যা ব্যপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। তাই সরকার এবার আরো সময় নিতে চাচ্ছে, যাতে নতুন কোনো সমালোচনার সৃষ্টি না হয়। ফেডারেল সরকারের বিজ্ঞান ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জন পাওয়ার বলেন, ভ্যাকসিন উৎপাদনের বিষয়টি একটি জটিল ও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। যে কেউ চাইলেই এর অনুমোদন দেয়া যায় না। আর শুধু উৎপাদন করলেই হবে না, এগুলো সংরক্ষণ ও যথাযথভাবে বিতরণের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।

এদিকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের চাহিদা কিন্তু দিন দিন বাড়ছে। ধনী দেশগুলোর অনেকে তাদের নাগরিকদের দ্রæত টিকার আওতায় নিয়ে আসতে পারলেও দরিদ্র দেশগুলো এক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে। এ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী প্রায় ৭০০ মিলিয়ন টিকা বিতরণ হলেও এর মাত্র ২% পেয়েছে আফ্রিকার দেশগুলো। এশিয়ার দরিদ্র দেশগুলোর চিত্রও প্রায় একই রকম।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার আফ্রিকা অঞ্চলের পরিচালক মাতসিডিসো মোয়েটি এক বিবৃতিতে বলেছেন, এই অঞ্চলের বেশিরভাগ জনগোষ্টির কাছেই এখনো টিকা পেীঁছেনি। সীমিত সরবরাহ তাদের চাহিদাপূরণ করতে পারছে না। কেনিয়ার পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, সা¤প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দেশটিতে কোভিড রোগি বহুগুণ বেড়ে গেছে, মৃত্যুর হারও বাড়ছে। কিন্তু টিকাদান কর্মসূচী যে গতিতে চলছে তাতে আগামী বছরের মাঝামাঝিতে মাত্র ২২% জনসাধারণকে টিকা দেয়া সম্ভব হবে। এভাবে চলতে থাকলে আরো অনেক প্রিয়জনকে আমাদের হারাতে হবে। কোভিড-১৯ তাদের জীবন কেড়ে নেবে। কানাডায় যে অল্পকিছু প্রতিষ্ঠানের কোভিড-১৯ টিকা উৎপাদনের ক্ষমতা আছে বলে মনে করা হয় তাদের মধ্যে বায়োলাইস একটি। এই প্রতিষ্ঠানটি মূলত ক্যান্সারের ওষুধ উৎপাদন করে। যদি সরকার অনুমতি দেয় তাহলে তারা ৬ মাসের মধ্যেই কোভিড ভ্যাকসিন উৎপাদন শুরু করতে পারবে বলে তাদের দাবি। প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ইতিমধ্যে কয়েকটি স্বল্পোন্নত দেশ তাদের কাছ থেকে টিকা কেনারও আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কিন্তু প্রায় এক বছর ধরে চেষ্টা করেও তারা সরকারের অনুমোদন পায়নি। এমনকি তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি জনসন অ্যান্ড জনসনের সাথে যৌথভাবে ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রস্তাব দিয়েও সাড়া পায়নি। তবে চলতি সপ্তাহে কোম্পানির জন্য একটু আশার আলো দেখা যেতে পারে। কোম্পানির উপদেষ্টা জন ফুলটন বলেন, অবশেষে সরকার আমাদের কথা শুনতে রাজি হয়েছে। চলতি সপ্তাহে ফেডারেল ডিপার্টমেন্টের প্রায় ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের সাথে আমাদের বৈঠক হবার কথা রয়েছে। আমি আশা করছি সেখানে ইতিবাচক কিছু একটা হবে।

যদি তাই হয়, অর্থ্যাৎ বায়োলাইস যদি কোভিড ভ্যাকসিন উৎপাদনের অনুমোদন পায় তাহলে তারা তাদের উৎপাদিত ভ্যাকসিন এশিয়া ও আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলোতে পাঠাবে বলে জানিয়েছে। সূত্র : দ্য গ্লোব