Home জাতীয় নতুন অনিশ্চয়তায় প্রবাসী কর্মীরা

নতুন অনিশ্চয়তায় প্রবাসী কর্মীরা

অনলাইন ডেস্ক : করোনার নতুন ধরন নতুন অনিশ্চয়তায় ফেলেছে প্রবাসী কর্মীদের। বিমান চলাচল বন্ধ করায় তাদের সৌদি আরব ও ওমান যাওয়া আটকে গেছে। হঠাৎ ফ্লাইট বন্ধে সৌদিগামী শতাধিক যাত্রী গত বুধবার মাঝপথ থেকে ফেরত এসেছেন। কাতার ‘রি-এন্ট্রি’ ভিসা না দেওয়ায় ১২ হাজারের বেশি কর্মী দেশে আটকা পড়েছেন। ছুটিতে দেশে এসে করোনায় আটকাপড়া প্রায় ২৫ হাজার কর্মীর মালয়েশিয়া যাওয়া হচ্ছে না। একই অবস্থা আবুধাবির ১৪ হাজার কর্মীর।

দেশওয়ারি সরকারি তথ্য না থাকলেও জনশক্তি খাতসংশ্নিষ্টদের ধারণা, অন্তত লাখখানেক কর্মীর বিদেশযাত্রা আটকে রয়েছে করোনায়। অনেকের ভিসার মেয়াদ এর মধ্যেই শেষ হয়েছে। গত অক্টোবর থেকে ধীরে ধীরে হলেও কর্মীদের যাওয়া শুরু হয়েছিল। তিন মাসে প্রায় ২৫ হাজার কর্মী বিদেশে চলেও গেছেন। কিন্তু করোনার নতুন ধরন অনিশ্চয়তার মেঘকে আরও ঘনীভূত করেছে। শীতে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত ২১ ডিসেম্বর বিমান যোগাযোগ এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ করে সৌদি আরব ও ওমান। এ সিদ্ধান্তে শুধু বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ২১টি ফ্লাইট স্থগিত হয়েছে। এতে পাঁচ হাজার ১০০ যাত্রীর সৌদি যাওয়ার কথা ছিল। বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোকাব্বির হোসেন বলেছেন, ফ্লাইট চালুর পর টিকিট রি-ইস্যু করা হবে। বাড়তি চার্জ লাগবে না।

বিমান বন্ধের শিকার লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের মো. সুমন দপ্তরী। তিনি গত ফেব্রুয়ারিতে দেশে এসেছিলেন। এর পর করোনায় আটকে পড়েন। গত সেপ্টেম্বরে ফ্লাইট চালু হলেও কর্মস্থলে ফিরতে পারেননি রি-এন্ট্রি ভিসা না পাওয়ায়। নিয়োগকর্তার (কফিল) মাধ্যমে সম্প্রতি আকামা (কাজের অনুমতি) নবায়ন করে টিকিট নিশ্চিত করেন। বিমান চলাচল বন্ধ হওয়ায় ফের তার বিদেশযাত্রা আটকে গেল। সৌদি থেকে দেশে এসে করোনায় কত কর্মী আটকা পড়েছিলেন; এ বিষয়ে সরকারি পরিসংখ্যান নেই। তবে সৌদিয়া এয়ারলাইনসের তথ্যানুযায়ী, তাদের ৭০ হাজার ফিরতি টিকিটের যাত্রী ছিল। বিমানের ফিরতি যাত্রী ছিল ৫০ হাজার। সব মিলিয়ে আটকেপড়া কর্মীর সংখ্যা সোয়া এক লাখ হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। গত সেপ্টেম্বর মাসজুড়ে আটকেপড়ারা কর্মস্থলে ফেরার ফ্লাইটের টিকিটের দাবিতে আন্দোলন করেন। তাদের অনেকেরই ভিসার মেয়াদ ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ হয়। যারা কফিলের মাধ্যমে মেয়াদ বাড়াতে পেরেছেন, তারা ফিরে গেছেন। তবে কত কর্মী যেতে পারেননি, এ সংক্রান্ত তথ্য প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাওয়া যায়নি। তবে সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ জানিয়েছেন, তার ধারণা, ৮০ শতাংশ কর্মী ফেরত গেছেন।

করোনার আগে ভিসা পেয়ে সৌদি আরব যাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন প্রায় ৭৬ হাজার নতুন কর্মী। সম্প্রতি ভিসা নবায়ন করে তাদের অনেকেই দেশটিতে যাচ্ছিলেন। রিক্রুটিং এজেন্সি ফাতেমা ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসের মালিক জাহিদুর রহমান জানান, তার প্রতিষ্ঠানে ৮৫ জন নতুন কর্মীর ভিসা ছিল। তারা করোনার কারণে যেতে পারেননি। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় চলতি মাসে তাদের মধ্যে পাঁচজনকে পাঠিয়েছেন। আরও ১০ থেকে ১৫ জনের ফ্লাইট নিশ্চিত ছিল। নতুন ধরনের করোনা সংক্রমণের কারণে বিমান বন্ধ হওয়ায় তাদের বিদেশযাত্রা আবার আটকে গেছে।

‘আটকেপড়া কাতার প্রবাসী’ নামে ফেসবুক গ্রুপের সদস্য সংখ্যা আট হাজার ৭৭৪। এ গ্রুপের সদস্যদের দাবি, ১২ হাজার কাতার প্রবাসী করোনায় দেশে আটকা পড়েছেন। কর্মস্থলে ফিরতে তাদের ‘রি-এন্ট্রি’ দিচ্ছে না কাতার। এ গ্রুপের সদস্য গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন। তাদের দাবি, আটকেপড়াদের ৯৫ শতাংশের আকামার মেয়াদ শেষ হয়েছে। আটকেপড়াদের একজন এম আলমগীর চৌধুরী জানিয়েছেন, তিন মাসের ছুটিতে এসে এক বছর ধরে আটকা পড়েছেন। কবে যেতে পারবেন, জানেন না। গত চার মাস ধরে আবেদন করছেন, কিন্তু রি-এন্ট্রি পারমিট পাচ্ছেন না। কূটনৈতিক তৎপরতা ছাড়া তাদের আর পথ নেই।

কত সংখ্যক মালয়েশিয়া প্রবাসী আটকা পড়েছেন, তাও নিশ্চিত নয়। আটকেপড়াদের ফেসবুক গ্রপের দাবি, সংখ্যাটি অন্তত ২৫ হাজার। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে কর্মীদের নিচ্ছে না মালয়েশিয়া। আটকেপড়াদের একজন যশোরের মেহেদি হাসান বলেছেন, ছুটিতে এসে আটকে গেছেন। এর মধ্যেই শেষ হয়েছে ভিসার মেয়াদ। ফ্লাইট চালু হলে যেতে পারবেন; এমন নিশ্চয়তাও পাচ্ছেন না। এর মধ্যে মালয়েশিয়ায় পাওয়া গেছে নতুন বৈশিষ্ট্যের করোনা আক্রান্ত রোগী। তাই কবে দেশটি কর্মী নেবে তা নিয়ে আরও অনিশ্চয়তায় পড়েছেন আটকেপড়ারা।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাত আমিরাতের মধ্যে আবুধাবি কর্মী নেওয়া বন্ধ রেখেছে। প্রায় ১৪ হাজার বাংলাদেশি কর্মী আবুধাবিতে ফিরতে পারছেন না। কুয়েত থেকে এসে আটকা পড়েছেন ১৬ হাজারের মতো কর্মী। তারাও আছেন অনিশ্চয়তায়।

Exit mobile version