অনলাইন ডেস্ক : বাংলা কাগজ এর নিয়মিত কলাম ‘বালুকা বেলা’র লেখক হাসান জাহিদের নতুন বই ‘পরিবর্তিত জলবায়ু : মহাসংকটের মুখে পৃথিবী’ এবারের বাংলা একাডেমীর বই মেলায় প্রকাশিত হয়েছে। এই গ্রন্থে পৃথিবীর মনুষ্যসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর ফলে পৃথিবীর পরিবেশ ও প্রাণীকুলের উপর কি ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, লেখক এই বিষয়টি মূলত উপস্থাপন করেছেন।

‘পরিবর্তিত জলবায়ু : মহাসংকটের মুখে পৃথিবী’ গ্রন্থের বিষয়ে লেখক জানান, পৃথিবীর তাপমাত্রা শিল্পবিপ্লবের পর থেকে দ্রুততম সময়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই দ্রুত বৃদ্ধির বিষয়ে প্রথম আলোকপাত করেন সুইডিশ বিজ্ঞানী আর্হেনিয়াস ১৮৯৬ সালে। তিনি প্রমাণ করেন যে, জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বনের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। আর এই কার্বন এমন একটি মৌল যার তাপধারণ ক্ষমতা রয়েছে। ফলে সূর্য থেকে আগত তাপ ও পৃথিবী থেকে বিক্ষিপ্ত তাপ কার্বন শোষণ করে এবং পৃথিবীর মোট তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি বাড়াতে পারে।

এই ধারণাটি প্রথম স্বীকৃতি লাভ করে ১৯৮৮ সালে। ওই বছরটি ১৮৮০ সাল হতে ওই পর্যন্ত সময়ে উষ্ণতম বছর হিসেবে প্রমাণিত হয়। পৃথিবীর ষাটটিরও বেশি দেশের ২৫০০ বিজ্ঞানী অসংখ্য তথ্য-প্রমাণাদি ও প্রকাশনা ঘেঁটে মত দেন যে, মানবসৃষ্ট গ্রিনহাউস গ্যাস বৃদ্ধির কারণেই পৃথিবীর তাপমাত্রা দ্রুততম সময়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এখন প্রতিষ্ঠিত যে, দ্রæত সময়ে জলবায়ু পরিবর্তন মনুষ্যসৃষ্ট। শিল্পবিপ্লবের পর থেকেই পৃথিবীর স্বাস্থ্যের ক্রমশ অবনতি ঘটতে থাকে। এর জন্য দায়ী শিল্পোন্নত ও পরাশক্তির দেশগুলো। তারা এশিয়া ও আফ্রিকার সম্পদ গ্রাস করে, এই দুই মহাদেশের অনেক দেশকে শোষণ করে তাদেরকে কলোনি বানিয়ে রাখে। অন্যদিকে তারা যথেচ্ছ জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে পৃথিবীকে ঠেলে দেয় পরিবেশ বিপর্যয়ের দিকে। ক্ষতিকর কার্বন ডাইঅক্সাইড ও অন্যান্য বিধ্বংসী গ্যাস নিঃসরণ করে তারা, এবং অস্বীকার করতে থাকে যে, জলবায়ু পরিবর্তন মানবসৃষ্ট। উন্নত প্রযুক্তি আবিষ্কার করে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করে; ফলে জলবায়ুর পরিবর্তনে তারা নিরাপদে থাকবে বা ক্ষতি হলেও পুষিয়ে নেবে সামর্থ্য ও প্রযুক্তি দিয়ে।

হাটে যে হাঁড়ি ভাঙবে একদিন-সেটাও তারা জানত; কিন্তু কার্বন উদগীরণ বন্ধ করেনি। আদৌ করবে কিনা, বা করলে কবে নাগাদ কার্বন মাত্রা তারা কমাবে, তা সুস্পষ্ট নয়।

তাদের বিলাসিতা ও অতিরঞ্জিত কর্মকাণ্ডের শিকার বাংলাদেশের মতো নাজুক ভৌগোলিক অবস্থানের দেশ; কেননা জলবায়ু পরিবর্তন বৈশ্বিক-অতিরিক্ত কার্বন নির্গত হবার ফলে উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়ে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠ স্ফীত হচ্ছে। তাতে বাংলাদেশের মতো নিম্নাঞ্চল ও উপকুলীয় দেশ এবং দ্বীপদেশগুলো আসন্ন বিপন্নতার শিকার হয়েছে এবং আরও ভয়াবহ বিপদের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার দেশগুলো যখন সরব হয়ে উঠছে, তখন কার্বন কমাবার বদলে পরাশক্তি ও ধনী দেশসমূহ ক‚টচাল ও উপদেশ বিতরণে ব্যস্ত থেকেছে বরাবরই। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের বিপন্নতা, ভবিষ্যত হুমকি, সম্ভাব্য প্রশমন ও অভিযোজনের দিকগুলো নিয়ে, এবং বৈশ্বিক পরিবেশ-প্রতিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের নানা চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এই গ্রন্থে। আশা করা যায়, অনেক অজানা বিষয় ও জলবায়ু নিয়ে ভাববার নতুন খোরাক পাবেন পাঠক।

কানাডার নাগরিক হাসান জাহিদ আশির দশকের একজন গল্পকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স করনে। কানাডায় তিনি সাংবাদিকতা ও কালচার অ্যান্ড হেরিটেজ বিষয়েও গ্রাজুয়েট। হাসান জাহিদ পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ে কয়েকটি আলোচিত গ্রন্থের প্রণেতা। ঢাকা, কলকাতা ও টরোন্টোর পত্রপত্রিকায় লিখছেন। তিনি ইকো-কানাডা স্বীকৃত পরিবেশ বিশেষজ্ঞ।

হাসান জাহিদের গল্প এবং বাংলা/ইংরেজিতে প্রবন্ধ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রপত্রিকায়, সাপ্তাহিক পত্রিকা/সাহিত্য ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে। কথাসাহিত্যে দেশ পুরস্কার এবং জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্র থেকে সম্মাননা লাভ করেন তিনি। এছাড়াও তিনি এই বছর (২০২২) জলবায়ু বিষয়ক পান্ডুলিপি ‘পরিবর্তিত জলবায়ু: মহাসংকটের মুখে পৃথিবী’-এর জন্য অক্ষরবৃত্ত সাহিত্য পুরস্কার ২০২২ লাভ করেন।

‘পরিবর্তিত জলবায়ু : মহাসংকটের মুখে পৃথিবী’ গ্রন্থটি গত ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয়েছে অক্ষরবৃত্ত প্রকাশনা সংস্থা থেকে। এর প্রচ্ছদ একেছেন নিয়াজ চৌধুরী তুলি। বর্তমানে অনলাইনে গ্রন্থটি পাওয়া যাচ্ছে। আগ্রহী ক্রেতারা www.rokomari.com/akkarbritto এই ওয়েবসাইটে যোগাযোগ পারেন। ‘বাংলা কাগজ’ এর পক্ষ থেকে বইটির বহুল পাঠকপ্রিয়তা প্রত্যাশা করা হচ্ছে।