জগলুল আজিম রানা : গত ২১শে সেপ্টেম্বর চারদিনব্যাপী টরন্টো মাল্টিকালচারাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল এর ৬ষ্ঠ আসরের সমাপ্তি হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ১৮ই সেপ্টেম্বর, সোমবার বিকেলে টরন্টো ফিল্ম ফোরাম আয়োজিত টরন্টোর ২২ লেবোভিক এভিনিউ’র সিনেপ্লেক্স ওডেন এ আড়ম্বরের সাথে ৬ষ্ঠ মাল্টিকালচারাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ২০২৩ এর চারদিনব্যাপী উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। উৎসবের উদ্বোধন করেন স্ক্যারবরো সাউথ ওয়েস্ট এর এমপিপি ডলি বেগম। চারদিনব্যাপী এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয় ২২ লেভেবিক এভিনিউ’র সিনেপ্লেক্স ওডেন এবং ৩০০০ ড্যানফোর্থ এভিনিউ’র মাল্টিকালচারাল ফিল্ম স্ক্রীনিং সেন্টারে। এবারের উৎসবে ২৪টি দেশের স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মোট ৪২টি পূর্ণ দৈর্ঘ্য ও স্বল্প দৈর্ঘ্য কাহিনি চলচ্চিত্র এবং প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। উৎসবের উদ্বোধনী চলচ্চিত্র হিসেবে প্রদর্শিত হয় বাংলাদেশের স্বনামধন্য চলচ্চিত্র নির্মাতা আকরাম খানের পূর্ণ দৈর্ঘ্য বাংলা চলচ্চিত্র ‘নকশী কাঁথার জমিন’। এছাড়াও উদ্বোধনী দিনে আরও ৯টি দেশের ৯টি স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী হয়।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সাল থেকে টরন্টো ফিল্ম ফোরাম ‘টরন্টো মাল্টিকালচারাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’ এর আয়োজন করে আসছে। এই আয়োজনের অন্যতম মূল লক্ষ্য হচ্ছে, বিভিন্ন ভাষা এবং সংস্কৃতির স্বাধীন ও বিকল্প ধারার চলচ্চিত্র নির্মাতাদের চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী। টরন্টো ফিল্ম ফোরাম ২০১৪ সাল থেকে এমন সব চলচ্চিত্র নির্মাতাদের একটা প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করে আসছে। ২০১৭ সালে কানাডার ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে টরন্টো ফিল্ম ফোরাম প্রথম টরন্টো মাল্টিকালচারাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করে। তারপর করোনা অতিমারীর জন্য ২০২০ সাল ছাড়া প্রতি বছর চলচ্চিত্র সংগঠনটি এই চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করে আসছে।

ইতোমধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সাথে টরন্টো ফিল্ম ফোরামের সম্পর্ক দৃঢ় হয়েছে এবং তারা তাদের নির্মিত চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর জন্য পাঠাচ্ছেন। মাল্টিকালচারাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল এর প্রদর্শিত চলচ্চিত্রসমূহ সবাইকে বিভিন্ন সংস্কৃতিকে ভালোভাবে জানার সুযোগ করে দেবার সাথে সাথে বিভিন্ন দেশের স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সাথে চলচ্চিত্রপ্রেমীদের পরিচিয় করিয়ে দিচ্ছে। এবারের চলচ্চিত্র উৎসবে পৃথিবীর প্রায় ১০০টি দেশ থেকে প্রায় ৪০০০টি চলচ্চিত্র জমা পড়ে, সেখান থেকে ২৪টি দেশের মোট ৪২টি চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী করা হবে।

৬ষ্ঠ টরন্টো মাল্টিকালচারাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ২০২৩ এর চলচ্চিত্র প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশী নৃত্য পরিবেশন করেন ঋতুপূর্ণা চৌধুরী এবং কানাডার আদিবাসী সংগীত পরিবেশন করেন সান্টিয়াগো ভেগা ও জ্যাভিয়ার কামিয়েন্তু। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন টরন্টো ফিল্ম ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও ৬ষ্ঠ টরন্টো মাল্টিকালচারাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ২০২৩ এর সমন্বয়ক মনিস রফিক। এছাড়া বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বিমান টরন্টোর স্টেশন ম্যানেজার মুশিকুর রহমান, বাংলাদেশ থেকে আমন্ত্রিত চলচ্চিত্র নির্মাতা মুহাম্মদ কাইউম এবং কানাডার চলচ্চিত্র নির্মাতা রোডা মেঢাট। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য রাখেন টরন্টো ফিল্ম ফোরামের সভাপতি ও ৬ষ্ঠ টরন্টো মাল্টিকালচারাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ২০২৩ এর উৎসব পরিচালক এনায়েত করিম বাবুল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন শার্মিন শর্মী ও গৌতম শিকদার।

উৎসবের ২য় ও ৩য় দিন ৩০০০ ড্যানফোর্থ এভিনিউ’র টরন্টো ফিল্ম ফোরামের ‘মাল্টিকালচারাল ফিল্ম স্ক্রীনিং সেন্টার’ এ চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয় এবং শেষ দিন ২২ লেবোভিক এভিনিউ’র সিনেপ্লেক্স ওডেনে উৎসবের সমাপ্তি ঘটে। সমাপ্তি দিনে উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র ছিল মুহাম্মদ কাইউম এর ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ ও প্রসূন রহমানের ‘প্রিয় সত্যজিৎ’।

সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন উৎসবের প্লাটিনাম স্পন্সর শেখ হাসিব হোসেন এবং টরন্টো ফিল্ম ফোরামের সভাপতি ও ৬ষ্ঠ টরন্টো মাল্টিকালচারাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল এর ফেস্টিভ্যাল ডিরেক্টর এনায়েত করিম বাবুল। সমাপনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আরিফ ভুঁইয়া।