খুরশীদ শাম্মী

বৈশাখ এলে সুতি শাড়ি
ললাটে সুর্যোদয় লাল টিপ।
কাচের চুড়ি, পুঁতির মালা,
খোঁপায় গাঁথা তাজা ফুল।
আলতা, সিঁদুর, কাজল আঁকা,
নাকে দোলে নোলক অপরূপ।

পাঞ্জাবি, ধূতি, লুঙ্গী, গামছা,
গলায় রুদ্রাক্ষমালা বাড়ায় শোভা।
বায়ু তরঙ্গে একতারা, দোতারা,
লোকগীতি, পুঁথিপাঠে বাংলা বাউলানা।
হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান
সুহৃদ আচরণে অভিন্ন বাঙালিয়ানা।

হিংসায় কাতর হতাশ সমাজ
জ্বলে পুড়ে ছাড়ে হুংকার,
এসব কি সংস্কৃতি বাংলার?

কালের বিবর্তনে ক্ষয়েছে যত
নিরাশার বাড় বেড়েছে তত।
এসব অস্বীকার করার উপায়
আমাদের আছে কি কারো?

নাইওর আগমনে আলোকিত পিতৃগৃহ,
সুখ-দুঃখ বন্টন সম্পন্ন যথাযথ।
মহল্লার আয়োজনে লাঠিখেলা, ঘুড়িখেলা,
নৌকাবাইচে জনতার উচ্ছ¡াস কলকল।
মিলনমেলায় পালাগান, যাত্রাপালা, পুতুলনাচ,
বায়োস্কোপ মিটায় সাধ পরিপূর্ণ।

শহর, নগর, গঞ্জ, গাঁ
মানচিত্র জুড়ে হালখাতা ও মেলা।
ব্যানার, ফেস্টুন, দেওয়াল চিত্রকলা
রাজপথ, জনপথ, আলপনা আঁকা।
প্রতীকী মুখোশে অবস্থার বর্ণনা
বিপুল সমারোহে মঙ্গল শোভাযাত্রা।

‘অপসংস্কৃতি!’ বলে গলা হাঁকায়
প্রতিশোধ রোষানলে হামলা চালায়।

চোখ বাঁধা বিশ্বাসের ভাইরাস
চক্রবৃদ্ধি হারে সংক্রামিত হয়।
ব্যথায় জ্বলে চিত্ত মম
দেখে ওদের সকল অন্যায়।

বাংলার কৃষ্টি, সংস্কৃতি, উৎসব
আলোচনায় নেই কোনো উপসংহার।
জীবজন্তুর প্রতিকৃতি, উলুধ্বনি প্রচলন
সভ্যতার শুরুতেও ছিল দরাজ।
আসল নকল বিতর্ক যতই বিরূপ
ধারাবাহিকতায় ওগুলো বাংলার-ই শতরুপ।