ফারহানা আজিম শিউলী: উত্তর আমেরিকা বাংলা সাহিত্য পরিষদ আয়োজিত চতুর্থ বিশ্ব বাংলা সাহিত্য সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল সেপ্টেম্বর মাসের ৩ ও ৪ তারিখ, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লেক ফরেস্টের সিভিক সেন্টারে। দুই দিনব্যাপী এই সাহিত্য সমাবেশের দ্বিতীয় দিনে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে বাংলা সাহিত্য-বাংলা ভাষা-বাঙালি সংস্কৃতির অবস্থান এবং অন্যান্য ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার আদান-প্রদান নিয়ে আলাপ-আলোচনার জন্যে ছিল একটি প্যানেল। এই প্যানেলের শিরোণাম, সাহিত্য পরিষদের মূল শ্লোগানও — “বাংলায় বিশ্ব, বিশ্বে বাংলা।”

“বাংলায় বিশ্ব, বিশ্বে বাংলা” প্যানেলে ভার্চুয়ালি যোগ দেন যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে বাংলা ভাষার অন্যতম কথাসাহিত্যিক, নজরুল-মধুসূদন গবেষক, একুশে পদকপ্রাপ্ত গোলাম মুরশিদ এবং এ সময়কার বাংলাদেশের আলোচিত কথাসাহিত্যিক, বাংলা একাডেমি পুরষ্কারপ্রাপ্ত শাহাদুজ্জামান; যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে লেখক-শিশু সাহিত্যিক আহমাদ মাযহার, ওয়াশিংটন থেকে ঔপন্যাসিক আবদুন নূর, ক্যালিফোর্নিয়া থেকে পুরষ্কারপ্রাপ্ত অনুবাদক-লেখক শবনম নাদিয়া। সমাবেশে সশরীরে উপস্থিত থেকে প্যানেলে যোগ দেন বাংলা একাডেমি পুরষ্কারপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক পূরবী বসু (ফ্লোরিডা), কবি-চলচ্চিত্রকার আমীরুল আরহাম (প্যারিস) ও গল্পকার মোহাম্মদ ইরফান (ক্যালিফোর্নিয়া)।

সম্মানিত আলোচকবৃন্দ অধিবেশনের শিরোনামের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ নানান প্রসঙ্গ নিজেরাই বেছে নিয়েছেন তাঁদের নিজ নিজ ক্ষেত্র-আগ্রহের বিষয় অনুযায়ী। সঞ্চালক ফারহানা আজিম শিউলী কখনো প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে কখনোবা সুনির্দিষ্ট বিষয়ে বক্তার মতামত আহ্বান করে পুরো আলোচনা পর্বটি পরিচালনা করেন। সবশেষে দর্শকদের মন্তব্য ও প্রশ্নোত্তর পর্বের মাধ্যমে আলোচনা অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। এই প্রতিবেদনে আলোচনার সারাংশ উপস্থাপন করা হলো উৎসাহীদের জন্য। উল্লেখ্য আলোচনা অনুষ্ঠানটির সম্পাদিত ভিডিও আন্তর্জালে দেওয়া আছে।

এই অধিবেশনের প্রথম আলোচক ছিলেন উত্তর আমেরিকা সাহিত্য পরিষদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, এবারের বিশ্ব বাংলা সাহিত্য সমাবেশের অন্যতম সংগঠক, বাংলা একাডেমি পুরষ্কারপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক পূরবী বসু। পূরবী বসুর লেখা বইয়ের সংখ্যা ৩৫টিরও বেশি। ডায়াস্পোরা সাহিত্যের বৈশিষ্ট্য সম্বলিত যেসব গল্প ও প্রবন্ধ তিনি লিখেছেন সেসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য – ‘যে বাঁচে,’ ‘মহীলতা,’ ‘আজন্ম পরবাস।’ এই প্যানেলে বাংলা ডায়াস্পোরা সাহিত্যের অতীত, বর্তমান ও সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি আলোচনা করেন। ‘পরবাসী’ ‘অনাবাসী’ ‘অভিবাসী’ ‘শরণার্থী’ ‘আশ্রয়প্রার্থী’ ‘উন্মূল’ ‘পরদেশী’ ‘দূরদেশী’ ‘নির্বাসিত’ ‘দেশছাড়া’ ‘দেশত্যাগী’ ‘ডায়াস্পোরা’ ‘গৃহহীন’ ‘গৃহছাড়া’সহ প্রবাসী শব্দের নানারকম নামের উল্লেখ করে আলোচনার শুরুতে তিনি প্রবাসী ও ডায়াস্পোরার পার্থক্য, প্রবাসী শব্দের ভুল অর্থে ব্যবহার, ‘প্রবাসী’ ‘অনাবাসী’ ‘অভিবাসী’ ইত্যাদি শব্দ থাকার পরও ‘ডায়াস্পোরা’ শব্দটি আসার প্রেক্ষাপট ইত্যাকার বিষয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। প্রাসঙ্গিক আরো কিছু বিষয় পূরবী বসুর আলোচনায় উঠে আসে। এসবের মধ্যে আছে- ফেলে যাওয়া দেশের প্রতি স্মৃতিকাতরতা-টানাপোড়েনসহ ডায়াস্পোরার অন্যান্য বৈশিষ্ট্য, অন্য শব্দের সঙ্গে ডায়াস্পোরা শব্দের পার্থক্যের ভৌগোলিক ঐতিহাসিক ও মনস্তাত্তি¡ক কারণ, ডায়াস্পোরার সঙ্গে সামষ্টিকতার যোগ ও ডায়াস্পোরা সাহিত্যের অন্যান্য আবশ্যিক বৈশিষ্ট্য। বাঙালির অভিবাসন শুরুর সংক্ষিপ্ত ইতিহাসও তুলে করেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ-অতুল প্রসাদ-মধুসূদন-অমিয় চক্রবর্তী-নীরদ চৌধুরী-ওয়ালিউল্লাহ-শামসুদ্দিন আবুল কালামসহ অন্যান্য সাহিত্যিকদের বিদেশে বসে সাহিত্য রচনা বনাম সা¤প্রতিক সামষ্টিক বাস্তবতায় রচিত ডায়াস্পোরা সাহিত্য, প্রথম জেনারেশনের বাঙালির অস্তিত্ব ও ইমিগ্রেশনের ধারাবাহিক প্রবাহের সঙ্গে ডায়াস্পোরা সাহিত্যের টিকে থাকার যোগ- এই বিষয়গুলো উঠে আসে পূরবী বসুর আলোচনায়।

প্যানেলের দ্বিতীয় আলোচক ছিলেন বাংলা একাডেমি পুরষ্কারপ্রাপ্ত এ সময়কার বাংলাদেশের আলোচিত কথাসাহিত্যিক, মেডিক্যাল এনথ্রোপলজিস্ট, যুক্তরাজ্যের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শাহাদুজ্জামান। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৩০টিরও বেশি। বিশ্বসাহিত্যে বাংলা সাহিত্যের অবস্থান নিয়ে আলোচনা করেন শাহাদুজ্জামান। তিনি শুরুতেই বলেন, ‘বিশ্বসাহিত্য’র সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘ইউরোপ-আমেরিকা’ তথা ‘পশ্চিমা’ পাঠকের পছন্দের সাহিত্য। ‘পশ্চিমা’ পাঠকের কাছে বাংলা সাহিত্য পৌঁছানোর প্রয়োজনেই কেবল বাংলা সাহিত্য ইংরেজিতে অনুবাদ করার বিষয়টি ভাবতে হচ্ছে। সাহিত্যিক বিচারের চেয়ে আন্তর্জাতিক বলয়ে শক্তিমত্তার নিরিখই হয়তোবা ভাষার মূল্যায়নের অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ নিরিখ। আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলা কিংবা অপরাপর কম শক্তিশালী দেশের ভাষাসহ তথাকথিত ইউরোসেন্ট্রিক ভাষার বাইরের প্রায় সব ভাষার উপস্থিতিই প্রায় অদৃশ্য। বিশ্ব রাজনীতির কেন্দ্র কিংবা প্রান্তে অবস্থান এই ইনভিজিবিলিটির অন্যতম কারণ। পশ্চিমা পাঠকের বাংলা সাহিত্য পড়ার আগ্রহ থাকা না-থাকার ওপর আজ নির্ভরশীল বিশ্বমঞ্চে বাংলা সাহিত্যের চাহিদা ও সরবরাহ। এই চাহিদার বড় নির্ণায়ক “ওয়েস্টার্ন গেইজে” আচ্ছন্ন পশ্চিমা পাঠক। এই অসম প্রভাবের উদাহরণ হিসেবে শাহাদুজ্জামান পশ্চিমা বিশ্বে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যকর্মের অবস্থানের অতীত ও বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাঝামাঝি সংকটকালীন সময়ের বাস্তবতায় ইউরোপ রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকর্মে আত্মিক মুক্তির দর্শন পেলেও ইউরোপে তাঁর সাহিত্যকর্মের পরিচিতি ছিল খণ্ডিত। আর তাই, রবীন্দ্রনাথ এখন আর ততটা আগ্রহ ভরে পড়ে না ইউরোপ। ডি-কলোনাইজেশনের সূত্র ধরে সা¤প্রতিককালে অ-ইউরোপীয় ভাষার প্রতি পশ্চিমের আগ্রহ কিছুটা বেড়েছে। সেক্ষেত্রেও, বাংলা ভাষার প্রতি আগ্রহ পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত এসে আটকে থাকছে অনেকটাই। শাহাদুজ্জামান অতঃপর বিশ্বমঞ্চে বাংলা সাহিত্যের সরবরাহের ব্যাপারটি আলোচনায় আনেন। অনুবাদকের মান, নেটিভ অনুবাদকের অভাব, প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের অপ্রতুলতাসহ অনুবাদ বিষয়ক নানা সীমাবদ্ধতা নিয়ে বলেন তিনি। সরবরাহে অপ্রতুলতার উদাহরণ হিসেবে, এতকাল পরে এই প্রথম একজন ভারতীয় লেখকের বুকার পুরস্কার প্রাপ্তির বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, এক্ষেত্রেও হয়তোবা কেন্দ্র বনাম প্রান্তের সাহিত্যের রাজনীতি কাজ করেছে। সারা পৃথিবীর কাছে বাংলা ভাষাকে পৌঁছাতে হলে চাহিদা-সরবরাহ দুই দিকের কথাই মাথায় রাখা এবং সাহিত্য বা ভাষার শ্রেষ্ঠতার প্রশ্ন না-এনে ভাষার রাজনীতি ও শক্তির ইতিহাস উপলব্ধি করে পদক্ষেপ নেওয়াÑ এই বিষয়গুলো স্থান পায় শাহাদুজ্জামানের আলোচনায়। ব্যক্তিগতভাবে একজন প্র্যাক্টিসিং লেখক হিসেবে শাহাদুজ্জামান আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলা সাহিত্যের পরিচিতির গুরুত্ব স্বীকার করেও বলেন, আন্তর্জাতিক পরিসরে পরিচিতির চেয়ে তাঁর কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বাঙালি পাঠকের কাছে প্রাসঙ্গিক থাকা এবং বাংলা সাহিত্যের অসাধারণ মেধাবি লেখকদের কাছে পৌঁছানো।

প্যারিস প্রবাসী কবি ও আন্তর্জাতিক পরিসরে পরিচিত চলচ্চিত্রকার আমীরুল আরহাম ছিলেন তৃতীয় আলোচক। আমীরুল আরহামের লেখা দুটো কাব্যগ্রন্থ রয়েছে। তিনি শামসুর রাহমানের কবিতা ফরাসি ভাষায় অনুবাদ করেছেন। আরহাম আলোচনা করেন প্যারিসে বাঙালি কবি ও বাংলা সাহিত্য নিয়ে। বাংলা কবিতার কিছু বিক্ষিপ্ত অনুবাদ ছাড়া ফরাসি ভাষায় বাংলা সাহিত্য অনুবাদের অপ্রতুলতার দিক, প্যারিসের সাহিত্যিক ও সাহিত্যামোদীদের সঙ্গে বাঙালি কবিদের প্যারিসের সাহিত্যসভায় বিনিময়, কবি শামসুর রাহমান প্যারিসে দিন বিশেক থাকাকালীন আরহামের উদ্যোগে আয়োজিত সাংস্কৃতিক সপ্তাহে মূলধারার ফরাসিদের অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা- এই দিকগুলো উঠে আসে আমীরুল আরহামের আলোচনায়। উল্লেখ্য, কবি শামসুর রাহমানের ওপর আমীরুল আরহাম নির্মিত তথ্যচিত্র ‘শামসুর রাহমান’ বেশ আলোচিত হয়েছে।

প্যানেলের চতুর্থ আলোচক একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি পুরষ্কারপ্রাপ্ত বাংলা ভাষার অন্যতম কথাসাহিত্যিক, নজরুল-মধুসূদন গবেষক, ‘আশার ছলনে ভুলি’ ‘কালান্তরে বাংলা গদ্য’সহ অনেক বইয়ের রচয়িতা গোলাম মুরশিদ। বিলেতে বাঙালির অভিবাসন নিয়ে গোলাম মুরশিদের লেখা বই আছে। শুরুতে গোলাম মুরশিদ, আলোচক পূরবী বসু ও শাহাদুজ্জামানের আলোচনার সঙ্গে সম্পূরক তথ্য যোগ করেন এবং তারপর বিলেতে বাঙালিদের অভিবাসনের ইতিহাস ও বিলেতের সমাজ সম্পর্কে জানার নিজ-অভিজ্ঞতা থেকে বিলেতে বর্তমানের বাঙালি অভিবাসীদের সম্পর্কে বলেন। বিলেতে বাঙালির আগমনের ইতিহাস বলতে গিয়ে তিনি ১৭৬০ এর দশকে বিলেতে আসা প্রথম বাঙালি, ১৭৭০-৭১ এ ঘনশ্যাম দাস, তার অনেকপর ১৮৩০ সালে রামমোহন রায়, ১৮৩৮ সালে আনন্দচন্দ্র মজুমদার, তারপর দ্বারকানাথ ঠাকুর, ১৮৫৯ এ জ্ঞানেন্দ্রমোহন ঠাকুর, আরো পরে মাইকেল মধুসূদন দত্তর বিলেতে আসার কালক্রম উল্লেখ করেন। গোলাম মুরশিদ বলেন — বিলেতের বর্তমান অভিবাসী বাঙালিরা তিন ভাগে বিভক্ত, ৩টি বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো। প্রথম ভাগে প্রধানত শ্রমিক হিসেবে সিলেট থেকে আসা লোকেরা, দ্বিতীয় ভাগে বাংলাদেশ থেকে আসা সিলেট ভিন্ন অন্য জেলার লোক যাদের সিলেটিরা বলে ‘ঢাকাই বাঙালি’, আর তৃতীয় ভাগে পশ্চিমবঙ্গের ভারতীয় বাঙালি। এই তিনটি দলের মধ্যে কোনো যোগাযোগ নেই। সিলেটিরা সন্দেহের চোখে দেখেন বাঙালিদের, তাদের সঙ্গে আত্মীয়তা করেন না; ঢাকাই বাঙালিরা সিলেটি বাঙালিদের ওপর নির্ভর করেন কিন্তু পেছনে তাদেরকে অশিক্ষিত বলে নিন্দে করেন; কোলকাতার বাঙালিরা নিজেদের সুপিরিয়র মনে করেন। এই তিন দলের মধ্যে যোগাযোগ না-থাকলেও সিলেটিরা যখন সাহিত্যসভা করেন তখন সেখানে আমন্ত্রণ করে নিয়ে আসেন পশ্চিমবাংলার লোক, বাংলাদেশের লোক এবং স্থানীয় বাঙালিদের; পশ্চিমবাংলার লোকেরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে চাইলে নির্ভর করেন সিলেটিদের ওপর। গোলাম মুরশিদ বলেন, প্রবাসী বাঙালিরা একত্রে সীমান্তের কথা ভুলে গিয়ে বাংলাভাষী হিসেবে একত্রিত হবেন, এটাই কাম্য। এরকম দায়িত্ব পালন করছেন নিউইয়র্কের বাঙালিরা। দেশে ধর্ম বা নানান বাস্তবতায় বিভেদ থাকলেও বিদেশে অন্তত সেই বিভেদ ভুলে বাংলাভাষার মাধ্যমে বাঙালিরা যুক্ত হতে পারেন পরষ্পরের সঙ্গে। তিনি বলেন, উত্তর আমেরিকা সাহিত্য পরিষদের এই সমাবেশেও দুই বাংলার লোকই যোগ দিয়েছেন যা প্রকারান্তরে বাংলাভাষার প্রতিই ভালোবাসার প্রকাশ।

লেখক ও অনুবাদক শবনম নাদিয়া ছিলেন প্যানেলের পঞ্চম আলোচক। নাদিয়া আইওয়া রাইটার্স ওয়ার্কশপ প্রোগ্রামে ফিকশন রাইটিং এ মাস্টার্স করেছেন। ২০১৯ সালে স্টাইনবেক ফেলোশিপ পেয়েছেন নভেল-ইন-ফিকশন ‘আনওয়ান্টেড’ এর জন্য। মশিউল আলমের লেখা ছোট গল্পসমগ্র (দ্য মিট মার্কেট এন্ড আদার স্টোরিজ) অনুবাদের জন্য ২০২০ সালে পেয়েছেন পেন-হাইম ট্রান্সলেশন গ্র্যান্ট এবং ২০১৯ সালে মশিউল আলমের ছোটোগল্প (মিল্ক) অনুবাদের জন্য যৌথভাবে পেয়েছেন হিমাল সাউথ এশিয়ান শর্ট স্টোরি প্রাইজ। নাদিয়া পেন ট্রান্সলেশন গ্র্যান্টসহ আরো কয়েকটি ফেলোশিপ প্রোগ্রামের বিচারক।
দেশের বাইরে সাহিত্য ও প্রকাশনা জগতে নিজ অভিজ্ঞতার আলোকে নাদিয়া বাংলা সাহিত্য ইংরেজিতে অনুবাদের নানা দিক তুলে ধরেন। বাংলা ও ইংরেজি দু’ভাষায় অনুবাদ করলেও বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদই নাদিয়ার মূল ক্ষেত্র। নাদিয়া বলেন, বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদে শুধু ইংরেজিতে দক্ষ হলে বা কাজের ক্ষেত্রে ইংরেজিতে পারঙ্গম হলেই চলে না। সাহিত্য অনুবাদের ক্ষেত্রে সাহিত্যের বোধ এবং টার্গেট ও সোর্স দুটো ভাষাতেই ভাষা ও সংস্কৃতির কনটেক্সট জানার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, নিজের সংস্কৃতির সঙ্গে ভিন্ন সংস্কৃতির মিথস্ক্রিয়ার ব্যাপার থাকে বলে ডায়াস্পোরা সাহিত্যের একটি জটিল মাত্রা রয়েছে। আন্তর্জাতিক সাহিত্যে-পশ্চিমা প্রকাশনা জগতে-পশ্চিমা বাজারে বাংলা সাহিত্যকে জায়গা করে দেবার ব্যাপারে ইংরেজিতে অনুবাদের ভূমিকা, ইংরেজিতে অনুবাদের অপ্রতুলতা; আন্তর্জাতিক পরিসরে সাহিত্যের সম্বৃদ্ধ ঐতিহ্য সম্বলিত বাংলার মতো গুরুত্বপূর্ণ ভাষাকে আনা ও স্পেস তৈরির প্রয়োজনীয়তা, স্পেস তৈরিতে ভূমিকা রাখা অনুবাদকর্ম ও সম্ভাব্য করণীয়- এই বিষয়গুলো নিয়ে বলেন নাদিয়া। প্র্যাকটিসিং অনুবাদক হিসেবে নাদিয়া ব্যক্তিগতভাবে একাডেমিক পাবলিকেশনে আগ্রহী না বলে জানান।
প্যানেলের ৬ষ্ঠ আলোচক ছিলেন ঔপন্যাসিক আবদুন নূর। আবদুন নূর ৭০ এর দশকে দক্ষিণ আমেরিকার সমুদ্র উপক‚লের অর্থাৎ ক্যারিবিয় দ্বীপপুঞ্জ সংলগ্ন ছোট দেশ, ছয় জাতির দেশ গায়ানার অভিবাসীদের (মূলত বাঙালি) জীবন নিয়ে লিখেছেন ‘প্যাগাসাস’ উপন্যাস। এর দুই দশক পরে ৯০ এর দশকে লিখেছেন ওয়াশিংটনসহ আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলের বাঙালি অভিবাসীদের জীবন নিয়ে ‘শূন্য বৃত্ত’ উপন্যাস। আবদুন নূর গায়ানার চুক্তিবদ্ধ দাস-শ্রমিকদের জীবন নিয়ে যেমন লিখেছেন, তেমনি লিখেছেন ওয়াশিংটনের স্বেচ্ছায় বেছে নেয়া অভিবাসীদের নাগরিক জীবন নিয়ে। তিনি দাসদের তৃতীয়-চতুর্থ প্রজন্ম দেখেছেন, আবার নাগরিক অভিবাসীদের প্রথম প্রজন্ম দেখেছেন। ফলে তাঁর কাজে একটি বড়ো স্পেকট্রাম ধরা পড়েছে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে তিনি গায়ানা ও ওয়াশিংটনের বাঙালি অভিবাসীদের সম্পর্কে কিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। গায়ানাতে যারা এসেছিলেন ১৮৮০র দশকে তাঁদের বেশিরভাগই বাংলাদেশ থেকে এসেছেন খিদিরপুর বন্দর দিয়ে। বিহারি ঊড়িষ্যার লোকও আছেন, কিন্তু তাঁদের পরিচয় ভারতীয়। এঁরা সবাই প্রধানত কুলিমজুর এবং গায়ানাতেও স্থায়ী হন কুলিমজুর হিসেবেই। তখন গায়ানা সদ্য স্বাধীন। গায়ানার বাঙালি অভিবাসীদের কয়েকটি দিকের কথা উল্লেখ করে আবদুন নূর বলেন- তাঁরা পূর্ণ একতার সঙ্গে কাজ করেছেন ছয় জাতির সঙ্গে এবং জাতিতে জাতিতে বিভেদ সেইসময় ছিল না; তাঁরা পরষ্পরের ধর্ম সম্পর্কে শ্রদ্ধাশীল ও পরিপূরক ভূমিকা নেন, ভিন্ন ধর্মের বিয়ে দেখা যায় তাঁদের মধ্যে এবং ধর্ম পালন করলেও বাধ্যবাধকতা ছিল না। পূর্বপুরুষের সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রথা ও রীতিনীতিকে সংরক্ষণ করে রাখার প্রবল আগ্রহ দেখা যায় তাঁদের মধ্যে এবং ইংরেজরা তাঁদের প্রতারণা করে আনলেও স্বাধীন ভারত গায়ানার অভিবাসীদের আর ডাকেনি বলে স্বাধীন ভারতের প্রতি তাঁদের তীব্র বিতৃষ্ণা দেখা যায়।

আবদুন নূর বলেন, ১৯৭০-৮০র দশকে নতুন জীবন গড়ার জন্য আসা ওয়াশিংটনের বাঙালি অভিবাসীদের মধ্যে দেখা যায় পেশাগত সক্ষমতা ও সাফল্যের প্রতি তীব্র স্পৃহা এবং পরের প্রজন্মকে নিজ নিজ ধর্মবিশ্বাসে ধরে রাখার ব্যাপারে আগ্রহ। বৃহত্তর মার্কিন জনগোষ্ঠীর সঙ্গে বিচ্ছিন্নতা, অবকাশে-অবসরে দাওয়াত খাওয়া দাওয়া ও আঞ্চলিক সংগঠন ও সভা-সমিতি নিয়ে উৎসাহ ব্যাপক এই অভিবাসীদের মধ্যে। তিনি বলেন, গায়ানা ও ওয়াশিংটনের অভিবাসী বাঙালিদের মিলের জায়গা একটা – ভিন্ন জাতির মধ্যে বিয়ে বা মিশ্র বিয়েতে অনীহা।

লেখক-শিশু সাহিত্যিক আহমাদ মাযহার ছিলেন এরপরের আলোচক। আহমাদ মাযহার রচিত, সম্পাদিত, অনূদিত গ্রন্থের সংখ্যা ৭০টিরও বেশি। তিনি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন দীর্ঘদিন ধরে এবং শিশু সাহিত্যিক হিসেবে তাঁর ব্যাপক পরিচিতি আছে।

আহমাদ মাজহার তাঁর সা¤প্রতিক প্রকাশিত বই “আমেরিকান বাঙালি মন”-এ আমেরিকায় অভিবাসী বাঙালি জনসমাজের সাংস্কৃতিকতার মানসভুবন সন্ধান করেছেন।

বাংলাদেশের মানুষ ও “বাংলা-বিশ্বের” (বাংলার বাইরে বিশ্ব-ব্যাপী ছড়িয়ে থাকা বাঙালি) মানুষের দুই ভিন্নরকম বোধের সংশ্লেষে যে ভবিষ্যতের অভিমুখ উন্মোচিত হচ্ছে, তা নিয়ে আহমাদ মাযহার তাঁর ভাবনা তুলে ধরেন। বাঙালি জাতীয় সত্তার বিকাশ ঘটেছে বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে, বিশ্বের দিকে তাকিয়ে। বিশ্বজ্ঞানকে আত্মস্থ করতে চেয়েছে বাঙালি তার নিজের সমৃদ্ধির জন্য। এই দৃষ্টিভঙ্গিকে তিনি বলছেন ‘কেন্দ্রাভিগ বাংলাবোধ।’ বাংলাদেশের ভেতর থেকে যাঁরা বিশ্বের দিকে তাকান তাঁরা ‘বাংলাদেশের মানুষ’। কিন্তু গত বিশ পঁচিশ বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে মানুষ এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ছেন যে, এর বড় একটা অংশ আর বাংলাদেশে ফিরবেন না। কিন্তু আলাদা বাস্তবতায়, ভিন্ন সংস্কৃতিতে তাঁদের যে মানসসমৃদ্ধি ঘটছে তাও বাংলাদেশবাসীর সত্তাকেই সমৃদ্ধ করবে। এই সংখ্যাটা ক্রমশ বাড়তে থাকবে। এই মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিকে তিনি বলছেন ‘কেন্দ্রাতিগ বাংলাবোধ।’ এই দৃষ্টিভঙ্গির মানুষেরা ‘বাংলাবিশ্বের মানুষ।’ এই দুই বোধেরই সংশ্লেষই ভবিষ্যতের অভিমুখ রচনা করবে। একসময় দেখা যাবে, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা বাংলা-মানস বা বাংলা-বোধ বাংলা সাহিত্যকে প্রভাবিত করবে এবং সেই প্রভাব বাংলা সাহিত্যকে একটা পথ দেখাবে, একটা অভিমুখের দিকে নিয়ে যাবে।

এই অধিবেশনের সবশেষ আলোচক – উত্তর আমেরিকা সাহিত্য পরিষদের নিয়মিত কর্মী, এবারের বিশ্ব বাংলা সাহিত্য সমাবেশের অন্যতম সংগঠক, গল্পকার মোহাম্মদ ইরফান। বর্তমান যুগের দ্রæত বিশ্বায়নে বিশ্বব্যাপী যে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ (‘নলেজ সোসাইটি’) গড়ে উঠছে, তথ্যপ্রবাহ যার একটি মূল ভিত্তি, ভাষাবৈচিত্র্য সেই জ্ঞানপ্রবাহকে কতটা সহযোগিতা বা বাধাগ্রস্ত করবে, উত্তরোত্তর সমৃদ্ধ হতে থাকা বিশ্ব জ্ঞান সম্ভার বাংলা ভাষায় নিয়ে যাবার ক্ষেত্রে কী ধরনের সমস্যা বা সম্ভাবনা রয়েছে, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়, বিশ্ব জ্ঞানকাণ্ড বাংলায় রূপান্তরে অভিবাসী লেখকদের কী ভূমিকা হতে পারে — এসব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করেন ইরফান।

গেøাবাল নলেজ বেইজ বাংলায় নিয়ে যাওয়ার উপযোগিতা এবং উপযোগিতা জানলে সেটি বাস্তবায়িত করার প্রেরণা পাওয়া যায় এই আলাপের জের ধরে এই সমাবেশের উপযোগিতা, সাহিত্য পরিষদের উপযোগিতা, সাহিত্যের উপযোগিতা ও ভাষার উপযোগিতা নিয়ে বলেন ইরফান শুরুতে। চাহিদা ও যোগানের সঙ্গে তিনি অর্থনীতির আরেকটি পরিভাষা ‘উপযোগিতা’ যোগ করেন। তিনি বলেন, এই পরিষদ সমাবেশ করে, সাহিত্য সংকলন প্রকাশ করে যেখানে অভিবাসী লেখকদের লেখা থাকে। সাহিত্যের উপযোগিতা প্রসঙ্গে মানসিক আনন্দ, সমাজে সুস্থ পরিবেশ আনার পাশাপাশি সামাজিক উপযোগিতার ওপর গুরুত্ব দেন ইরফান। বলেন, অন্য জ্ঞানক্ষেত্র যেমন ইতিহাস পুরাতত্ত¡ নৃতত্ত¡ যেই ধরনের কাজ করে সাহিত্যও সেই ধরনের কাজ করে। সাহিত্য একটি সমাজকে ক্রনিকল করে। কিন্তু সাহিত্য কেন ইতিহাসের চেয়ে ভিন্ন? সাহিত্য কী এমন দিতে পারে যা ইতিহাস দিতে পারে না? ইতিহাস দেয় আনুষ্ঠানিক বিবরণ। কিন্তু এই আনুষ্ঠানিক বিবরণের বাইরে আমাদের মনোজগতে কী হচ্ছে, আমাদের একজনের সঙ্গে অন্যজনের পারষ্পরিক সম্পর্ক ও ভাবের-চিন্তার আদান প্রদান – এসব ঐতিহাসিকরা সবসময়ে দেখেন না। সাহিত্যিকের লেখায় সেসব চলে আসে। সেজন্য একনিষ্ঠ ও পরিশ্রমী সমাজবিজ্ঞানী ইতিহাস ও আর্কাইভ ছেড়ে সাহিত্যের পাতায় উপাদান খোঁজেন একটা সময়ের মানুষের ভাবনার বিস্তার জানার জন্য।

ইরফান বলেন, আগের বিশ্বায়নের চেয়ে আজকের বিশ্বায়ন অনেকটাই ভিন্ন। আজকের বিশ্বায়নের গতি অনেক দ্রæত, বিস্তার অনেক ব্যাপক। প্রযুক্তির কল্যাণে অনেক অল্প সময়ে অনেক বেশি বিনিময় সম্ভব হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন তথ্যের সৃজন, তথ্যের সঞ্চয়, তথ্যের প্রবাহ এসব খুব দ্রুত হবার কারণে আজকের সমাজের যে অবস্থা একে বলা হচ্ছে ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লব।’ এর মূল দিক হচ্ছে নূতন জ্ঞানের সৃজন ও প্রবাহ। বিশ্বজুড়ে সৃষ্টি হওয়া এই নলেজ সোসাইটির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের ভাষার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়েও তৎপর হতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

পৃথিবীর সব ভাষার মধ্যে সুষম বন্টন থাকা দরকার। কিন্তু বিশ্বায়নের সঙ্গে মাল্টিলিংগুয়ালিজমের সম্পর্ক দ্বান্দ্বিক নাকি সহযোগী? দুদিক থেকেই দেখা যায় বলে মনে করেন ইরফান।

তিনি বলেন, পশ্চিম যতটা এগিয়েছে আমরা ততটা আগাইনি। এই কারণে আমরা তাদের যুক্ত করতে পারছি না? এই শক্তির অসাম্য-দ্ব›দ্ব থেকে সরে আসতে হলে, গ্লোবাল নলেজ বেইজে ঢুকতে হলে – গ্লোবাল নলেজ বেইজের বাস্তবতা, ইংরেজির অবস্থান, একইসঙ্গে ক্ষমতার বৈষম্যের বাস্তবতা মাথায় রাখা জরুরি এবং এই বিশ্বায়নের যুগে থেকেও নিজের ভাষার বিস্তার জরুরি।

বাংলা ও বিশ্বের কন্টাক্ট জোন বা সংযোগস্থল বা মোহনায় আছি আমরা অভিবাসী লেখক, সাহিত্যিকেরা? তাই বিশ্বকে বাংলায় আনতে আমাদের ভূমিকা অনেক বেশি এবং এতে পরিষদ আরো ভূমিকা রাখবে বলে ইরফান আশা প্রকাশ করেন।

“বাংলায় বিশ্ব, বিশ্বে বাংলা” শিরোনামের এই অধিবেশনে আলোচকদের আলাপচারিতা ও দর্শক-শ্রোতার সাথে মত বিনিময়ের মাধ্যমে বিশ্বমঞ্চে বাংলা সাহিত্য, বাংলা ভাষা তথা বাঙালি সংস্কৃতির অবস্থান তুলে ধরার প্রয়াস ছিল। সমবেতভাবে বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে- এ বিষয়ে আমাদের যে প্রত্যাশা, যে ধারণা, যে স্বপ্ন, সেটি বাস্তবে কতটা প্রতিফলিত; জগৎজুড়ে জ্ঞান-বিজ্ঞান-সাহিত্য-সংস্কৃতির অগ্রাযাত্রার যে রথ, তাতে আমরা শামিল হতে পেরেছি কতটা; এবং এর প্রবাহ অব্যাহত রাখতে হলে আমাদের কী করা দরকার ইত্যাদি।
‘বাংলায় বিশ্ব, বিশ্বে বাংলা’ সমাবেশের থিম প্যানেল। বিষয়টি ব্যাপক। ফলে সীমিত-নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এর সব দিক নিয়ে আলোচনা করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এই বিষয়ের একটি সেমিনার সাহিত্য পরিষদের প্রতিটি সমাবেশেই থাকে এবং প্রতিবারেই এক বা একাধিক নূতন বিষয় আসে আলোচনায়। এবারেও এসেছে। এই সেমিনার যদি সঠিক প্রশ্নগুলো সামনে নিয়ে আসতে পারে, কিছুটা হলেও চিন্তার খোরাক যোগায় সবার মনে – সেটিই হবে এই অধিবেশনের সার্থকতা। সম্মানিত আলোচকদের এবং দর্শক-শ্রোতাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এই অধিবেশনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি টানা হয়।