অনলাইন ডেস্ক : কানাডার পরিবেশ বিষয়ক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, দেশের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রচেষ্টায় কোন সাফল্য নেই। এটি ব্যর্থতার আবর্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে। গত কয়েক দশক ধরে এই প্রচেষ্টা ‘ব্যর্থতা থেকে ব্যর্থতার’ দিকে ধাবিত হচ্ছে।

ফেডারেল সরকারের পরিবেশ পর্যবেক্ষণকারী প্রধান সংস্থার নতুন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৩ দশকের প্রচেষ্টা সত্বেও কানাডার কার্বণ নিঃসরনের হার ১৯৯০ সালের তুলনায় বর্তমানে ২০% বেড়েছে। দেশটি জলবায়ু বিপর্যয় জনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় এখনো অপস্তুত রয়ে গেছে, এবং তেল ও গ্যাস সেক্টরে ভর্তুকি দেয়া সত্বেও তারা দূষণের মাত্রা কমাতে পারেনি।

এই অভিযোগ শুধুমাত্র অতীতের উদারপন্থী ও রক্ষণশীল সরকারের জন্যই প্রযোজ্য নয় বরং জাস্টিন ট্রুডোর নেতৃত্বাধীন বর্তমান লিবারেল সরকারের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সাসটেইনেবল ডেভলাপমেন্ট কমিশনার জেরিভি. ডি মার্কো বলেন, এক সময় জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নেতৃত্বে ছিল কানাডা। তারপর ২০১৫ সালে ঐতিহাসিক প্যারিস চুক্তি স্বাক্ষরে পর একে একে সুযোগ হাতছাড়া করতে থাকে কানাডা। এক সময় জি-৭ দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে চলে আসে দেশটি। তিনি আরো বলেন, আমরা এভাবে ‘ব্যর্থতা থেকে ব্যর্থতার’ দিকে যেতে পারি না। আমাদের সঠিক পদক্ষেপ এবং কার্যকর ফলাফল প্রয়োজন। শুধু লক্ষ্য নির্ধারণ আর পরিকল্পনা প্রণয়ন করে বসে থাকলে হবে না।

কমিশনার ডিমার্কোর দেয়া ৫ টি প্রতিবেদনে ফেডারেল সরকারের পরিবেশ বিষয়ক বিভিন্ন ব্যর্থতার চিত্র তুলে ধরা হলেও উপসংহারে বলা হয়, সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমে এখনো ঘুরে দাঁড়ানোর সময় আছে কানাডার। রিপোর্টগুলোর একটি বলছে, সরকার, আইন প্রণেতা ও কানাডার জনগণের সমন্বিত ও শক্তিশালী একটি পদক্ষেপ জলবায়ু পরিবর্তনের দুর্বলতাগুলো দূর করতে পারে। একই সাথে তা আন্তর্জাতিক জলবায়ু বাধাগুলো দূর করে কানাডাকে আবার নেতৃত্বের আসনে বসাতে পারে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন কর্মকান্ডে নিজ দেশসহ বিশ্বব্যাপি গতিশীলতা আনতে কানাডা বর্ধিত তহবিল গঠন এবং শক্তিশালী ও বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে পারে। এর মাধ্যমে আগামী প্রজন্মের জন্য ‘শূন্য কার্বন নির্গমণ’ পৃথিবী গঠন সম্ভব।

ডিমার্কোর অফিস বলছে, এই রিপোর্টগুলো কানাডার গ্রিণহাউস গ্যাস নির্গমনের কোন অডিট বা তদন্ত প্রতিবেদন নয়, বরং ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হয়ে কীভাবে সাফল্যের পথে এগিয়ে যাওয়া যায় তারই কিছু দিক নির্দেশনা।

কমিশনার ৮টি বিষয় চিহ্নিহ্নত করেছেন, যেগুলো কানাডাকে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন ২০০৫ সালের তুলনায় ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ কমাতে সহায়তা করবে। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলেই কানাডা আবার জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নেতৃত্বে ফিরে আসতে পারবে বলে তিনি মনে করেন। ডিমাকো বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান বিষয় হচ্ছে, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের কর্মকান্ডে সমন্বয়। এর জন্য প্রয়োজন সঠিক নীতি আর কার্যকর নেতৃত্ব। যোগ্য নেতৃত্ব ছাড়া কোন নীতিই কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, তেল-গ্যাসখাত যেমন জিডিপিতে ৮ শতাংশ অবদান রাখছে, তেমনি তারা ২৫ শতাংশ কার্বন ও নির্গমণ করছে। এটি ঘুরিয়ে দেয়ার জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা আর যোগ্য নেতৃত্বের সমন্বয়। অর্থাৎ এমন একটা পরিকল্পনা নিতে হবে যেন এই খাত থেকে জিডিপি অর্জনের হার কার্বন নিঃসরণের চাইতে বেশি হয়।

২য় বিষয়টি হচ্ছে জলবায়ু বিপর্যয় রোধে প্রস্তুতি। এছাড়া তেল-গ্যাস খাতে ভর্তুকি, ইলেক্ট্রিক গাড়ি নির্মাণ ও বিক্রয় বৃদ্ধিতে উদ্যোগ গ্রহন, সঠিক প্রতিবেদন প্রস্তুতের বিষয়গুলোর উপরও জোর দেন তিনি। সূত্র : সিবিসি