অনলাইন ডেস্ক : যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাক, সিরিয়ার চেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষ শরণার্থী হিসেবে ব্রিটেনে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। আশ্রয় প্রার্থীর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান এখন পঞ্চম। গত দুই দশকের মধ্যে চলতি বছর সর্বোচ্চসংখ্যক অভিবাসনপ্রত্যাশী যুক্তরাজ্যে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এটি সর্বোচ্চ রেকর্ড।

পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের জুনের শেষ নাগাদ পর্যন্ত এক লাখ ৭৫ হাজার আবেদন পড়েছে। শরণার্থী মর্যাদা দেওয়া হবে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছেন এই মানুষগুলো। এই সংখ্যা গত বছরের তুলনায় ৪৪ শতাংশ বেশি। গত বছর একই সময় আবেদন পড়েছিল এক লাখ ২২ হাজার ২১৩টি।

২০১০ সাল থেকে অভিবাসন প্রত্যাশীদের রেকর্ড রাখা হচ্ছে। চলতি বছর শরণার্থীসংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে। সাধারণভাবে একজন অভিবাসনপ্রত্যাশীর আবেদনের বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত আসতে কমপক্ষে ছয় মাস অপেক্ষা করতে হয়। সেখানে জুনের শেষ নাগাদ পর্যন্ত এমন অপেক্ষমাণ রয়েছে এক লাখ ৩৯ হাজার ৯৬১টি আবেদন।

পরিসংখ্যানে আরো দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের জুনে শেষ হওয়া হিসাবে বছরে ৭৮ হাজার ৭৬৮টি শরণার্থী হিসেবে আশ্রয়ের আবেদন পড়েছে। আবেদনের বিপরীতে লোকের সংখ্যা ৯৭ হাজার ৩৯০। গত বছরের তুলনায় এটি ১৯ শতাংশ বেশি, আর দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে ব্রিটেনে আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক রয়েছেন আলবেনিয়ার নাগরিক।

এই দেশের নাগরিকদের কাছ থেকে ১১ হাজার ৭৯০টি আবেদন পড়েছে, যাদের মধ্যে ৭ হাজার ৫৫৭ জনই এসেছেন নৌকায়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে আছেন আফগানরা। আফগানদের পক্ষ থেকে আবেদন জমা পড়েছে ৯ হাজার ৯৬৪টি। এর আগের ১২ মাসের তুলনায় এটি দ্বিগুণ। এরপরই আছে যথাক্রমে ইরানি ৭ হাজার ৭৭৬ জন, ভারতীয় ৪ হাজার ৪০৩, বাংলাদেশি ৩ হাজার ৬২২, ইরাকি ৩ হাজার ৪৭২ জন এবং সিরীয় ৩ হাজার ৪২২ জন। অথচ ২০২১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী আশ্রয় প্রার্থীর তালিকার শীর্ষে ছিল ইরান, ইরাক, ইরিত্রিয়া, আলবেনিয়া ও সিরিয়া।

নৌকায় আসার ক্ষেত্রে রেকর্ড ব্রেক করছে আলবেনীয় নাগরিকা। ২০২০ সালে যার সংখ্যা ছিল মাত্র ৫০ জন, ২০২১ সালে আসে ৮০০ জন এবং ২০২২ সালে সেই সংখ্যা এসে দাঁড়ায়- ১২৩০১ জনে। তবে এই তালিকায় রাখা হয়নি ইউক্রেনকে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশেষ সুবিধায় ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত দুই লাখ ৩৭ হাজার দুইশত ভিসা ইস্যু করা হয়েছে ইউক্রেনের জন্য এবং ১ লাখ ৮৩ হাজার ৬০০ জন বর্তমানে ব্রিটেনে বসবাস করছেন। আফগানিস্তানের ক্ষেত্রেও এই বিশেষ সুবিধা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক গত বছরের শেষ নাগাদ তথাকথিত আইনি জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতা নিরসনের লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন। অভিবাসন প্রত্যাশীদের বহনকারী নৌকাগুলো ব্রিটেনের সীমানায় প্রবেশের আগেই প্রতিরোধ করার প্রত্যয়ও জানিয়েছেন ঋষি সুনাক। কিন্তু সেই স্রোত কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। যদিও ২০২২ সালে ৩৮ হাজার আশ্রয়প্রার্থীকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে ইংল্যান্ড।

তবে বাংলাদেশি আশ্রয় প্রার্থীদের মাঝে নৌকায় আসা শরণার্থীর সংখ্যা নেই বললেই চলে। এদের বেশির ভাগই বিভিন্ন ভিসায় ব্রিটেনে এসে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অথবা ভিসা থাকা অবস্থায়ই এই আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। যার অধিকাংশই স্টুডেন্ট ভিসা বা কেয়ারার ভিসায় ব্রিটেনে এসেছেন।