অনলাইন ডেস্ক : বিশ্ব ফুটবলের কিংবদনন্তী ডিয়েগো ম্যারাডোনা পৃথিবীর কোটি ভক্তকে ছেড়ে চলে গেছেন পরপারে। শুধু খেলা নয়, রাজনীতি, আচরণ, নানা ঘটনায় ম্যারাডোনা মনযোগ কেড়েছেন পৃথিবীর সব অংশের মানুষের। ডিজিটাল যুগের আগেই তিনি পৃথিবীর দূরতম জায়গায়ও নিজেকে চিনিয়েছেন তার প্রতিভা দিয়ে। ফুটবলের এ ‘ঈশ্বর’ই এখন টক অব দ্য সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম।

যার মধ্যে একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে ফেইসবুকে।

ওই ছবিতে দেখা যায় ম্যারাডোনা একটি ফুটবলের ওপর বসে আছেন। তার সামনে বসা ছোট এক মেয়ে তার বাম পায়ে ছোট এক ফুল গুঁজে দিচ্ছেন। ম্যারাডোনা কৌতূহল ভরে সেদিকে তাকিয়ে আছেন।

এই ছবিটি আসলে ম্যারাডোনার মেয়ে ডালমা ম্যারাডোনার লেখা বইয়ের প্রচ্ছদ। বইটির নাম ‘হিজা দে দিওস’। যার অর্থ ‘ঈশ্বরের কন্যা’। পরে এই নামে একটি মঞ্চ ডকুমেন্টারিও বানিয়েছেন ডালমা।

ডালমা ম্যারাডোনার জন্ম ১৯৮৭ সালে। যার আগের বছরে বিশ্বকে নিজের ফুটবল শৈলী দিয়ে তাক লাগিয়ে দেন ম্যারাডোনা। বিতর্ক আর নৈপুণ্যে নিজের সঙ্গে ‌’৮৬ বিশ্বকাপ ফুটবলকেও অমর করে দিয়েছেন। আর্জেন্টিনাকে জিতিয়েছেন বিশ্বকাপ।

তবে তার বাবা যে এত বিখ্যাত কেউ, ছোটবেলায় তেমন কিছু মনে হয়নি ডালমার। বাবার আচরণে কখনো তিনি জানতে পারেননি বিখ্যাত একজনের সঙ্গেই সারাক্ষণ থাকছেন তিনি।

আর্জেন্টিনা টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘আমি বুঝতে পারিনি তিনি এত বিখ্যাত। তার সঙ্গে আমি বাগানে যেতাম, ট্রাকে বা কারে ঘুরতাম, কিন্তু আমাদের কারো কোনো ধারণা ছিল না ম্যারাডোনা কে। তিনি আর সব সাধারণ বাবার মতোই আমাদের দেখভাল করতেন। তবে যখন বাইরে খেতে গেলে ছবি তোলা হতো তখন আমি বিরক্ত হতাম, ‘খাচ্ছি এটার ছবি তুলে রাখার কী দরকার!’ এটা এত বিরক্ত করত আমাকে যে এর কারণ জানাতে আমি বাধ্য করতাম। তবে পরে আমি বুঝতে পেরেছি সেই ছবির মাহাত্ম্য, যখন বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লেন আর সারা বিশ্বের অর্ধেক মানুষ তার জন্য প্রার্থণা করছিলেন, তখন আমাকেও সেসব ছবি শেয়ার দিতে হয়েছিল’’।

নিজেরে বাবার সঙ্গে জীবনের সবচেয়ে মজার মুহূর্ত স্মরণ করতে গিয়ে ডালমা বলেন, ‘অনেক ঘটনা আছে। বাবার সঙ্গে থাকলেই কিছু না কিছু ঘটত। একবার আমরা আমন্ত্রিত হয়ে বিমানে কানে যাচ্ছিলাম। আমরা বিমানের একেবারে সামনের সিটে বসেছিলাম, আমাদের সামনেই পাইলটের কেবিন। হঠাৎ বিমানটি অনেক নড়তে শুরু করল। আমি দেখলাম বিমানের সবাই ভয় পেয়ে গেছেন, কিন্তু বাবা আমাকে ভয় পেতে নিষেধ করে বললেন, ভয়ের কোনো কারণ নেই। একপর্যায়ে পাইলট আসলেন আমাদের সামনে, তিনি দেখলেন আমি ভয় পাচ্ছি। এটা দেখে আমাকে বললেন, ‘ভয পাবেন না কারণ স্বয়ং ঈশ্বর এ বিমানে আছেন’।

ডালমা নিজে একজন অভিনেত্রী। নিজের পরিচয়ে পরিচিতি পেতে সচেতন একজন ব্যক্তি। কিন্তু বিশ্বের যেখানেই যান, ম্যারাডোনার মেয়ে হিসেবে তাকে কথা বলতে হয়। তবে তিনি নিজের অভিনয় নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করেন।

বাবার কাছ থেকে ডালমা যে বিষয়টি শিখেছেন বলে জানিয়েছেন, সেটি হলো ‘স্টারডম’ উপভোগ না করা। নিজেকে অন্যদের তুলনায় বিশেষ কিছু ভাবতে ম্যারাডোনা নিরুৎসাহিত করতেন তাকে।

নিজের ছোটবেলা বিষয়ে ডালমা বলেন, ‘আমি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিতে চাই। আমি জানি আমার বাবা কোথা থেকে এসেছেন। তবে আমাকে কখনো কোনো অভাবে পড়তে হয়নি। আমি যখন শিশু ছিলাম, আমি জানতাম যে চাইলে তারা আমাকে ২০টা পুতুল এনে দেবেন, কিন্তু যখনই আমি এর মধ্যে ১০টা নিয়ে খেলব না, তারা সেগুলো কাউকে দিয়ে দিতেন। আমি ছোটবেলা থেকে এসব বিষয়ে জেনে আসছি। আমি কিছুটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু আমার মা-বাবা এটাকে তাদের দায় হিসেবেই বিবেচনা করতেন এবং আমাকে বুঝাতেন যে জীবনের আরো বাস্তবতা রয়েছে’।

১২ বছর বয়সে ডিয়েগো ম্যারাডোনা তাকে একটি গাড়ি কিনে দেন- এ বিষয়ে ডালমা বলেন, ‘এটা ছিল আমার কাছে আসার তার কৌশল, তারা বুঝাতে চেয়েছিল যে ঠিক আছে আমরা তোমাকে গাড়ি কিনে দেব। তবে আমি সেটা ফেরত দিয়েছিলাম। (বাবা) আসলে চেয়েছিলেন, আমার সঙ্গে কথা বলতে। ওই ঘটনার এক মাস পর বাবার সঙ্গে আমার প্রচুর কথা হয়। তখন তিনি বুঝতে শুরু করেন আমাকে কীভাবে সামলাতে হবে’।

ডালমা বেলন, ‘আমি আর আমার বোন এত ভালোবাসা পেয়েছি যে পরিবারের প্রতি আমাদের অনেক টান তৈরি হয়েছে। আমরা আমাদের মা ও বাবাকে কুর্নিশ করি’।

তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘‘একবার বাবা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘স্কুলের পড়া শেষ করে তুমি কোথায় ভর্তি হতে চাও?’ আমি দ্রুত উত্তর দিয়েছিলাম, ‘থিয়েটার’।, ‘ঠিক আছে, কী ডিগ্রি তুমি নিতে চাও পড়াশোনা করে?’ তিনি এরপর জানতে চেয়েছিলেন, কিন্তু আমি কোনো উত্তর দিতে পারিনি।’’

ডালমা বলেন, ‘‘২১ বছর বয়সে আমি বাবাকে বলেছিলাম, ‘বাবা, আজ আমি একটা সিনেমার অডিশনে যাচ্ছি, আমাকে দোয়া করে দাও’। ‘অবশ্যই আমার ভালোবাসা। সহজভাবে যাও…এটা তোমার পক্ষে যাবে…. তুমি কোন ভূমিকায় অভিনয় করবে?’, তিনি জানতে চাইলেন আমার কাছে, আমি বললাম, ‘পতিতা’। আপনি জানেন এর প্রত্যুত্তরে তিনি আমাকে কী বলেীছলেন, ‘কী! (হাসতে হাসতে) না প্রিয় তুমি ওই চরিত্রের জন্য যেও না, তারা তোমাকে নেবে না, তুমি এর জন্য উপযুক্ত না’’।

ডিয়েগো ম্যারাডোনা ১৯৮৪ সালে ক্লডিয়া ভিলাফেনকে বিয়ে করেন। তাদের দুই কন্যার একজন ডালমা অপরজন গিয়ানিয়া ডিনোরা। ২০০৩ সালে ম্যারাডোনা এবং ক্লডিয়ার বিচ্ছেদ ঘটে।

ম্যারাডোনার মেয়ে গিয়ানার বিয়ে হয় আরেক আর্জেন্টাইন ফুটবলার সার্জিও আগুয়েরোর সঙ্গে।