কোভিড ১৯ এসে যেন এলোমেলো করে দিয়েছিল আমাদের সকলের পারস্পরিক যোগাযোগ। কোথাও এতটুকু নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ নেই, নিউ নরমাল এক নতুন শব্দের আবির্ভাবে আমাদের প্রিয়মুখগুলো যেন কেবল সোশ্যাল মিডিয়ায় আটকে ছিল। আড্ডাবাজ হাসি আনন্দে সবসময় মাতোয়ারা করে তোলা কমিউনিটির প্রিয় সকল বন্ধু স্বজন যেন শিকলবন্দি হয়ে পড়েছিলেন। সবাই যেন অপেক্ষায় ছিলেন ইচ্ছে পূরণের দৈত্য এসে সব ঠিক করে দেবে। কিন্তু বাস্তবে ইচ্ছে পূরণের দৈত্য আসে না, প্রতিদিন আসে কেবল প্রিয়জন হারানোর মন খারাপ করে দেওয়া খবরগুলি। কিন্তু কাউকে না কাউকে তো দায়িত্ব নিতেই হয়। বরাবরের মত মন্ট্রিয়লে বাংলাদেশ কমিউনিটির ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব মন্ট্রিয়ল সবাইকে এক করে আনন্দ উৎসবে রকমারী খাবারের ব্যবস্থাপনায় আড্ডাবাজ মানুষদের আবারো হাসিমুখে মাতোয়ারা হবার সুযোগ করে দিয়েছে। পাঁচ শতাধীক প্রবাসী বাংলাদেশীর অংশগ্রহণে উচ্ছ্বাস আনন্দে সফলতার সাথে সম্পন্ন হয়েছে ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব মন্ট্রিয়লের জমজমাট আয়োজনে বারবিকিউ পার্টি।

গত ১১ জুলাই রবিবার মন্ট্রিয়লের জেরী পার্কের দৃষ্টিনন্দন লেকের পাড়ে বিভিন্ন ধরনের মজাদার সব খাবার, গান ফান স্পোর্টস, আনন্দ আড্ডায় বাৎসরিক বারবিকিউ পার্টি অনুষ্ঠিত হয়। গত বছর একই স্থানে সংগঠনের বারবিকিউ পার্টি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এবছরেই পর পর দু’টি বারবিকিউ পার্টি অনুষ্ঠিত হয়। রবিবারের পার্টিটি ছিল সংগঠনের বছরের সবচেয়ে বড় আয়োজন।

দুপুর থেকে শুরু হওয়া ‘বিবিকিউ টাইম’ নামে বারকিউ পার্টিটি সন্ধ্যা ৯টা পর্যন্ত চলে। হটডগ, বার্গার, চিকেন ও বিফসহ বারবিকিউ গ্রীল খাবার ও দেশী স্টাইলে স্টার কাবাবের বিরানী, ঝাল মুড়ি, চা, তরমুজ ইত্যাদি খাবারে আপ্যায়ন করা হয় আগত অতিথিদের। পরিবার পরিজন বন্ধুবান্ধব ও কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ করোনার পরে সবাই একত্রে সুন্দর একটি ঝলমলে দিন অতিবাহিত করেন সংগঠনের অতিথিপরায়ণ নবনির্বাচিত কর্মকর্তাদের আন্তরিক আপ্যায়নে। সংগঠনের নাম লেখা মাস্ক বিতরণ করা হয় অতিথিদের মাঝে।

দীর্ঘদিন পরে এমন বড় আয়োজনে একটি ওপেন বারবিকিউ অনুষ্ঠান আয়োজন করে সফলভাবে সম্পন্ন করায় আগত অতিথীরা সংগঠনের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান। দুঃসহ লকডাউনের পরে সুশৃঙ্খল ও সুচারু আয়োজনের এই অনুষ্ঠানে মজাদার খাবার ফান স্পোর্টস গান আর আড্ডায় দিনভর মেতে ছিলেন অতিথিরা।

সন্ধ্যার আলো-আঁধারিতে ক্যাম্পফায়ার স্টাইলে অনুষ্ঠানের সর্বশেষ অংশটুকু একুইস্টিক গীটারের ঝংকারে সুরের মূর্ছনায় সমাপ্তি ঘটে।

প্রায় পাঁচশত অতিথির অনুষ্ঠানটি আপ্যায়নে ছিলেন সহ-সভাপতি রাজ মাহবুব, সহ-সভাপতি মাইজুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ মোহাম্মদ ফায়েক, ব্যাবস্থাপনায় ছিলেন সহ-সভাপতি শাহদাৎ হোসেন শিল্পী, সহ-সভাপতি মোশারফ হোসেন বাদল, কার্যকরী সদস্য নাজমুল হাসান সেন্টু ও মিজান রহমান। তত্ত্বাবধানে ছিলেন যুগ্ম-সম্পাদক মোরসালিন নীপু, অর্থ সম্পাদক বদরুল চৌধুরী, আতাউর রহমান। সাংস্কৃতিক ব্যাবস্থাপনায় ছিলেন সাংস্কৃতিক সম্পাদক জুবায়ের টিপু ও সাংস্কৃতিক কো-অর্ডিনেটর সোহান খান। সহযোগিতায় সহসভাপতি আরিফ খন্দকার, রাহাত খন্দকার, মাসুম আহমেদ ও হায়দার ইলিয়াস, সালেহিন অপু, তমিজ উদ্দিন লিপন কামরুজ্জামান ও মজিবর রহমান।

অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন রনজিত মজুমদার। শেষের গানের অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন শামসাদ রানা। দৃষ্টিনন্দন মাস্ক ডিজাইন ও স্পন্সর করেন সহসভাপতি পলাশ হাওলাদার। সাউন্ডে শংকর চৌধুরী, পোস্টার, ব্যানার ও আনুসাঙ্গিক ডিজাইনে ক্রিয়েশন ডিজাইন, ডেকোরেশনে পার্টি টাইমস এবং অন্যান্য সহায়তায় মোহন তানভির।

বক্তব্য রাখেন সিটি কাউন্সিলর মাদাম মেরী ডেরস সংগঠনের পক্ষে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সাবেক সভাপতি প্রিয় সংগঠক সাংবাদিক মনিরুজ্জামান। সবশেষে সংগঠনের সভাপতি হাফিজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদ সমাজের বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ বিভিন্ন সংগঠনের কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও স্পন্সরদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।