Home কানাডা খবর মার্কিন অনড় অবস্থান সত্তেও থ্রি অ্যামিগোস সামিটকে ‘দারুণ সফল’ বললেন ট্রুডো

মার্কিন অনড় অবস্থান সত্তেও থ্রি অ্যামিগোস সামিটকে ‘দারুণ সফল’ বললেন ট্রুডো

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকান প্রেসিডেন্টের সাথে দেখা করেন ছবি : সিবিসি নিউজ

শাহনুর চৌধুরী : সদ্য সমাপ্ত অ্যামিগোস সামিটকে ‘দারুন সফল’ ও ‘কার্যকর’ বলেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। গত ১৮ নভেম্বর ওয়াশিংটনে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর মধ্যে ওই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু সমালোচকেরা বলছেন, বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি ও বিক্রয় এবং সীমান্তে কড়াকরি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অনড় অবস্থানের ফলে সম্মেলন থেকে কানাডা মেক্সিকোর খুব একটা লাভবান হওয়ার আশা নেই।

আমেরিকার বৈদ্যুতিক যানবাহন পরিকল্পনা কানাডিয়ানদের জন্য সহজ করার লক্ষ্য নিয়ে ট্রুডো ওই সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন। নতুন বাস্তবতার দোহাই দিয়ে তিনি এ বিষয়ে জোড়ালো আবেদনও জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের ‘সুরক্ষাবাদী নীতি’ নিয়ে কোন বিভ্রান্তি ছিল না। কিন্তু ওই প্রবণতা ১৯৬৫ সালের মার্কিন কানাডা ‘অটোপ্যাক্ট’ চুক্তি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। ওই চুক্তি কয়েক দশক ধরে দুই দেশের অর্থনীতিকে একত্রীকরণে উৎসাহিত করেছিল।

বৃহস্পতিবারের সম্মেলনে আমেরিকানদের বৈদ্যুতিক গাড়ি কেনার জন্য উৎসাহিত করতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পরিকল্পনা নিয়ে সৃষ্ট মহাদেশীয় বিরোধ মেটাতে সামান্য হলেও ভ‚মিকা রাখার দাবি করছেন ট্রুডো। এটিকে তিনি কানাডার জন্য একটি নৈতিক বিজয় মনে করছেন। প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো তার বেশ কয়েকজন সিনিয়র ক্যাবিনেট মন্ত্রী নিয়ে সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। তারা বাইডেনকে বোঝাতে চেয়েছেন নতুন গাড়ি ক্রয়ে প্রস্তবিত ১২ হাজার ৫০০ ডলার কর প্রণোদনা কানাডার অটো মোবাইল শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। কিন্তু বাইডেন প্রশাসন এ বিষয়ে খুব একটা ছাড় দিতে আগ্রহী বলে মনে হয়নি। ফলে পরদিন খুব সামান্য আশা নিয়েই ট্রুডো ও তার মন্ত্রীরা কানাডা ফিরে আসেন। ট্রুডো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে যে গভীর ও বৃহৎ সম্পর্ক বিদ্যমান তাতে সময় সময় সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ আসবেই। এগুলো মোকাবেলা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তিনি আরো বলেন, আমরা কিছু সমস্যার সমাধান করব, আবার নতুন কিছু সমস্যার উদ্ভব হবে। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। আমরা গঠনমূলক উপায়ে এসব মোকাবেলা করব এবং এবারও আমরা সেই চেষ্টাই করেছি।

তবে ওয়াশিংটনের ওভাল অফিসে দিনব্যাপি সম্মেলন শেষে প্রথাগত ফটোসেশনের সময় বাইডেনকে খুব একটা সমঝোতামূলক মুডে দেখা যায়নি। সুবিধাজনক প্রশ্নগুলোর উত্তর তিনি হাসি মুখেই দিচ্ছিলেন, কিন্তু বিতর্কীত প্রসঙ্গ ওঠলেই তা এড়িয়ে গেছেন। বাইডেন বলেন, আমরা জলবায়ু তহবিল নিয়ে কথা বলেছি। করোনা পরিস্থিতি, সামাজিক নিরাপত্তাসহ আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। কানাডার প্রস্তাবিত এন এ এফ টিএ নিয়ে বাইডেন কিছু না বললেও হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি বলেন, এটি পূর্বে সম্পাদিত ‘মার্কিন-মেক্সিকো-কানাডা চুক্তির সাথে সাংঘর্ষিক। বৈদ্যুতিক যানবাহনের প্যাকেজ নীতিমালা সম্পর্কে সাকি বলেন, বিষয়টি নিয়ে প্রেসিডেন্ট ব্যক্তিগতভাবে আগ্রহী। কেননা তার বিশ্বাস এই শিল্পটি ভবিষ্যতে অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। এটি ভোক্তাদের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আমাদের পরিবেশ রক্ষায়ও ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। তাই এই খাতে যুক্তরাষ্ট্র খুব একটা ছাড় দিতে চাইছে না। তবে ট্রুডো আশা করছেন মার্কিন ট্যাক্স-ক্রেডিট বিল নিয়ে সংশয় দ্রুতই কেটে যাবে। ইতোমধ্যে ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার উদ্ধারপন্থী ডেমোক্রেট সিনেটর জো মেনসিন বিলটির সমালোচনা করেছেন। সিনেটে এটি সহজে পাস হবে বলে মনে হয় না। এই প্রস্তাবটি কানাডা ও মেক্সিকো উভয় দেশের গাড়ি নির্মাতাদের জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয়। কানাডার উপ-প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফিল্যান্ড সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ইলেকট্রিক কারের ক্ষেত্রে মার্কিন প্রস্তাবিত কর রেয়াত নীতি দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘প্রধান ইস্যু’ হয়ে দেখা দিতে পারে। তবে ট্রুডো বলেছেন, সম্মেলনে এই বিষয়টিই একমাত্র তিক্ত ইস্যু ছিল না। সীমান্তে কঠোর মার্কিন সুরক্ষা নীতির পাশাপাশি ৫টি ক্রস বর্ডার তেল পাইপ লাইন নিয়েও কথা হয়েছে। মিশিগান প্রশাসন এগুলো বন্ধ করতে চাওয়ায় কানাডার উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন ট্রুডো। হোয়াইট হাউসে ত্রিপক্ষীয় এই শীর্ষ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সাথে মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ও ব্রাডো অংশ নেন। ২০১৬ সালে কানাডায় প্রথম এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এবারের সম্মেলনে চীনের বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিতব্য শীতকালীন অলিম্পিক বর্জনের বিষয়ে কোন আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ট্রুডো কোন জবাব দেননি। তবে সম্মেলনের আগেই বাইডেন বলেছেন, তারা বর্জনের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছেন। সম্মেলনে বাইডেন বলেন, আমাদের এই ৩ দেশের সম্মিলিত শক্তির পাশাপাশি আমাদের জনসংখ্যা, গণতন্ত্র ও অর্থনীতি একটি সমৃদ্ধ উত্তর আমেরিকা গড়তে সাহায্য করবে। আমরা যদি আজকের মতো ভবিষ্যতেও একে অপরের সাথে কথা বলার জন্য সময় দেই তাহলে আমরা যে কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারব। অন্যদিকে ৫ বছর পরে হলেও এমন একটি শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজনের জন্য বাইডেনকে ধন্যবাদ জানিয়ে ট্রুডো বলেন, শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা ও জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় তার দেশ সব সময় যুক্তরাষ্ট্রের পাশে থাকবে। সূত্র : সিবিসি ও সিটিভি নিউজ

Exit mobile version