১. ঘুড়ি

আমাদের বাড়ির সামনে একটা বড় মাঠ
শৈশবে ঘুড়ি ওড়াচ্ছি মাঠে দাঁড়িয়ে।
মাঞ্জা দেওয়া লাটাইয়ের সুতা ছাড়ছি
সুতা ছাড়ছি, সুতা ছাড়ছি, সুতা ছাড়ছি-
ও পাড়া থেকে আর একজনের ঘুড়ি প্যাঁচ খেলতে
সুতা ছাড়ছে আর উপরে উঠছে।
আমি লাটাইয়ের সুতা জড়িয়ে
শ্যামা ঠাকুরের তৈরি করা ঘুড়ি
ডানে দিকে কাত করছি
আর উপরে তোলার চেষ্টা করছি।
যেমন এখন দেখি,
আমাদের স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে
বিমান উড্ডীন হয় আকাশে
পাখা কাত করে দ্রুত বেগে উপরে ওঠে।
আমার ঘুড়ি উপরে উঠতে বাতাসে বাধা পাচ্ছে।
চিন্তা একটাই ও পাড়ার ঘুড়ির উপরে প্যাঁচ দিতে হবে।
বাতাস অনুক‚লে এলো
ঘুড়ি দ্রুত উপরে তুলে বামে কাত করে
প্যাঁচ দিলাম ও পাড়ার ঘুড়ির সুতার উপরে।
প্যাঁচ খেলছি, প্যাঁচ খেলছি, প্যাঁচ খেলছি-
অল্প অল্প করে সুতা ছাড়চ্ছি-
প্যাঁচ খেলছি, প্যাঁচ খেলছি, প্যাঁচ খেলছি-
ছেড়ে দিলাম এক রিল সুতা।
ও পাড়ার ঘুড়িটি দ্রুত টানছে
গুটিয়ে নিতে চাইছে ঘুড়িকে,
লাটাইয়ের সুতা দ্রæত ছাড়ছি,
ভলকা গেল ও-পাড়ার ঘুড়িটি।
তাকিয়ে দেখি ঘুড়ি ধরতে পাড়ার
ছোট ছোট ছেলের দল ছুটছে, ছুটছে, ছুটছে-
ঘুড়িটি গিয়ে আটকে গেল একটি গাছের ডালে।

২. অলক্ষ্মী

জানালার অদূরে ঘন বন-জঙ্গল।
গভীর রাতে পেঁচার কান্না
নিস্তব্ধতা ভাঙ্গার চেষ্টা করছে।
ভাবছি, কোন কিছু দর্শনে।
পেঁচার কান্না রাতের মতই দীর্ঘ হচ্ছে-
শৈশবে মায়ের কাছে শুনেছি,
পেঁচা’র কান্নায় অলক্ষ্মী আসে।
কখনো লক্ষ্মী’র দেখা পাইনি।
প্রায় সময়ই অলক্ষ্মী ঘিরে ধরেছে
এখনও পিছু ছাড়েনি।
অলক্ষ্মীকে পেঁচা আনেনি ডেকে ।
ভুলগুলো এনেছে ডেকে।
দোষা দিচ্ছি পেঁচাকে।

৩. নীরব কান্না

তোমার নীরব কান্নায়
আমি বুঝে ছিলাম,
একটা প্রাচীর তৈরি হয়ে গেছে
একই ছাদের নিচে।
নিরুপায় ছিলাম না
কোন ভণিতা না করেই দূরে চলে যেতে পারতাম।
যায়নি কেন?
এর অর্থ আমার হদয়ের অভিধানে খুঁজে পায়নি।
ক্রমেই শীতল হচ্ছে রক্ত
আর মাঝে মাঝে ‘আদি’ কালের ব্যামো।
যা বহন করেছিলেন আদি পিতা আদম আর মা হাওয়া
সেই ব্যামো জেনেটিকভাবে
আমাকেও ছুঁতে চাইছে।

৪. দুর্ভিক্ষ

কবিতায় দুর্ভিক্ষ- আকাল দেখা দিয়েছে।
চারদিকে খাদ্য অভাব, হাহাকার।
কবি খাদ্য যোগান দিতে পারছেন না।
কোথাও নেই থোকা থোকা শব্দ।
শব্দের বাগান ফেটে চৌচির
চারদিকে আকাল।
প্রায় সব শব্দ আগেই নিয়েছেন,
মাইকেল-রবীন্দ্রনাথ-নজরুল
সুনীল, বুদ্ধদেব, জীবনানন্দ,
শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, হাসান হাফিজ প্রমুখ।
আমরা উচ্ছিষ্ট শব্দ নেড়ে চেড়ে
কবিতায় খাদ্য যোগান দিচ্ছিলাম।
উচ্ছিষ্ট শব্দে জীর্ণ কবিতা কোনমতে
টিকে থাকার লড়াই করছিল।
এখন সেই উচ্ছিষ্ট শব্দও শেষ প্রায়।
কবিতায় দেখা দিয়েছে তাই দুর্ভিক্ষ-আকাল।
নিরুপায় কবি পালাতে চাইছেন,
পালাতে পারছেন না
ফিরে আসছেন, অনাহারি কবিতার কাছে
আহা! আমার সন্তানেরা।

৫. তিরস্কার

পদ্মা নদীর ঘাটে এসে দাঁড়ালাম,
খুব বেশি পানি নেই।
ঘাটপারে দোকান-পাট,
ভর দুপুরে তেমন ভীড় নেই।
তীব্র শিটি দিয়ে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পার হলো ট্রেন।
একটি কুকুর ঘুরঘুর করছে পারে
শুঁকছে গন্ধ-
এই গন্ধ শুঁকে শুঁকে ফিরে যাবে নিজ গন্তব্যে।
ভাবছি, এই ভরদুপুরে আসা ঠিক হয়নি।
বুদ্ধির ঘড়ি আমার কাজ করছে না।
মস্তিষ্ক আমার কম্পিউটারের মতো হ্যাঙ্গ হচ্ছে।
চালানোর চেষ্টা করছি, ভাইরাস নোটিফিকেশন!
মস্তিষ্কের ভাইরাস দূর করার কোনো এন্টি ভাইরাস নেই।
একটি গাঙ চিলকে উড়ে যেতে দেখলাম,
হায়! কবি জীবনানন্দ দাশ
দেখতে পাচ্ছেন না? আপনার ‘সোনালি ডানার চিল’
পদ্মা নদীতে মাছ না পেয়ে
ক্ষুধার জ্বালায় তিরস্কার দিচ্ছে।

ফ্লোরিডা, ইউএসএ