অনলাইন ডেস্ক : একেই বোধহয় বলে সময় খারাপ যাওয়া। শত চেষ্টাতেও প্রেসিডেন্টের পদ টিকিয়ে রাখতে পারেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। হেরে গিয়েছেন জো বাইডেনের কাছে। আর সেই ক্ষত শুকনোর আগেই এবার আঁচ পড়ল ট্রাম্পের দাম্পত্য জীবন। আমেরিকায় জোর জল্পনা, প্রেসিডেন্ট পদে ট্রাম্পের মেয়াদ শেষ হলেই নাকি স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প ডিভোর্স দেবেন ট্রাম্পকে। বৃটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলে এই খবর প্রকাশিত হয়েছে।

উল্লেখ্য, মেয়াদ শেষ হলেই হোয়াইট হাউস ছাড়তে হবে প্রেসিডেন্টকে। তারপরই তাকে ডিভোর্স দেবেন মেলানিয়া। যদিও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুজনের সম্পর্ক ইতিমধ্যেই বিষিয়ে গিয়েছে। হোয়াইট হাউসে তাদের শোওয়ার ঘরও আলাদা। কথাও তেমন হয় না এখন। কিন্তু এখনই ডিভোর্স দিলে ক্ষমতা খাটিয়ে মেলানিয়া ও তার ছেলের ক্ষতি করতে পারেন। তাই মেয়াদ শেষ হলেই ডিভোর্স দেবেন মেলানিয়া। মেলানিয়ার প্রাক্তন পরামর্শদাতা স্টেফানি ওয়ালকফেরও এই দাবি করেছেন।

অপরদিকে, নির্বাচনের মুখে হয়ে উঠল ব্ল্যাক ভোটস ম্যাটার। ভোটের বাক্সে তা সত্যিই টের পেলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবং জো বাইডেনের পক্ষে ভোট টেনে নেপথ্য নায়িকা হয়ে উঠলেন স্ট্যাসি অ্যাব্রামস, লাতোসা ব্রাউনের মতো কৃষ্ণকলিরা।

২০১৩ সালে ট্রাম্প আসার আগে থেকেই আমেরিকার অন্দর সোচ্চার হয়েছে #ব্ল্যাকলাইভসম্যাটার আন্দোলন নিয়ে। চলতি বছর মে মাসে করোনা সংক্রমণের মধ্যেই কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ফের দপ করে জ্বলে ওঠে আন্দোলন। সে সময় আন্দোলনকারীরা আমেরিকা জুড়ে ভাঙচুর, তাণ্ডবও চালান। গোটা প্রেক্ষিতকে পিছনে রেখে কৃষ্ণাঙ্গ-শ্বেতাঙ্গের মধ্যে আড়াআড়ি ভাগও হয়ে যায়, ভোটের যার বড়সড় প্রভাব দেখতে পেয়েছেন মার্কিন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। এনবিসি নিউজের এগজিট পোল জানিয়েছে, ৯১% কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা বাইডেনকে ভোট দিয়েছেন।

সংবাদসংস্থা এপি-র একটি সমীক্ষা বলছে, একই পথে পা রেখেছেন ৮৮% কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ, ৮৩% এশীয় তরুণও। আমেরিকায় ভোটাধিকার নিয়ে কাজ করা আরি বেরম্যান বলছেন, পেনসিলভ্যানিয়া, উইসকনসিন, মিশিগান, জর্জিয়াতে কৃষ্ণাঙ্গ ভোটাররাই পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন। আর অ্যারিজোনা, নেভাডায় লাতিনো ভোটাররা। এর মধ্যে জর্জিয়ায় ২৮ বছর পর জিততে চলেছেন ডেমোক্র্যাটরা। অ্যারিজোনায় ২৪ বছরে।

মার্কিন বিশেষজ্ঞ মহলের ব্যাখ্যা, কৃষ্ণাঙ্গ ভোট, লাতিনো ভোটের সিংহভাগ যে উল্টোদিকে যেতে পারে, সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা ছিল ট্রাম্পের। তাই তারা যাতে ভোট দিতে যেতে না পারেন, তার জন্য নানা ভাবে চাপ দেওয়ার চেষ্টা চলছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, সেই চাপ অগ্রাহ্য করে বিপুল ভোটার ভোট দিতে বেরিয়েছেন। এবং সেটাই ট্রাম্পের বিদায় নিশ্চিত করে দিয়েছে অনেকটাই। ঠিক এখানেই উঠে আসছে দুই কৃষ্ণকলির নাম। একজন স্ট্যাসি অ্যাব্রামস।

জর্জিয়ার ভোট-বাক্স যে উল্টে গেল, তার নেপথ্যে এই মধ্যবয়সি হার না মানা মহিলাই। ইনিই তিরিশের নীচে থাকা আট লাখ নতুন ভোটারকে বুথমুখো করতে একটানা উৎসাহ জুগিয়েছিলেন। যার মধ্যে ৪৯ শতাংশই কৃষ্ণাঙ্গ। এরা ‘ভোটার সাপ্রেশন’-এর শিকার। সুযোগ পেয়ে জবাব দিয়েছেন বলেই মনে করা হচ্ছে। স্ট্যাসি ২০১৮ সালে জর্জিয়ার গভর্নর পদে দাঁড়িয়েছিলেন, একটুর জন্য হেরে যান। কিন্তু হার মানেননি। জন্ম দিয়েছিলেন ‘ফেয়ার ফাইট’ আন্দোলনের। এখন তিনি খুশিতে ঝলমল করছেন। জানুয়ারির শুরুতে সেনেট ভোটে নিজেদের দুই প্রার্থীকে জেতানোর কাজও শুরু করে দিয়েছেন।

অন্য জন লাতোসা ব্রাউন। ব্ল্যাক ভোটস ম্যাটার আন্দোলনের অন্যতম পথ প্রদর্শক। ফ্লরিডা, সাউথ ক্যারোলাইনা, জর্জিয়া, লুইজিয়ানা, নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভ্যানিয়া, মিসিসিপিতে একনাগাড়ে কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়কে সচেতন করার কাজ চালিয়েছেন লাতোসা। শুধু ভোটের জন্য নাম তোলা নয়, ভোটের ক্ষমতা বুঝিয়েছেন প্রতি মুহূর্তে। তারই ছাপ মিলেছে ভোটের দিন। এখন পাওয়া যাচ্ছে ভোটের ফলেও।