অনলাইন ডেস্ক : মস্কোর বিরুদ্ধে আরো কঠোর অবস্থানে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে অটোয়া। সেই সাথে ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ এবং মানবিক সহায়তা বৃদ্ধিরও ঘোষণা দেয়া হয়েছে। শুক্রবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী অনীতা আনন্দ ও অভিবাসন মন্ত্রী সিয়ান ফ্রেসার এক যৌথ বিবৃতিতে এই ঘোষণা দেন। এতে বলা হয় রাশিয়া এবং বেলারুশ থেকে ৩৫% পন্য আমদানী কমানো হবে। অন্যদিকে ইউক্রেন সেনা বাহিনীর জন্য কয়েক হাজার রকেট লাঞ্চার ও গ্রেনেড পাঠানো হবে। এছাড়া কানাডা ইউক্রেনের উদ্বাস্তুদের জন্য তার দেশের দরজা খুলে দেবে।
কানাডা উপ-প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টিয়ানা ফ্রিল্যান্ড ঘোষণা দেন যে, তার দেশ রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে আসা পণ্যের ৩৫% মূল্য আটকে রাখবে। এর আগে শুধুমাত্র নর্থ কোরিয়ার পন্যের উপর কানাডা এ ধরনের বিধি-নিষেধ আরোপ করেছিল। অটোয়া প্রশাসন হচ্ছে প্রথম সরকার যারা ইউকেনে রুশ আগ্রাসনের পর দুই বাণিজ্যিক সহযোগী দেশের প্রতি এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিল।
এর আগে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের প্রতিবাদে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো রাশিয়ার তেল আমদানি নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, রাশিয়ার তেল বিক্রির টাকায় প্রেসিডেন্ট পুতিন আর সে দেশের বিত্তবানদের ব্যাংক একাউন্ট স্ফীত হয়, তাই আমরা রাশিয়ার কাছ থেকে আর তেল কিনব না। যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর সমন্বিত নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্যবস্তু এখন পর্যন্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে। তারা এখনো রাশিয়ার কাছ থেকে তেল গ্যাস আমদানী করছে। কানাডায় প্রথম রাশিয়ার কাছ থেকে তেল আমদানি না করার ঘোষণা দিল। তবে ইউরোপ যতটা রাশিয়ার তেলের ওপর নির্ভরশীল কানাডা ততটা নয়। তা সত্বেও ট্রুডো মনে করেন কানাডার এই নিষেধাজ্ঞা বিশ্ব স¤প্রদায়কে একটি শক্তিশালী বার্তা দেবে। প্রসঙ্গত, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১০০ ডলার ছাড়িয়েছে।
এদিকে পশ্চিমা দেশগুলো শুক্রবার ঘোষণা করেছে, তারা রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে, যাতে তারা নিজেদের ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তার জন্য রিজার্ভের অর্থ ব্যবহার করতে না পারে।
অন্যদিকে বিশ্বের উন্নত ৭ টি দেশের গোষ্ঠি জি-৭ শুক্রবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে একগুচ্ছ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আমেরিকা, কানাডা, জাপান, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি এবং ইতালিকে নিয়ে গঠিত জি-৭ এর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সময়ের সাথে সাথে মস্কোর বিরুদ্ধে বিধি-নিষেধের পরিধি আরো বাড়ানো হতে পারে। জি-৭ এর পক্ষে আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি বিøঙ্কেন বলেছেন, পরিস্থিতির বদল না ঘটলে আমরা ধীরে ধীরে নিষেধাজ্ঞা সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাব।
জি-৭ এর নিষেধাজ্ঞার মধ্যে শুধু দেশ হিসেবে রাশিয়া নয়, সে দেশের বড় বড় শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের জন্যও বাজার বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে। একই সাথে রাশিয়ার ব্যাংকগুলোর উপরও জারি হয়েছে বিধি-নিষেধ। এমন কি আন্তর্জাতিক ক্রীড়াক্ষেত্র থেকেও রাশিয়াকে নির্বাসনে পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে আমেরিকা ও পশ্চিমা দুনিয়া। তবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নানা বিধি-নিষেধের কথা বলা হলেও প্রাকৃতিক গ্যাস ও জ্বালানী তেল নিয়ে ইউরোপ-আমেরিকা এখনো কিছু বলছে না। ইউরোপীয় ইউনিয়নভূক্ত দেশগুলোর জ্বালানী তেলের এক চতুর্থাংশ এবং প্রকৃতিক গ্যাসের ৪০% আসে রাশিয়া থেকে। এখন তারা যদি রাশিয়া থেকে তেল-গ্যাস না কেনার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে বিশ্ব বাজারে জ্বালানির দাম আরো বাড়বে। যা করোনা বিধ্বস্ত বিশ্ব অর্থনীতিকে আরো ভয়াবহ করে তুলতে পারে। তাই এই ইস্যুতে তারা এখনো নিরব রয়েছে। আরেকটি বিষয়ে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটের মধ্যে মত পার্থক্য রয়েছে। তাহলো ইউক্রেনের আকাশ পথকে ‘নো ফ্লাই জোন’ ঘোষণা করা। রাশিয়া যাতে আকাশ পথে বিমান হামলা চালাতে না পারে সে জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি ন্যাটো ও ইউরোপ-আমেরিকার মিত্রদের প্রতি ‘নো ফ্লাই জোনের’ আবেদন করেছেন।
শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী বিøঙ্কেন বলেছেন, বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করলে ইউরোপে সরাসরি যুদ্ধ শুরু হতে পারে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনও হুমকি দিয়েছেন- নো ফ্লাই জোন ঘোষণার অর্থ হবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘সরাসরি যুদ্ধ’ ঘোষণা। যদি কেউ এটা করে তবে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ। তবে মার্কিন কংগ্রেসের কিছু সদস্য জেলেনস্কির দাবি মেনে ‘নো ফ্লাই জোন’ ঘোষণার জন্য চাপ দিয়েছেন। এমনকি রিপাবলিকান সিনটর লিন্ডসে গ্রাহামসহ কয়েক জন নেতা রাশিয়ার গণতন্ত্রপন্থীদের কাছে পুতিনকে ক্ষমতাচ্যুত ও হত্যা করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে ইউক্রেনকে অস্ত্রসহায়তা ও দেশত্যাগি ইউক্রেনীয়দের আশ্রয় দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে কানাডা। যুদ্ধের কারণে প্রতিবেশি দেশগুলোতে আশ্রয় নেয়া উদ্বাস্তুদের কানাডায় দুই বছরের জন্য ভিসা দেয়া হবে। তবে কত সংখ্যক উদ্বাস্তুকে আশ্রয় দেয়া হবে তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। অন্যদিকে গত রোববার পর্যন্ত কানাডা ইউক্রেনের সেনা বাহিনীর জন্য ১ হাজার ৬০০ বুলেট প্রুফ জ্যাকেট ও বিপুল পরিমান খাদ্য সামগ্রি পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে। এর জন্য প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া ১২ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ১০০ ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী গোলা ও ২০০০ রকেট পাঠানোরও বিল পাস হয়েছে। এসব সামরিক সহায়তার পাশাপাশি ইউক্রেনের জনগণের জন্য কানাডা ২৫ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের বেসামরিক সহায়তাও দেবে। শিগগিরই এসব সামরিক ও বেসামরিক সহায়তা ইউক্রেনে পাঠানো হবে। সূত্র : রেডিও কানাডা