অনলাইন ডেস্ক : বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গত বছর বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ২০২৩ সালে সর্বমোট ২৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে সামরিক খাতে নিজেও সর্বোচ্চ ব্যয় করা দেশটি। ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপের আশপাশের দেশগুলো নিজেদের সুরক্ষা জোরদার করতে নতুন অস্ত্র কিনছে। পশ্চিমা মিত্রদের অনেকেই ইউক্রেনকে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে।

সে অস্ত্র জোগাড় করতে তারা যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারস্থ হচ্ছে। এ কারণেই মার্কিন অস্ত্র ব্যবসায় জোয়ার এসেছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত সোমবার জানায়, আট হাজার ১০০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রিতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার প্রত্যক্ষভাবে ভূমিকা রেখেছে। এই অস্ত্র বিক্রির মাত্রা ২০২২ সালের তুলনায় ৫৬ শতাংশ বেশি।

বাকি অস্ত্র যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিরক্ষা সামগ্রী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর কাছে সরাসরি বিক্রি করেছে।
গত বছর যেসব দেশের কাছে যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র বিক্রি করেছে, পোল্যান্ড তাদের অন্যতম। রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত ইউক্রেনের সঙ্গে পোল্যান্ডের সীমান্ত রয়েছে। এই পরিস্থিতি দেশটিকে নিজেদের সামরিক শক্তি বাড়াতে তৎপর হতে বাধ্য করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পোল্যান্ড বেশ বড় অঙ্কের অস্ত্র কিনেছে। অ্যাপাচি হেলিকপ্টারের জন্য এক হাজার ২০০ কোটি ডলার, অত্যাধুনিক হাইমার্স রকেট ব্যবস্থার জন্য এক হাজার কোটি ডলার, এম১এ১ অ্যাব্রামস ট্যাংকের জন্য ৩৭০ কোটি ডলার, আকাশ ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনতে ৪০০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে পোল্যান্ড। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক তাঁর দেশের সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়ন কার্যক্রম চালাচ্ছেন। নিজেদের বাহিনীকে ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী স্থলসেনা হিসেবে তুলে ধরতে চায় পাশ্চাত্যের দিকে ঝুঁকে পড়া সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মিত্র পোল্যান্ড।

যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে চিনুক হেলিকপ্টার কিনতে জার্মানি ৮৫০ কোটি ডলার খরচ করেছে।

স্ট্রাইকার সামরিক যান কিনতে বুলগেরিয়া যুক্তরাষ্ট্রকে ১৫০ কোটি ডলার দিয়েছে। নরওয়ে বহুমুখী কাজে ব্যবহৃত মার্কিন হেলিকপ্টার নিতে ১০০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে। চেক প্রজাতন্ত্র ৫৬০ কোটি ডলারের এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ও গোলাবারুদ কিনেছে। ইউরোপের বাইরে দক্ষিণ কোরিয়া এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের জন্য ৫০০ কোটি ডলার ও অস্ট্রেলিয়া সি১৩০জে-৩০ সুপার হারকিউলিস বিমানের জন্য ৬৩০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অস্ত্র ব্যবসাবিষয়ক দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের পরই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অস্ত্র বিক্রেতা দেশ রাশিয়া। তবে অনেক ক্রেতা দেশ রাশিয়া থেকে মুখ ঘুরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অস্ত্র কিনতে চাইছে। রাশিয়ার ওপর ইউক্রেন যুদ্ধজনিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এর একটি কারণ। এ জন্য মার্কিন অস্ত্র বিক্রি বেড়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন বলছে, ইউক্রেনকে সমর্থন দেওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি বেড়েছে। এটি মার্কিন অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। বাইডেন প্রশাসনের এমন যুক্তির পরও অবশ্য অনেক মার্কিন আইন প্রণেতা ইউক্রেনকে প্রত্যক্ষ সমর্থন বন্ধ করতে চান। তাঁরা ইউক্রেনকে সহায়তা দিয়ে যাওয়ার চেয়ে নিজ দেশের অভিবাসন নীতির সংস্কারের জন্য চাপ দিচ্ছেন।

সূত্র : বিবিসি