
হাসান আমিন: গত ২রা ডিসেম্বর, শুক্রবার অন্টারিও’র অডিটর জেনারেল বনি লাইসিক এক প্রতিবেদনে বলেন, শহরের বন্যা প্রতিরোধে প্রদেশটি যথেষ্ট কাজ করছে না। এটি এমন একটি সমস্যা যা আগামী বছরগুলোতে আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। ২০২২ সালের অডিটর জেনারেলের প্রতিবেদনে শহরের বন্যা মোকাবেলায় প্রতিশ্রুতি স্পষ্ট করতে এবং সমস্যাটি কার্যকরভাবে মোকাবেলায় পৌরসভা ও বাড়ির মালিকদের পর্যাপ্তভাবে সহায়তা করতে প্রদেশের ব্যর্থতার দিকগুলো চিহ্নিত করেছে।
অডিটর জেনারেল বনি লাইসিক বলেছেন, এটি কেবল নদীর কাছাকাছি বসবাসকারী অন্টারিওবাসীদের তিন শতাংশের জন্য একটি সমস্যা নয়। তিনি আরো বলেন, “শহর, নগর এবং ছোট কমিউনিটিগুলোতে বসবাসকারী সমস্ত অন্টারিবাসী বন্যার ঝুঁকির মধ্যে থাকতে পারে।” তিনি যোগ করেছেন যে, সমস্যার সমাধান না করা হলে এর জন্য মূল্য চোকাতে হবে। লাইসিকের প্রতিবেদনে বিল্ডিং কোড আপডেট করা, শহুরে বন্যার ঝুঁকি ম্যাপিং উন্নত করা এবং জলাভূমির মতো সবুজ ও প্রাকৃতিক স্থানগুলোকে আরও ভালভাবে রক্ষা করার সুপারিশ করা হয়েছে।
লাইসিক বলেছেন, প্রাদেশিক বন্যা ম্যাপিং এ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করতে এবং কমিউনিটিগুলোকে প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য সুযোগ করে দেওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট ফাঁক রয়েছে। ওয়েস্ট ডন ল্যান্ডস কমিটির কো-চেয়ার সিনথিয়া উইলকি বলেছেন, টরন্টোর মতো বৃহৎ স¤প্রদায়গুলোতে নদী সংলঘ্ন নীচু এলাকাগুলোর ঝুঁকি উপলব্ধি করা গুরুত্বপূর্ণ এবং সেটি না করার ঝুঁকি অনেককে হতবাক করবে।
প্রায় এক দশক আগ পর্যন্ত টরন্টোর শহরের বেশিরভাগ অংশ ডন নদী কারণে বন্যার ঝুঁকিতে ছিল, বলেন উইলকি। তবে কেউ কেউ নদীর পশ্চিম তীরে বন্যা সুরক্ষা ল্যান্ডফর্ম তৈরির পক্ষে কথা বলেছে। এটি করতে অর্থ খরচ হয়েছে, কিন্তু এটি রিয়েল এস্টেটে বিলিয়ন ডলার রক্ষা করেছে,” তিনি যোগ করেছেন। উইলকি আরো বলেন, “আপনি যদি আগে থেকে পরিকল্পনা না করেন, তাহলে ভয়াবহ, মর্মান্তিক পরিণতি হতে পারে।
এটি করার ফলে উন্নয়নের সুযোগও তৈরি হতে পারে, তিনি বলেন। ডন নদীর পূর্ব দিকে নদীকে সরাতে এবং গ্রেড বাড়ানোর জন্য যে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে তা আসলে পোর্টল্যান্ডে উন্নয়নের জন্য জমিকে উন্মুক্ত করে দিয়েছে যা আগে প্লাবনভূমি ছিলো, উইলকি বলেছেন।
পরিবেশ, সংরক্ষণ ও পার্ক মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র একটি লিখিত বিবৃতিতে বলেছেন, বন্যা ব্যবস্থাপনার দায?িত্বের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পৌরসভার উপর পড়ে, প্রাদেশিক সরকার তাদের সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত। মন্ত্রণালয় বলেছে যে, এটি জলোচ্ছাস পরিকাঠামোতে ২৫ মিলিয়ন ডলার প্রদানের মাধ্যমে অবদান রেখেছে এবং প্রদেশ জুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মূল্যায়ন পরিচালনা করছে।
প্রিমিয়ার ডগ ফোর্ড এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, নতুন হাউজিং বিলের অধীনে তিনি গ্রিনবেল্টের অংশে প্লাবনভূমিতে নির্মাণ করবেন না। তবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, বন্যা পরিকল্পনা ভালভাবে সম্পন্ন করা নিশ্চিত করতে বড় এবং ছোট পৌরসভাগুলোতে আরও আর্থিক এবং কেন্দ্রীভূত সহায়তা প্রয়োজন।
টরন্টোর ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির পরিবেশগত এবং নগর পরিবর্তনের অধ্যাপক মার্ক উইনফিল্ড বলেছেন, প্রদেশটি এখন বন্যা পরিকল্পনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নিশ্চিত করার জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে, কারণ বিতর্কিত নতুন হাউজিং বিল সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষের হাতে থাকা উপলব্ধ ক্ষমতা এবং সরঞ্জামগুলোকে দুর্বল করে দেয়। তিনি বলেন, তিনি হতাশ হয়েছেন অডিটর বন্যা প্রশমনে সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা হ্রাস করার প্রভাব সম্পর্কে প্রতিবেদনে বেশি কিছু বলেননি। “আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে তাদের কাছে এই চ্যালেঞ্জে সাড়া দেওয়ার জন্য সরঞ্জাম এবং সংস্থান রয়েছে।”
নিরীক্ষায় দেখা গেছে যে, গত ২০ বছরে অন্টারিওর মাঝারি এবং বড় নগর কেন্দ্রগুলোতে ‘সবুজ’ হিসাবে বিবেচিত শহুরে জমির ৯৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। নিরীক্ষায় আরও দেখা গেছে যে, জলাভূমি সংরক্ষণের জন্য কোনও প্রাদেশিক কৌশল বিদ্যমান নেই। বিশেষত, ২০১৮ সালে ফোর্ড সরকার পূর্ববর্তী লক্ষ্যগুলো বাতিল করেছিল, যদিও দক্ষিণ অন্টারিও বছরে গড়ে ১ হাজার ৮২৫ হেক্টর জলাভূমি হারিয়েছে। সূত্র : সিবিসি নিউজ