অনলাইন ডেস্ক : পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হবে আগামীকাল রোববার। তবে নজর সবার পশ্চিমবঙ্গে। এ রাজ্যের নির্বাচনকে এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বনাম মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াই হিসেবে দেখা হচ্ছে। দু’জনের হাইভোল্টেজ প্রচার-প্রচারণায় রাজনীতির যে উত্তাপ ছড়িয়েছে, তা কোনো বিধানসভা নির্বাচনে দেখা যায় না বললেই চলে।

রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস ও কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ভোটের মাঠে ‘বাংলাদেশ প্রসঙ্গ’কে বারবার উচ্চারণ করায় এ দেশের মানুষেরও দৃষ্টি রয়েছে ফলাফলের দিকে। এরই মধ্যে বুথফেরত জরিপে তৃণমূলের জয়ের আভাস মিলেছে। তবে তা মানতে নারাজ বিজেপি। উভয় দলই দাবি করেছে, যে আভাস পাওয়া গেছে, তা ঠিক হবে না। দুই দলই আশাবাদী, তারা দুই শতাধিক আসন পাবে। তবে তা তো হওয়ার নয়। কারণ, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় মোট আসন ২৯৪টি। জয়ের জন্য প্রয়োজন ১৪৮টি আসন। প্রার্থীর মৃত্যু হওয়ায় দুটি আসনে ভোট স্থগিত রয়েছে। আগামীকাল ২৯২ আসনের ফল ঘোষণা করা হবে।

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে এবার বড় ফ্যাক্টরের মধ্যে ছিল দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, তোলাবাজি (চাঁদাবাজি), উন্নয়ন, মতুয়া সম্প্রদায়, বহিরাগত, অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং সংখ্যালঘু। ঘুরেফিরে এগুলোই প্রাধান্য পেয়েছে শীর্ষ নেতাদের প্রচারে। এবার নির্বাচন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী মোদি নিজেই বারবার জনসভা করেছেন। অমিত শাহ দিনের পর দিন পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান করেছেন। লেগেছিলেন সর্বভারতীয় বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা। কেন্দ্রের অন্য নেতারাও এসেছেন। সেই সঙ্গে রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষসহ অন্যরা তো আছেনই। ফলে লড়াই হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ফলাফলেও এর প্রতিফলন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পরই চার রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত একটি অঞ্চলের বুথফেরত জরিপের ফল প্রকাশ করে কয়েকটি গণমাধ্যম ও সংস্থা। বেশিরভাগই আভাস দিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসছে তৃণমূল কংগ্রেস। দুটি সংস্থা বলেছে, বিজেপি ক্ষমতা দখল করতে চলেছে। তবে বুথফেরত সমীক্ষার দাবি উড়িয়ে দিয়েছে দুই শিবিরই। উভয়েই দাবি করেছে, তারাই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করবে।

তৃণমূলের মুখপাত্র তাপস রায় বলেন, ‘বুথফেরত সব জরিপেরই ফল দেখেছি আমরা। এটি পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে, কোনো হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে না। কারণ, আমরাই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আবার ক্ষমতায় ফিরছি। সে ক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হবেন।’

অন্যদিকে, তৃণমূলের মতো রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু দাবি করেছেন, বুথফেরত জরিপের ওপর ভরসা করা উচিত নয়। এত কম নমুনার ভিত্তিতে এসব সমীক্ষা হয়, যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো আভাস দিতে পারে না। সে ক্ষেত্রে ফল পর্যন্ত অপেক্ষা করাই ভালো। বাংলার মানুষ কী রায় দিয়েছেন, তা রোববারই জানা যাবে। বিজেপিই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বাংলায় সরকার গড়বে।

বুথফেরত জরিপের ফল উড়িয়ে দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তার সাফ কথা, ২ মে বিধানসভার আসল ফল সামনে আসবে। কী সেই আসল ফল, তা তিনি স্পষ্ট করে বলেননি। দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘কয়েকটি জরিপে ওদের (তৃণমূল) এগিয়ে রাখা হয়েছে। এমন কিছু সংস্থা আছে, যারা চার মাস আগে যা বলেছিল, এখনও সেটাই বলেছে। আমরা জানি এক্সিট পোল সঠিক নয়, এক্স্যাক্ট পোলটাই ঠিক। ২ মে আসলটা বোঝা যাবে।’
প্রথম থেকে ২০০ আসনের বেশি পাওয়ার দাবি করে এসেছে বিজেপি নেতৃত্ব। জরিপের ফল প্রকাশের পরও আত্মবিশ্বাস দেখালেন দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘আমরা যেটা চেয়েছিলাম, ওটাই হবে। ২০০-এর কাছাকাছি আসন পাব আমরা।’ তবে আগে যা ছিল দুইশর বেশি, জরিপের ফল প্রকাশের পর তা এখন দুইশর কাছাকাছি হয়ে গেছে।

এদিকে গতকাল দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। গণনাকেন্দ্র পাহারা দেওয়া, গুজবে কান না দিয়ে শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রে থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা ২০০-এর বেশি আসন পাব। জয় আমাদেরই হবে।

কলকাতায় ভার্চুয়াল বৈঠকে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘আমরাই জিতব। কিন্তু বিজেপি সকাল বেলা রটাতে পারে, তারা জিতেছে। কখনোই কাউন্টিং সেন্টার ছাড়বেন না। শেষ পর্যন্ত থাকবেন। ভোর ৫টার মধ্যে ভোট গণনাকেন্দ্রে পৌঁছে যাবেন। অন্য কারও কাছ থেকে খাবার খাবেন না।’

জরিপের ফল এবং জয়-পরাজয় নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপির বাগ্‌যুদ্ধ চললেও তাতে শামিল হতে দেখা যায়নি বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোটকে। সবগুলো জরিপেই বলা হয়েছে, তারা এবার সর্বোচ্চ ২৫টি আসন পেতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত আগামীকালের ফলাফল কী হয়, তা দেখার অপেক্ষায় সবাই।