অনলাইন ডেস্ক : সুন্দরী প্রতিযোগিতার মঞ্চে দাঁড়িয়ে মিস গ্র্যান্ড মিয়ানমার হান লে গত সপ্তাহে তাঁর দেশের সেনাবাহিনীর নৃশংসতার বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন। সহিংসতার শিকার মানুষের পাশে দাঁড়াতে আহ্বান জানিয়েছেন। বিশ্বজুড়ে খবরের শিরোনাম হয়েছে তাঁর এই বক্তব্য। সোমবার বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।

থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত মিস গ্র্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ২০২০ অনুষ্ঠানে হান বলেছেন, ‘আজ আমার দেশ মিয়ানমারে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। দয়া করে মিয়ানমারকে সহায়তা করুন। আমাদের এখনই জরুরি আন্তর্জাতিক সহায়তা দরকার।’

মাসখানেক আগে ২২ বছর বয়সী হান তাঁর দেশ মিয়ানমারেই ছিলেন। তিনি দেশটির বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনের সড়কে নেমে সেনাশাসনবিরোধী বিক্ষোভ-প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলেন। পরে তিনি থাইল্যান্ডে পাড়ি জমান মিস গ্র্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ২০২০ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে।

মিয়ানমারে গত ১ ফেব্রুয়ারি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থান হয়। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকার উৎখাতের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। তারা গ্রেপ্তার করে অং সান সু চিসহ তাঁর দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) শীর্ষ নেতাদের। সেনাবাহিনী মিয়ানমারে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করে। তারপর থেকেই মিয়ানমারে টানা বিক্ষোভ-প্রতিবাদ করে আসছেন দেশটির গণতন্ত্রপন্থীরা।

শুরুর দিকে বিক্ষোভ দমাতে নিরাপত্তা বাহিনী লাঠিপেটা, জলকামান বা কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে। পরে তারা সহিংস পন্থা বেছে নেয়। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে তারা রাবার বুলেট ও তাজা গুলি ব্যবহার করতে শুরু করে। ফলে মিয়ানমারের রাজপথে বিক্ষোভকারীদের রক্ত ঝরতে শুরু করে।

মিয়ানমারে সামরিক শাসনবিরোধী প্রায় দুই মাসের বিক্ষোভে সাড়ে পাঁচ শর বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। তার মধ্যে ১৪১ জন নিহত হন গত শনিবার। স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থা দ্য অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি) এ তথ্য জানিয়েছে।

আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৪৩ শিশু নিহত হয়েছে। এ ছাড়া এই সংঘাতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিশু আহত হয়েছে।
এএপিপি জানায়, মিয়ানমারে সেনাশাসনবিরোধী আন্দোলনে গ্রেপ্তার বা আটক ব্যক্তির সংখ্যা আড়াই হাজারের বেশি।

মিস গ্র্যান্ড মিয়ানমার হান ইউনিভার্সিটি অব ইয়াঙ্গুনের মনোবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী। তিনি থাইল্যান্ডে আসার আগেই সিদ্ধান্ত নেন যে তাঁর দেশের ভয়াবহ অবস্থা তুলে ধরার জন্য তিনি এই সুন্দরী প্রতিযোগিতার আয়োজন ও মঞ্চকে ব্যবহার করবেন।

ব্যাংকক থেকে হান বিবিসিকে বলেন, মিয়ানমারে সাংবাদিকদের আটক করা হচ্ছে। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, বাইরে গিয়ে দেশের কথা সবার সামনে তুলে ধরবেন।

হান বলেন, থাইল্যান্ডের উদ্দেশে দেশ ছাড়ার আগে তিনি জানতেন, কী করতে যাচ্ছেন। আর তিনি যা করতে যাচ্ছেন, তাতে যে তাঁর ঝুঁকি আছে, সে কথাও ভালো করেই জানতেন। ফলে তাঁকে দেশের বাইরে থাকতে হতে পারে।

সুন্দরী প্রতিযোগিতায় মিনিট দুয়েকের যে বক্তব্য হান দেন, তা তাঁকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নিশানায় ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁর। এ অবস্থায় তিনি আগামী অন্তত তিন মাস থাইল্যান্ডে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

হান বলেন, ‘আমি আমার পরিবার ও নিজের নিরাপত্তা নিয়ে খুবই চিন্তিত। কারণ, আমি সেনাবাহিনী ও মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে অনেক কথা বলেছি। মিয়ানমারে যা ঘটছে, তা নিয়ে সেখানে বসে কথা বলার সুযোগ যে সীমিত, সে কথা সবাই জানে।’
হান বলেন, ‘আমার বন্ধুরা আমাকে মিয়ানমারে না ফিরতে বলেছেন।’

হানের উদ্বেগ যে অমূলক নয়, তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। গত সপ্তাহেই মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী দেশটির ১৮ জন তারকার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। তাঁরা সবাই সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন।