অনলাইন ডেস্ক : সৌদি আরবের হাসপাতালগুলোতে শতাধিক বাংলাদেশির লাশ দাফনের অপেক্ষায় পড়ে আছে। করোনা, নন-করোনা মিলে রিয়াদের একটি সরকারি হাসপাতালের লাশ ঘরেই ৮১ জন বাংলাদেশির মরদেহ রাখা। তাও অনেকদিন হয়ে গেছে। ওই হাসপাতালে ১০০ লাশ সংরক্ষণের বক্স বা ব্যবস্থা রয়েছে। যার ৮১টিই বাংলাদেশের দখলে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে মরচুয়ারি খালি করা অর্থাৎ লাশগুলো দাফনের প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পাদনে বাংলাদেশ দূতাবাসকে দফায় দফায় তাগিদ দিচ্ছে সৌদি সরকার। রিয়াদে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ লাশ দাফনে সৌদি সরকারের তাগিদের বিষয়টি স্বীকার করে মানবজমিনকে বলেন, করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের দূতাবাসের তরফে দাফনের অনাপত্তিসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া যত দ্রুত সম্ভব সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু করোনা নয়, অন্য জটিলতায় মারা যাওয়া বাংলাদেশিদের দাফনে পরিবারের অনাপত্তি পাওয়ার শর্ত রয়েছে।

ঢাকা থেকে তাদের দাফনের ক্লিয়ারেন্স আসতে হয়। ফলে লাশগুলো দাফনে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। তবে এটি তাড়াতাড়ি করতে রাষ্ট্রদূত সেগুনবাগিচায় চিঠি পাঠিয়েছে এবং তাগিদ অব্যাহত রেখেছেন বলেও জানান।

করোনায় তিনদিনে ৩৫ বাংলাদেশির মৃত্যু: সৌদিতে ৭ই জুন থেকে ৯ই জুন পর্যন্ত ৭২ ঘণ্টায় ৩৫ জন বাংলাদেশি মারা গেছেন বলে কমিউনিটি সূত্রে তথ্য পেয়েছে রিয়াদস্থ বাংলাদেশ মিশন। ৬ই জুন পর্যন্ত দেশটিতে বাংলাদেশি মৃতের সংখ্যা ছিল ২২০-এ। এখন তা আড়াইশ’ ছাড়িয়েছে দাবি করে মিশনে পদস্থ এক কর্মকর্তা বলেন, সৌদি সরকারের তরফে বাংলাদেশি মৃত্যুগুলোর বিষয়ে আনুষ্ঠানিক তথ্য পেতে দেরি হয়। কারণ সৌদি সরকার করোনা রোগীদের ন্যাশনালিটির বিভাজন সংক্রান্ত তথ্য ঢালাওভাবে প্রচার করে না। লাশগুলোর দাফন সংক্রান্ত এনওসির আবশ্যকতায় তারা চিঠি পাঠায়। সেখানে করোনা বা নন-করোনা সব লাশেরই তথ্য থাকে। তবে বাংলাদেশ কমিউনিটি সূত্রে মৃতের তথ্যগুলো তাৎক্ষণিক পাওয়া যায়, যা সরকারি হিসাবের সঙ্গে খুব একটা গরমিল হয় না দাবি করে ওই কর্মকর্তা বলেন, সৌদিতে এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত ১ লাখ ৮ হাজার ৫৭১ জন। এর মধ্য পুরোপরি সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৭১ হাজার ৩৩৯ জন। মারা গেছেন ৭৭৩ জন। মোট ক্লোজ কেসের ডাটা বিশ্লেষণে অর্থাৎ সুস্থ এবং মারা যাওয়ার হার পর্যালোচনায় দেখা গেছে ১ শতাংশ রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বাকি ৯৯ ভাগই সুস্থ। কিন্তু দুর্ভাগ্য, ওই ১ ভাগ অর্থাৎ মারা যাওয়া ৭৮৩ জনের এক তৃতীয়াংশই বাংলাদেশি! দেশটিতে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে জেদ্দা, মক্কা ও মদীনায়। জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের আওতাধীন ওই ৩ শহরে করোনায় প্রাণ কেড়েছে দেড় শতাধিক বাংলাদেশির। আর অঞ্চলওয়ারি হিসাব করে দেখা গেছে সৌদিতে মারা যাওয়া বাংলাদেশিদের প্রায় অর্ধেক বৃহত্তর চট্টগ্রামের বাসিন্দা। আক্রান্তের সংখ্যাও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, সৌদিতে গত ৭২ ঘণ্টায় ১০ হাজারের বেশি করোনা আক্রান্ত হয়েছে। নতুন আক্রান্ত হওয়া ওই রোগীদের এক তৃতীয়াংশ বাংলাদেশি হওয়া অবাস্তব নয়। তবে আশার দিক হচ্ছে গত ৬ই জুন পর্যন্ত আক্রান্ত প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশির বেশিরভাগই সেরে উঠেছেন। উল্লেখ্য, সৌদি আরব বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার। দেশটিতে ২২ লাখের বেশি বাংলাদেশির বাস।