অনলাইন ডেস্ক : ৭০ বছরেরও বেশি সময় পর মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশ সৌদি আরব মদ বিক্রির ওপর দীর্ঘদিনের নিষেধাজ্ঞা নীরবে শিথিল করেছে। গত বছর প্রথমবারের মতো শুধুমাত্র অমুসলিম কূটনীতিকদের কাছে অ্যালকোহল বিক্রির জন্য দিয়ে রাজধানী রিয়াদে একটি মদের দোকান যাত্রা শুরু করে। তবে সম্প্রতি দেশটির অবস্থানরত ধনী অমুসলিম বিদেশি নাগরিকদেরও মদ কেনার অনুমতি দিয়েছে সৌদি কতৃপক্ষ। এতে ওই মদের দোকানের বাইরে দেখা যাচ্ছে গাড়ির লম্বা লাইন।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, রাজধানী রিয়াদের কূটনৈতিক এলাকায় একটি লিকার শপ বা মদের দোকান আছে। এটি বর্তমানে সৌদির একমাত্র সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত মদের দোকান। এই দোকানটি আগে শুধু কূটনীতিকদের জন্য ছিল। কারণ কূটনীতিকরা নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে।
কিন্তু গত মাসে সেখানে অমুসলিম বিদেশিদেরও মদ কেনার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। তবে শর্ত হলো- তাদের কাছে ‘প্রিমিয়াম রেসিডেন্সি’ বা বিশেষ বসবাসের অনুমতি থাকতে হবে এবং মাসিক উপার্জন হতে হবে কমপক্ষে ৫০ হাজার রিয়াল (প্রায় ১৩ হাজার ৩০০ ডলার)।
রিয়াদের সেই দোকান থেকে মদ কিনেছেন এমন একজন বিদেশি নাগরিক অবাক হয়ে এই পরিবর্তনের বর্ণনা দিয়ে এএফপিকে বলেন, ‘আমরা খুবই অবাক হয়েছিলাম এবং প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি যে সৌদিতে মদ বিক্রি শুরু হয়েছে। আমরা সেই দোকানে ঢুকলাম এবং প্রাথমিক চেকিং শেষে মদ কিনতে পেরেছিলাম।’
আরেক বিদেশি নারী একই রকম অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘আমার বন্ধু-বান্ধবরা প্রথমে বিশ্বাসই করতে চায়নি এটি। পরে যখন আমি মদ কিনলাম— তারা এত অবাক হয়েছিল যেন জীবনে প্রথম মদ দেখছে।’
এদিকে বিষয়টির সাথে পরিচিত একটি সূত্র এএফপিকে জানিয়েছে, প্রিমিয়াম ভিসাধারী ১২ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি বিদেশি রিয়াদের ওই দোকান থেকে মদ কিনেছেন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, যদিও রক্ষণশীল এই মুসলিম দেশে মদের নিয়ম বদলানো নিয়ে সরকারি কোনো ঘোষণা আসেনি। তবে রিয়াদের ওই দোকানের সামনে গেলেই দেখা যায় কেনাকাটা বেশ জমজমাট।
কূটনৈতিক পাড়ার ভেতরে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে সাধারণ একটি ভবনে এই দোকান। বাইরে শুধু একটি রহস্যময় সাইনবোর্ড। যেখানে লেখা—‘শুধুমাত্র কূটনীতিকদের জন্য ভ্যাটমুক্ত পণ্য’। এরপরও একের পর এক দামী এসইউভি গাড়ি দেকানের সামনে আসছে। নিরাপত্তারক্ষীরা পরিচয়পত্র দেখে ভেতরে ঢোকার অনুমতি দিচ্ছেন।
দোকান থেকে বেরিয়ে আসা ক্রেতারা জানান, ভেতরে ভিড় লেগে আছে। নতুন ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন এবং হাজার হাজার ডলারের মদ কিনছেন। দোকানে ঢোকার নিয়ম শিথিলের সঙ্গে সঙ্গে নতুন দামও ঠিক করা হয়েছে। কূটনীতিকরা এক দামে কিনছেন, আর প্রিমিয়াম রেসিডেন্সিধারীরা কিনছেন আরও বেশি দামে। দেখা গেছে, সাধারণ মানের এক বোতল সাদা ওয়াইনের দাম পড়ছে প্রায় ৮৫ ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে পাঁচগুণেরও বেশি।
নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, দোকানটি কার মালিকানায় তা স্পষ্ট নয়। তবে এর পরিচালনার ধরণ দেখে মনে হচ্ছে সরকারের হাত আছে। ক্রেতাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরের ওপর ভিত্তি করে প্রতি মাসে মদ কেনার নির্দিষ্ট কোটা বা সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। দোকানে ঢোকার জন্য কূটনীতিকরা যে মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করেন, সেটি তৈরি করেছে দেশটির কর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। সৌদি সরকারের মিডিয়া অফিস এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
প্রসঙ্গত, সৌদি আরবে ১৯৫২ সাল থেকে অ্যালকোহল বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে। তৎকালীন বাদশাহ আবদুল আজিজের এক ছেলে মদ্যপানের পর গুলি চালিয়ে এক ব্রিটিশ কূটনীতিককে হত্যা করার পরপরই ওই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। তবে কয়েক বছর ধরে গুঞ্জন চলছিল যে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ভিশন ২০৩০ অ্যাজেন্ডার অংশ হিসেবে সৌদি আরবে অ্যালকোহল সহজলভ্য করা হবে।
ইতোমধ্যেই রিয়াদ ছাড়াও দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য দাহরান এবং জেদ্দা শহরে নতুন করে আরও দুটি মদের বার চালু করার পরিকল্পনা করছে কতৃপক্ষ। এর মধ্যে একটি দোকান সৌদি রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি আরামকোর বিদেশি ও অমুসলিম কর্মীদের জন্য চালু করা হবে।
সূত্র: এএফপি, নিউইয়র্ক টাইমস
