অনলাইন ডেস্ক : কানাডার রিয়েল এস্টেট বাজার আকস্মিক ও নাটকীয়ভাবে স্থবির হয়ে পড়েছে। গত বছরের এই সময়ের তুলনায় বিক্রি ২৪ শতাংশ কমেছে। দেশে একটি বাড়ির গড় দাম ফেব্রুয়ারিতে সর্বোচ্চ যে মূল্য ছিলো তার থেকে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭ ডলার কমেছে।
এসআইএ ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের চিফ মার্কেট স্ট্র্যাটেজিস্ট কলিন সিসজিনস্কি বলেন, “আমি বিষয়টাকে বেলুনের বাতাস বের করার মতো মনে করি।” ”হঠাৎ করে দরপতন হোক, আপনি এটা অপরিহার্যভাবেই চান না।” ”তবে কাছাকাছি মেয়াদে দাম এমন অবস্থানে নেমে আসা দরকার ছিলো যা একটু বেশি সময় টেকসই হত।”
যে-ই এ মার্কেটে প্রবেশ করার চেষ্টা করছেন, তাদের সামনে স্থবির হওয়ার সম্ভাবনাকে সবসময় একটি সুযোগ হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল। তবে দামে ২০ শতাংশ হ্রাস পেলেও, কানাডায় গড় বাড়ির দাম ২০২১ সালের প্রথম দিকে যেখানে ছিল সেখানে ফিরে এসেছে।
রিয়েল এস্টেট মার্কেটে আকস্মিক এ পতনে যা পরিবর্তিত হয়েছে তা হল সাধারণ কানাডিয়ান পরিবার, যারা তাদের আয়ের বড় একটি অংশ বাড়ি কেনার জন্য ব্যয় করছে, তারা ইদানীং কেমন বোধ করছে।
পরিসংখ্যান কানাডা বলছে, বাড়ির দাম কমে যাওয়ার বিষয়টি আবাসন খাতে আর্থিক সম্পদের সবচেয়ে বড় পতনে সাহায্য করেছে, এমন পরিস্থিতি কানাডা আগে দেখেনি।
বিলিয়ন ডলার সম্পদ হারিয়েছে আবাসন খাত :
বাড়ির দামের পতনের বিষয়টি দেখতে সহজ হতে পারে এবং আপনি যদি বাড়ির মালিক না হোন বা বাড়ি বিক্রির চেষ্টায় না থাকেন তাহলে হয়তো বাড়ির দামের আকস্মিক পতন আপনাকে প্রভাবিত করবে না।
কিন্তু বাস্তবতা হল, কানাডার আবাসন খাতের বেশিরভাগ সম্পদ বাড়ির দামের সাথে সম্পর্কিত। খাতটি নিজেই কানাডিয়ান জিডিপিতে সবচেয়ে বড় অবদানকারী হিসাবে রয়েছে এবং দামের পতন এ খাতের জন্য একটি বড় আঘাত।
স্ট্যাটস্ক্যান বলেছে যে, কানাডিয়ান আবাসন সম্পত্তির মোট মূল্য এপ্রিল, মে এবং জুন মাসে ৯৯০.১ বিলিয়ন ডলার কমেছে। “এই কমে যাওয়াকে অ-আর্থিক সম্পদের মূল্যে ৩৮৯.৮-বিলিয়ন ডলার পতন দ্বারা একত্রিত করা হয়েছে।
বিএমওর সিনিয়র অর্থনীতিবিদ রবার্ট কাভসিক বলেছেন, বাড়ির দাম কমার সাথে অর্থনীতির বাকি অংশের উপরও একটি অঘোষিত প্রভাব রয়েছে, “যেমন নির্মাণ সামগ্রীতে ব্যয় করা, আসবাবপত্রের জন্য ব্যয় করা, এই ধরনের সমস্ত জিনিসপত্রে ব্যয় করা।”
“আমাদের আরও দমনমূলক আবাসন কার্যকলাপ রয়েছে যা প্রকৃত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে এবং চাকরির ক্ষেত্র বৃদ্ধিতে প্রতিবন্ধকতা বয়ে আনবে।”
গত কয়েক দশক ধরে বাড়ির মূল্য আকাশচুম্বী হওয়ায় কানাডার বাড়ির মালিকরা নিজেদের আরও ধনী হিসেবে অনুভব করেছেন। তারা আরও বেশি ধার নিয়েছে এবং আরও ব্যয় করেছে, তাদের ক্রমবর্ধমান বাড়ির মূল্যকে এক ধরণের এটিএম হিসাবে ব্যবহার করেছেন। মূল্য হ্রাস এবং সুদের হার বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়ির মালিকদের ধার নেওয়া এবং ব্যয় করার সম্ভাবনা কমে এসেছে।
অর্থনীতিবিদ রবার্ট কাভসিক বলেছেন, সুদের হার বৃদ্ধি অর্থনীতিকে অন্য উপায়ে ধীর করবে। তিনি সিবিসি নিউজকে বলেছেন, “যদি আপনার মর্টগেজ পেমেন্ট মাসে ৫০০ বা মাসে ১ হাজার ডলার বেড়ে যায় তাহলে তা আপনায় বিবেচনায় থাকা ব্যয়ের খাতগুলোকে তৎক্ষনাৎ বাধাগ্রস্ত করে। অন্যথায় এ অর্থ আপনি অর্থনীতির অন্য কোথাও ব্যয় করতেন।”
মুদ্রাস্ফীতি শেষ হয়নি : এ দিকে, মূল্যস্ফীতি আমাদের ক্রয়ক্ষমতা এবং মজুরি বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছে। ভোক্তারা খরচ কমানোর উপায় খুঁজছেন এবং ছোট সিদ্ধান্তগুলো জনসংখ্যার উপর সামগ্রিকভাবে বড় পার্থক্য তৈরি করেছে।
আগামী সপ্তাহে কানাডার সর্বশেষ মুদ্রাস্ফীতির পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হবে। যা জুন মাসে ৩৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৮.১ শতাংশে পৌঁছেছে। অর্থনীতিবিদরা মুদ্রাস্ফীতি এখনও বাড়ার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। এর ফলে জ্বালানি ও খাদ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না।
সুদের হার বৃদ্ধির পরেও যদি মুদ্রাস্ফীতি অব্যাহত থাকে তাহলে ব্যাংক অব কানাডাসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকে প্রত্যাশিত হারের চেয়ে বেশি হার বাড়াতে হবে এবং প্রত্যাশিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় ধরে উচ্চ হার বজায় রাখতে হবে।
এর অর্থ, স্টক মার্কেট এবং আবাসন মার্কেট উভয়ের জন্য আরও সমস্যা তৈরী করবে। যার ফলস্বরূপ আমরা ইতিমধ্যে যা দেখেছি তার চেয়ে আবাসন সম্পদের আরও বড় ক্ষতি অপেক্ষা করছে। সূত্র : সিবিসি