অনলাইন ডেস্ক : ক্যান্সারের বিরুদ্ধে বহুদিন ধরেই লড়াই করে আসছে মানুষ। তারপরও ক্যান্সার বিশ্বব্যাপী মানুষের মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০২০ সালে প্রায় ১ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

যেসব ক্যান্সারে মানুষ সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে সেগুলো হলো স্তন, ফুসফুস, কোলন এবং মলদ্বার এবং প্রোস্টেট ক্যান্সার। ক্যান্সারে মৃত্যুর প্রায় এক-তৃতীয়াংশের জন্য দায়ী তামাক সেবন, হাই বডি মাস ইনডেক্স, অ্যালকোহল সেবন, কম ফল ও সবজি গ্রহণ এবং শারীরিক পরিশ্রম না করা।

হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস এবং হেপাটাইটিসের মতো ক্যান্সার সৃষ্টিকারী সংক্রমণ, নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে প্রায় শতাংশ ক্যান্সারের জন্য দায়ী। প্রাথমিক অবস্থাতেই শনাক্ত করা গেলে এবং কার্যকর চিকিত্সা করা হলে অনেক ক্যান্সার থেকে নিরাময় সম্ভব।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, খুব সাধারণ একটি ভাইরাস দিয়ে ক্যান্সার চিকিৎসার নতুন এক গবেষণায় বড় ধরনের সাফল্য পাওয়া গেছে। যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরা বলছেন এই ভাইরাস শরীরের ক্ষতিকর কোষকে আক্রমণ করে তাকে ধ্বংস করে দেয়।

গবেষণায় দেখা গেছে এই চিকিৎসায় একজন ক্যান্সার থেকে পুরোপুরি সেরে উঠেছেন এবং অন্যদের টিউমার সঙ্কুচিত বা ছোট হয়েছে। যে ভাইরাসটি ক্যান্সারের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে তার নাম হারপেস সিম্প্লেক্স। তবে ভাইরাসটি শরীরে প্রয়োগ করার আগে তাতে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।

বিজ্ঞানীদের আশা এই চিকিৎসার মাধ্যমে যাদের দেহে ইতোমধ্যেই ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়েছে (অ্যাডভান্সড স্টেজ) অথবা যারা জটিল ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন, রোগ নিরাময়ের মাধ্যমে তাদের জীবন রক্ষা করা সম্ভব।

ব্রিটেনে একজন ক্যান্সার চিকিৎসক এবং সাউথেন্ড ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের কনসালটেন্ট ক্লিনিক্যাল অনকোলজিস্ট ডা. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ভাইরাস যখন শরীরে প্রবেশ করানো হয় তখন তা খুব দ্রুত শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে যে ক্যান্সারের চিকিৎসা করা হবে তার অ্যান্টিজেন দিয়ে ভাইরাসটিতে কিছুটা পরিবর্তন ঘটিয়ে সেটি শরীরে ঢুকিয়ে দেওয়া হলে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতাকে চাঙ্গা করবে।

এ ভাইরাল থেরাপি নিয়ে গবেষণার ফলাফল ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে চিকিৎসা সংক্রান্ত এক সম্মেলনে তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে- নয় জন রোগীর মধ্যে তিনজনকে শুধু আর পি টু ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে, যাদের টিউমার ছোট হয়ে গেছে। ত্রিশ জনের মধ্যে সাতজনকে ইনজেকশনের পাশাপাশি অন্যান্য চিকিৎসাও দেওয়া হয়েছে। তাদের অবস্থারও উন্নতি হয়েছে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছিল খুব কম।

গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া অধ্যাপক কেভিন হ্যারিংটনন বলছেন, এরকম ভালো ফল পাওয়া অব্যাহত থাকলে আরও বেশি সংখ্যক রোগীকে এই ভাইরাল থেরাপি দেওয়া হবে।