অনলাইন ডেস্ক : অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর বিমান হামলায় ৭ ত্রাণকর্মী নিহত হয়েছেন। সোমবার এ হামলায় নিহতদের সবাই বিভিন্ন দেশের নাগরিক। গাজায় ক্ষুধার্ত মানুষের মধ্যে ত্রাণ সরবরাহ করতে যাওয়াদের ওপর এমন নির্মম হামলায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় বইছে। নিহতদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, পোল্যান্ড ও ফিলিস্তিনের নাগরিক ছিলেন। তারা ওয়াশিংটনভিত্তিক ত্রাণ সহায়তাকারী অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের কর্মী ছিলেন।

মঙ্গলবার সিএনএন এসব তথ্য জানায়। ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন জানায়, তাদের কর্মীরা সংঘাতহীন এলাকায় দুটি গাড়িতে করে ঘুরছিলেন। গাড়িতে ত্রাণকর্মী হিসেবে লোগোও লাগানো ছিল। গাজার দায়ের আল-বালাহ এলাকায় ১০০ টনের বেশি খাদ্য সরবরাহ করে তারা ফিরছিলেন। সার্বিক বিষয় ইসরায়েল পর্যবেক্ষণও করেছে। তার পরও তাদের কর্মীদের ওপর বিমান হামলা হয়। সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এরিন গোরে বলেন, ইসরায়েলের হামলায় এত সুন্দর জীবনগুলো শেষ হয়ে গেল! তারা মানুষকে খাবার দিতে পছন্দ করতেন; সব কিছুর ঊর্ধ্বে রেখেছিলেন মানবতাকে। মানুষের জন্য জীবন দেওয়ার মাধ্যমে তারা যে প্রভাব রেখে গেছেন, তা অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

ত্রাণ সংস্থাটি বিশ্বের বিপর্যয়ে পড়া এলাকায় খাবার সরবরাহ করে। গাজায় দুর্ভিক্ষের মুখে থাকা লাখ লাখ মানুষকে ত্রাণ দেওয়া অল্প সংখ্যক সংস্থার একটি এটি। সামাজিক মাধ্যম এক্সে সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা আন্দ্রেস বলেন, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর বিমান হামলায় তারা কয়েকজন ভাই ও বোনকে হারিয়েছেন। ইসরায়েলের সরকারের উচিত নির্বিচারে হত্যা বন্ধ করা; মানবিক সহায়তা সীমিত করার প্রচেষ্টা থামানো। তাদের অবশ্যই বেসামরিক মানুষ ও ত্রাণকর্মী হত্যা বন্ধ করতে হবে; খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। যারা মারা গেছেন, সেই স্বর্গের দূতেরাই ইউক্রেন, গাজা, তুরস্ক, মরক্কো, বাহামাস, ইন্দোনেশিয়ায় দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।

নিহতদের মধ্যে জোমি ফ্রাঙ্ককমকে অস্ট্রেলীয় বলে চিহ্নিত করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী আন্থনি আলবানিজ। তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়া এ হত্যার তীব্র নিন্দা জানায় এবং জবাবদিহি প্রত্যাশা করে। এই জোমিই অস্ট্রেলিয়ায় দাবানল চলাকালে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেছিলেন। এ ধরনের হত্যাকাণ্ড সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।

নিহত পোলিশ কর্মীর নাম দামিয়ান সোবোল। এ নিয়ে পোল্যান্ড ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে ব্যাখ্যা চেয়েছে। গাড়িটির চালক ছিলেন ফিলিস্তিনের সাইফ ইসসাম আবু-তাহা।

যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র আদ্রিয়ানি ওয়াটসন এক্সে বলেন, এ হত্যার খবরে তিনি মর্মাহত ও গভীরভাবে ব্যথিত। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়্যাং ওয়েনবিন বলেন, ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলার খবরে বেইজিং মর্মাহত। অন্য ত্রাণ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও এ নিয়ে নিন্দা ও শোক জানিয়েছে।

দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন জানায়, ত্রাণকর্মী হত্যার ঘটনায় কড়া বার্তা দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। তিনি এ ঘটনার ‘পূর্ণ ও স্বচ্ছ ব্যাখ্যা’ চেয়েছেন। সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্ট নিকোস খ্রিস্টদৌলিদেস বলেন, অবিলম্বে এ হত্যার তদন্ত হওয়া উচিত। সেই সঙ্গে আমাদের উচিত গাজায় ত্রাণ সরবরাহ দ্বিগুণ করা। এ প্রেক্ষপটে ইউরোপীয় কমিশন ইসরায়েলের প্রতি আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছে। হামলার নিন্দা জানিয়েছে স্পেনও।

তবে হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে ইসরায়েল। আর হামাস হামলার নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘকে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।

এদিকে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্মসংস্থান সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুসারে, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় গত ছয় মাসে ১৭৪ জন মানবাধিকারকর্মী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৭১ জনই ইউএনআরডব্লিউএ কর্মী। সংস্থাটির ইতিহাসে একে সবচেয়ে বড় প্রাণহানির ঘটনা বলে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘ।